বৃহস্পতিবার, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং ২০শে মাঘ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

জঙ্গিদের নতুন টার্গেট চট্টগ্রাম!

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ৩০, ২০১৭

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীতে একের পর এক অভিযানের মুখে তত্পরতা খানিকটা গুটিয়ে ফেলেও বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে টার্গেট করে এবার সংগঠিত হচ্ছে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতারা। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে এই মুহূর্তে চট্টগ্রামই তাদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ। গ্রেফতারের পর এমন তথ্যই পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে জানিয়েছেন অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি নেতা রাজীব গান্ধী। এই মুহূর্তে নব্য জেএমবির হাল ধরেছেন গ্রেফতার এড়িয়ে পালিয়ে থাকা মূসা। আর তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন কাশেম। দু’জনেই উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা। বর্তমানে তারা দু’জনেই চট্টগ্রাম এলাকায় অবস্থান করছেন বলে গোয়েন্দাদের খবর।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেছেন, ‘জঙ্গিদের কাজটা হয় মূলত আদর্শিক ভিত্তিতে। তাদের কোনো একজন গ্রেফতার হলেই কার্যক্রম থেমে থাকে না। ওই জায়গায় নতুন একজন চলে আসেন। ফলে তাদের নির্মূল করতে হলে গোড়ায় যেতে হবে। যেখান থেকে রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু সেখানেই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। উেস যেতে না পারলে শুধু অভিযান চালিয়ে সাময়িক জন্য হয়ত তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে কিন্তু স্থায়ী সমাধান হবে না। তাই একইসঙ্গে দুইদিকেই মনোযোগ দিতে হবে।’

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘জঙ্গিরা সবসময় এমন কিছু করতে চায় যাতে সবাই তাদের শক্তি জানতে পারে। রাজধানীতে আমাদের একের পর এক অভিযানে তাদের অনেক নেতা নিহত এবং কিছু নেতা ও সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। ফলে রাজধানী থেকে অধিকাংশ আস্তানাই গুটিয়ে নিয়েছে জঙ্গিরা। এর অর্থ এই নয় যে, তারা বসে আছে। তাদের কার্যক্রমও চলছে, পাশাপাশি আমাদের তত্পরতাও আছে। খুব সহসাই তারা কিছু করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। তারপরও কেউ আত্মঘাতী হয়ে হামলা চালাতে চাইলে তাকে নিবৃত্ত করা সত্যিই খুবই কঠিন। দুঃখজনক হল এতকিছুর পরও আমাদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী অনেক শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। মেধাবীদের রিক্রুট প্রক্রিয়াও থেমে নেই। সম্প্রতি কিছু উচ্চশিক্ষিত ছেলে এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটির শিক্ষার্থীও আছে। আমরা তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’

অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী রাজীব গান্ধী গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক বিষয়েই তথ্য দিয়েছে। আমাদের কাছে সে স্বীকার করেছে, তাদের পরবর্তী টার্গেট চট্টগ্রাম নগরী। এই মুহূর্তে কারা এই হামলার টার্গেট নিয়ে কাজ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে সে শুধু জানিয়েছে, ‘আধ্যাত্মিক নেতা কাশেম সাহেব বিষয়টা দেখভাল করছেন।’ এরপর থেকে গোয়েন্দারা কাশেমের খোঁজে মাঠে নেমেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, উত্তরাঞ্চলের এই নেতার বর্তমান অবস্থান চট্টগ্রামের আশেপাশে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে গোয়েন্দা তত্পরতা বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে কোনো একটি হামলার আয়োজন করা অতটা সহজ নয়। আমরা সার্বিকভাবে বিষয়টি মনিটরিং করায় খুব সহসাই তারা কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না।’

রাজীব গান্ধীকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারীদের প্রায় সবাই গ্রেফতার হয়েছেন। তবে এখনও দু’তিনজনকে গ্রেফতার করা যায়নি। এরা প্রত্যেকেই ভয়ঙ্কর। যে কোনো কিছু করার ক্ষমতা এদের সবারই আছে। তবে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার এড়িয়ে বাইরে থাকা শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর আমরা রাখছি।’

পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, তাদের যে টিম জঙ্গিদের নিয়ে কাজ করছে তারা এমনও তথ্য পেয়েছে যে, জঙ্গিদের অনেক কার্যক্রম রাজধানী থেকে গুটিয়ে গ্রামাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শহরের উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীর বাইরে গ্রামের সাধারণ যুবকদের আগ্রহী করতে কাজ চলছে। ছড়িয়ে পড়ছে তাদের কার্যক্রম। তারপরও জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর নব্য জেএমবি এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। সংগঠনের শক্তি কমে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মৌলবাদীদের নিয়ন্ত্রণাধীন বেসরকারি সংস্থার প্রাথমিক লক্ষ্য জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য সংস্থার প্লাটফর্মকে ব্যবহার করা। পরবর্তীতে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে অথনৈতিক স্বার্থের সম্মিলন ঘটানো। সূত্র: ইত্তেফাক