g জাতীয়করনের অপেক্ষার শেষ মৃত্যুতে | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ৫ই নভেম্বর, ২০১৭ ইং ২১শে কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

জাতীয়করনের অপেক্ষার শেষ মৃত্যুতে

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ২২, ২০১৭

---

আমিরজাদা চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : প্রথমে মামলা এরপর কলেজের চাকুরী থেকে বহিস্কার। কলেজের জাতীয়করনের লড়াইয়ে তার ওপর নেমে আসে একেএকে বিপদ। আর এতেই বিপর্যস্ত ছিলেন মো: গিয়াস উদ্দিন। শেষ পর্যন্ত জীবনই সাঙ্গ হয়ে গেলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইসলামপুর কাজী শফিকুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের এই সহকারী অধ্যাপকের। কলেজ জাতীয়করনের অপেক্ষায় থাকা এই শিক্ষক হ্নদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৪ ঠা জানুয়ারী দিবাগত রাতে ইন্তেকাল করেন। গিয়াসের মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। পরিবারের সদস্য ও তার সহকর্মীরা বলছেন খুবই চাপের মধ্যে ছিলেন গিয়াস উদ্দিন। মৃত্যুর ক’দিন আগেও কলেজ জাতীয়করনের দাবীতে হওয়া মানববন্ধনের কাতারে ছিলেন তিনি। একটি অনলাইন টিভিতে প্রচারিত এই সংবাদের ভিডিও ক্লিপটি সংরক্ষিত রয়েছে তার মোবাইলে। গিয়াসের বাসায় যাওয়া তার সহকর্মীদের সেটি দেখিয়ে পিতাকে খোজে ফিরে গিয়াসের শিশু সন্তান। কান্নাকাটি করে পিতার জন্যে। গিয়াসের অসময়ে চলে যাওয়া তার পরিবারকেও করেছে বিপর্যস্ত। সাড়ে ৩ বছর বয়সী একটি পুত্রসন্তান আর ২ কন্যা রেখে গেছেন গিয়াস উদ্দিন। তার বড় ভাই মো: জামাল উদ্দিন বলেন- অহেতুক মামলা ও বহিস্কার করায় সে খুব অশান্তিতেই ছিলো। কারন সে কোন জুট ঝামেলার মধ্যে ছিলোনা। সবসময় সিনসিয়ার ছিলো। ন্যায় কথা বলতো। এরমধ্যে হঠাৎ করে মামলা দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে। আমি তখন সিলেট ছিলাম, আমাকে ফোন করে জানাইলো ভাই আমি ঘরে ঘুমাইয়া রইলাম আমারে মামলা দিয়ে থুইয়া রাখছে। তার মৃত্যুতে আমিও মানসিকভাবে বিপর্যন্ত। বিষয়টি আমি আর বাড়াতে চাইনা। প্রকৃতির নিয়মে মারা গেছে সেটিই মেনে নিতে চাই। কপালে যা ছিলো তাই হয়েছে।
সরকারী কলেজ নেই এমন উপজেলায় একটি করে কলেজ জাতীয়করনের সিদ্ধান্ত নিলে আশান্বিত হয়ে উঠেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইসলামপুরের কাজী শফিকুল ইসলাম কলেজের শিক্ষকরা। অবকাঠামোগত সুবিধেসহ জাতীয়করনের জন্যে প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তুলেন উল্টো সুর। জাতীয়করন হলে কলেজের পরিবেশ নষ্ট হবে এই অজুহাতে জাতীয়করন ঠেকানোর চেষ্টায় তৎপর হন। কর্তৃপক্ষের এই মনোভব হতাশ করে শিক্ষকদের। এনিয়ে আন্দোলনের জন্যে নিরবে সংগঠিত হতে শুরু করেন তারা। যাদের অন্যতম ছিলেন গিয়াস উদ্দিন। তার সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন আরো ক’জন। অভিযোগ জাতীয়করন ঠেকাতে তাদের শায়েস্তা করার কৌশল নেয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালে বিজয়নগর থানার একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ফাসিয়ে দেয়া হয় কলেজের ৪ শিক্ষককে। ওই বছরের ১৬ ই নভেম্বর বিজয়নগর থানার এসআই মো: জসীম উদ্দিন বাদী হয়ে মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করেন। এই মামলায় ১৪ থেকে ১৭ ক্রমিকে আসামী করা হয় কাজী শফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন (৩২),প্রানী বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক কামাল উদ্দিন আহমেদ (৪০),ইসলামী ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক মো: শামসুদ্দিন মৃধা(৩৮) ও দর্শন বিভাগের প্রভাষক মো: জাহাঙ্গীর আলম(৪৮) কে। এরমধ্যে প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম জেল খাটেন। গত বছরের ৩০ শে জুন বিজয়নগর থানা পুলিশ ৪ শিক্ষককে অভিযুক্ত করেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগ রয়েছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে থানার ওসি ৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার এই ব্যবস্থা করেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয় ঐদিন (১৬.১১.২০১৫ইং) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে পশ্চিম মেরাশানী গ্রামের আলী নেওয়াজ ওরফে ডা: আলী নেওয়াজ এর বাড়িতে জামায়াত ও বিএনপি’র কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী সরকার বিরোধী ধ্বংসাত্বক ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ করার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকে বসে। গোপনে এ সংবাদ পায় পুলিশ। তাৎক্ষনিক ভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে এসআই মো: জসিম উদ্দিন ও সঙ্গীয় ফোর্স আলী নেওয়াজের বসত বাড়িতে উপস্থিত হন। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখানে বৈঠকরত জামায়াত-বিএনপি’র নেতাকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় কয়েকজন আসামী মো: নাছির উদ্দিন মেম্বার (৪৫),মো: ছিদ্দিকুর রহমান(৪৯),সিরাজুল ইসলাম শিশু(৫৩),মো: কাদির খন্দকার (৫৩),মো: মঈন উদ্দিন ভূইয়া(৬৫),মো: আলমগীর ভূইয়া(৪৫),মো: আক্তার হোসেন(২৮),আবু তাহের চৌধুরী(৪৫),মবুল্লা(৫০),মো: শাহআলম(৩৩),খাইরুল বাশার(৪৩)কে গ্রেফতার করা হয়। অন্য আসামীরা পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া আসামীদের নাম তারা গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন।
ওদিকে ৪ শিক্ষক যৌথভাবে পুলিশ সুপারের কাছে মামলা দায়েরের পরদিন একটি আবেদন করেন। যাতে তারা নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী লোক বলে উল্লেখ করেন এবং তারা সরকার বিরোধী কোন কার্যকলাপে লিপ্ত নন বলে জানান। বলেন কোন রাজনৈতিক দলের অনুসারীও নন তারা। শিক্ষকরা বলেন এই মামলার বাকী ২৮ আসামীর কাউকেই তারা চিনেননা। আর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা দূরে থাক। মামলায় ঘটনার যে সময় দেখানো হয়েছে ঐসময় কলেজ শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন ও কামাল উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বাসায়,শামসুদ্দিন মৃধা সরাইলে তার নিজের বাড়িতে এবং জাহাঙ্গীর আলম বিজয়নগরের পাইকপাড়া গ্রামে নিজের বাড়িতে ছিলেন। তারা আরো জানান কলেজ শেষে তারা বরাবরই যার যার বাড়িতে ফিরে যান। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাদের কারোরই কোন যোগাযোগ নেই। নেই উঠাবসা। এরপরই ইনডেক্স জালিয়াতির অভিযোগ এনে সাময়িক বহিস্কার করা হয় সহকারী অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনকে।

২০১৬ সালের ১২ ই মার্চ কলেজ অধ্যক্ষের দেয়া বহিস্কারাদেশে জালিয়াতি করে ২০০৪ সালে নতুন ইনডেক্স নাম্বার নেয়ার অভিযোগ আনা হয় গিয়াসের বিরুদ্ধে। ১২ বছর আগের ঘটনায় গিয়াসের বহিস্কারাদেশ সঙ্গতকারনে প্রশ্নের সৃষ্টি করে। প্রভাষক কামাল উদ্দিন আহমেদকে সাময়িক বহিস্কার করা হয় একই বছরের ২৪ শে মার্চ। চাকুরীর শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ যেমন শিক্ষকদের কাছ থেকে চাদা উত্তেলন ও স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। কলেজের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের অভিযোগে বহিস্কার করা হয় ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামসুদ্দিন মৃধাকে। গিয়াস উদ্দিন মারা যাওয়ার পর তার এবং বাকী ৩ শিক্ষকের বহিস্কারাদেশ উঠিয়ে নেয়া হয়। ১০ মাস পর এই বহিস্কারাদেশ উঠিয়ে নেয়া হলো। কাজী শফিকুল ইসলাম কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। সাড়ে ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি টাকা বছরে আয় রয়েছে কলেজটির। সুত্র জানিয়েছে বানিজ্যিক বিষয়-আশয় ছাড়াও কলেজের কর্তৃত্ব হাতছাড়া হওয়ার কারনে কর্তৃপক্ষ জাতীয়করনের ঘোর বিরোধী। কলেজ জাতীয়করন যাতে না হয় সেজন্যে উচ্চ আদালতে একটি রীটও করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় জাতীয়করন না করার দাবীতে দেয়া হয়েছে আবেদন।

 

 

এ জাতীয় আরও খবর