আড়াই হাজারেরও বেশি কিমি রেলপথ অনিরাপদ
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশজুড়ে আড়াই হাজারেরও বেশি কিলোমিটার রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ। কোন নিরাপত্তা নেই। আবার রেলের নেই পর্যাপ্ত পুলিশও। একটি ট্রেনে এক হাজার যাত্রীর নিরাপত্তায় রয়েছে মাত্র ৩ থেকে ৫ জন পুলিশ। এছাড়া গভীর রাতে নির্জন রেলপথে ট্রেন চলাচলের সময় প্রায়ই নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অপরাধীরা ট্রেনযাত্রীর টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে পরে খুন করে হত্যার আলামত নষ্ট করার জন্য লাশ রেললাইনের উপরে ফেলে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে।
ট্রেনে কাটা পড়ার কারণে ময়নাতদন্তে অনেক আলামত প্রমাণ করা সম্ভব হয় না। অপরদিকে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীচক্র চলন্ত ট্রেনকে নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়ে যাত্রীদের ব্যাগ ও টাকা-পয়সা নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতে ট্রেনে নিরাপত্তার অভাবে ট্রেন চলাচলের সময় প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। ট্রেনে কাটা পড়া, ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু, ট্রেনে যাত্রীর টাকা ও ব্যাগ লুট করে ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। রেলপথে হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা নিত্য দিনের। কানে হেডফোন লাগিয়ে কথা বলতে বলতে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু। এভাবে রেললাইনে ঘটছে নানা অঘটন।
রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সারাদেশে ২৮শর বেশি কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। আর সাড়ে ৪শর বেশি রেলস্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫টি রেলস্টেশন সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে। অন্যগুলোতে এখনও সিসি টিভি নেই। এসব রেলপথে আন্তঃনগর, মেইল ট্রেন, ডেমু ট্রেন ও লোকাল একাধিক ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও ২টি মৈত্রী ট্রেন রয়েছে। একটি ট্রেনে ১০ থেকে ১৫টি পর্যন্ত বগি লাগানো হয়। এসব ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা পর্যাপ্ত নয়।
সূত্র মতে, রেলপথ ও চলন্ত ট্রেনের নিরাপত্তায় সারাদেশে পুলিশ আছে প্রায় আড়াই হাজার। এর মধ্যে অফিস ডিউটিসহ অনেকেই নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। যার কারণে নিরাপত্তা দেয়ার জনবল নেই। পুলিশের পক্ষ থেকে রেলওয়ের নিরাপত্তার জন্য কমপক্ষে ১০ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য দরকার বলে জানান। কম জনবলের কারণে অনেক ট্রেনে নিরাপত্তা দেয়াই সম্ভব হয় না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ের নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে। রেললাইনের দুই পাশে বাজার, বস্তি, অবৈধ স্থাপনা এখনও রয়েছে। এর পেছনে রেলওয়ের অসাধু কর্মচারী নেতা ও এক শ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। পথে পথে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। রেললাইনের দুই পাশে নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই। আলো, প্রয়োজনীয় সিসি টিভিসহ নানা ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে।
আবার অনেক অনুমোদিত লেবেল ক্রসিংয়ে গার্ড নেই। আছে ৬০ থেকে ৭০টি লেবেল ক্রসিংয়ে। অরক্ষিত ওইসব জায়গায় গেটম্যান সময়মতো থাকে না। অবহেলায় পড়ে থাকে গেট। আবার অনেকেই তাড়াহুড়ো করে গেট পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। রেললাইনের ওপর দিয়ে অনেক অনুমোদনহীন নতুন রাস্তা হয়েছে। সেখান দিয়ে জনগণ ও যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। ওইসব ক্রসিংগুলো বিপজ্জনক।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, রেললাইনের দুই পাশে ঝুঁকিপূর্ণ বা দুর্ঘটনাপ্রবণ রেললাইনের দুই পাশে কাঁটাতারের বেড়া, রেললাইনের দুই পাশে জনবসতি অঞ্চলে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করা ও সমস্ত রেলস্টেশন সিসিটিভির আওতায় আনার উদ্যোগ নিলে নিরাপত্তা ঝুঁকি কমবে।
তবে রেল সচিব ফিরোজ সালাহউদ্দীন বলেন, সারাদেশের রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংগুলো আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর সিগনাল ব্যবস্থা ঠিক করা, লেভেল ক্রসিং মেরামত করা ও গেটম্যান নিয়োগ সম্পন্ন করা। আশা করা যাচ্ছে চলতি মাসের মধ্যে লেভেল ক্রসিংগুলোতে লোক নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া সারাদেশের রেলপথের নিরাপত্তার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) সদস্য বৃদ্ধির করা হচ্ছে।