শাহজালালে হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল
নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই মধ্যে টার্মিনালের নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ইনশিয়ন কোম্পানি এবং সিঙ্গাপুরের সিপিজে যৌথভাবে গত এক বছর ধরে এ প্রকল্পের সমীক্ষা ও নকশা করেছে।
প্রকল্পটির চূড়ান্ত মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সংশোধনীর জন্য জাপানের পরামর্শক কোম্পানি নিপ্পনকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিপ্পন চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিলে এ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যাদেশ এবং নতুন বছরের জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা আছে বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বছরে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীর সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রায় ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় তৃতীয় টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা ও সময়সীমা ধরা হয়েছে সাড়ে তিন বছর। জাইকার আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে ১২টি। প্রতি ৪টি বোর্ডিং ব্রিজের জন্য একটি লিফট থাকবে। কনভয় বেল্ট থাকবে ১২টি। চেকইন কাউন্টার হবে ২০টি। প্রতিটি কাউন্টারে সিকিউরিটি স্ক্যানার থাকবে। প্রতি ঘণ্টায় ২ হাজার যাত্রীর লাগেজ স্ক্যান করার সক্ষমতা থাকবে প্রত্যেক কাউন্টারে।
এ ছাড়া ১ হাজার ২০০ গাড়ির পার্কিং সুবিধা থাকবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, শাহজালাল বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের এই থার্ড টার্মিনালের নির্মাণশৈলী হবে অত্যাধুনিক। এটি নির্মিত হলে দেশের এভিয়েশন সেক্টর নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জাইকার একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করেছে। তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজকে তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়েছে।
এ প্রকল্প নিয়ে জাইকার প্রতিনিধিরা বহিঃসম্পদ বিভাগ ও সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন। জাইকা নিশ্চিত করেছে, প্রকল্পে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব খুব দ্রুত জাপান সরকারের অনুমোদন পাবে। সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জের দক্ষিণ দিকের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। ওই এলাকায় রয়েছে ফ্লাইং ক্লাব, কয়েকটি দেশি-বিদেশি হেলিকপ্টার সার্ভিসের হ্যাঙ্গার ও আর্মি এভিয়েশনের ইউনিট।
এসব প্রতিষ্ঠান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উত্তর পাশে স্থানান্তর করা হবে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত এসব স্থাপনা সরানোর কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বছরে ৬৫ লাখের মতো যাত্রীসেবা দেওয়া যায়।
যে হারে যাত্রী বাড়ছে তাতে চলতি বছর শেষে কম করে হলেও পাঁচ লাখ যাত্রী বাড়বে। ২০২০ সালে তা ৮০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এত যাত্রী সামাল দেওয়া বর্তমান অবকাঠামোয় সম্ভব নয়। যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় অনেক এয়ারলাইন্স ফ্লাইট সিডিউল চাচ্ছে। জানা যায়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আগের মেয়াদে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে সিঙ্গাপুরের সিপিজে, দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনসিন ও বাংলাদেশের শীর্ষ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডিডিসি যৌথভাবে থার্ড টার্মিনালের সমীক্ষা, নকশা ও আকৃতি তৈরির কাজ করে। এরই মধ্যে সমীক্ষা প্রতিবেদন ও নকশা প্রণয়ন হয়েছে। এখন চূড়ান্ত মূল্যায়ন ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করবে জাপানের নিপ্পন কোম্পানি।
আগামী তিন মাসের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত অনুমোদনের কাজ শেষ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পরই দরপত্র আহ্বান করা হবে। প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শুরু হওয়ার আগেই বিমানবন্দরের উত্তর পাশে নির্মাণ করা হবে জেনারেল এভিয়েশন। এটি সিভিল এভিয়েশন তৈরি করে দেবে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে। তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হলে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়া হবে ১ নম্বর টার্মিনালে। ভিভিআইপি সরানো হবে দক্ষিণ পাশে পদ্মা ডিপোর কাছাকাছি স্থানে। বর্তমান আমদানি-রপ্তানি কার্গো সরানো হবে উত্তর দিকে।
শতভাগ অটোমেশন সিস্টেম চালু করা হবে এ দুটো কার্গোতে। জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক বিমানবন্দরের মতোই সব রকম অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা থাকবে তৃতীয় টার্মিনালে। পর্যাপ্ত বোর্ডিং ব্রিজ, লিফট, চেকইন কাউন্টার, কনভয় বেল্ট, ডিজিটালাইজ লাগেজ কেরিয়ার, পর্যাপ্ত দোকান, রেস্তোরাঁ, ইমিগ্রেশন পয়েন্ট, কার পার্কিংসহ যাত্রী ছাউনি থাকবে। যোগাযোগের জন্য থাকবে আন্ডারপাস, ওভারপাস ও ফ্লাইওভার। টার্মিনাল থেকে বের হয়ে একাধিক লেনের রাস্তা যাবে মূল সড়কের গোলচক্করে।
গাজীপুর ও উত্তরা হয়ে আসা যাত্রীরা প্রবেশ করবেন বলাকার সামনে থাকা একটি ইউলুপ দিয়ে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন্স অব ট্রাভেলস এজেন্টসের (আইএটিএ) মতে, বিশ্বে যাত্রী বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। বিদেশগামী শ্রমিকের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানের কারণেই যাত্রী বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এশিয়ার উদীয়মান বাঘ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়ায় যাত্রী বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করা যাবে সর্বোচ্চ ১০-১৫ বছর। এর মধ্যেই নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করতে হবে।
এতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে। জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে কোনো মূল্যে আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শুরু করা হবে। এটি বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত।বিডি-প্রতিদিন