বুধবার, ৪ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ ইং ২১শে পৌষ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

২১ পথশিশুকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান সারলেন বিত্তবান দম্পতি!

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ৩, ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘটনাটি বিত্তবান কিংবা হতদরিদ্র, সবার জন্যই বিস্ময়কর! বিয়েবাড়িতে কিংবা কোনো ভোজ আয়োজনে আশেপাশে ভিক্ষুক অথবা গরিব ছেলেমেয়ে দেখলেই যেখানে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এদেরকে তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়, সেখানে বাংলাদেশেরই এক নবদম্পতি সৃষ্টি করলেন মানবিকতার এক অনবদ্য নজির।

প্রবাসী বাংলাদেশি যুবক মো. শাকিল হোসেন নতুন বছরের প্রথম দিন তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করে আনলেন রাজধানীর ২১ পথশিশুকে। শুধু খাওয়ালেন তা নয়; গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে গাড়ি দিয়ে নিয়ে এলেন বিয়ের আসরে। রীতিমত পেশাদার বিউটিশিয়ান দিয়ে এদের সাজানো হয়।

বিস্ময়ের শেষ এখানেই না। বিয়ের আসরে এই পথ শিশুরাই ছিলেন মুখ্য অতিথি! দারুণ শিক্ষণীয় এই ঘটনার পেছনে অনুঘটকের কাজ করেছে ব্যতিক্রমধর্মী ফেসবুক পেইজ ‘এক টাকায় আহার’।

নতুন বউকে  নিয়ে পথশিশুদের নিয়ে একাসাথে ভালো খানাপিনা করবেন, এমন ইচ্ছা জানিয়ে ‘এক  টাকার আহার’ পেইজে বার্তা পাঠিয়েছিলেন জামাই শাকিল হোসেন। ‘এক টাকার আহার’ পেইজের এডমিনদের আর পায় কে? শুরু হয়ে গেল কাজ। পথশিশু খোঁজা শুরু হয়ে গেল।

পেইজের পোস্টে বলা হয়েছে, ‘এরপর  শুরু হয় আমাদের যুদ্ধ। কম কষ্ট হয়নি এতটুক আসতে। ছেলে ধরার গুজবে মিরপুরের একটিও শিশুও আসেনি আমাদের সাথে। শেষে এয়ারপোর্টের বাচ্চাদের এনে গোসল করিয়েছি, সাজিয়েছি রাজপুত্র রাজকন্যা হিসেবে। গত সপ্তাহে কেনা হয় তাঁদের জন্য নতুন কাপড়, দেয়া হয় নতুন জুতা। প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাই তাঁদের ইচ্ছা মেটাতে।’

আরও লেখা হয়েছে, ‘পাড়ার বিয়ের অনুষ্ঠানের কৌতূহল মেটাতে গিয়ে কতদিন লাঠির তাড়া খেয়েছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে খালি হাতে ফিরেছে বিয়ের বাসী খাবার না পেয়ে! আজ তাঁরাই ছিল বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে, তাঁদের টেবিলেই আহার করেছেন নবদম্পতি, সবাই জেনেছে তাঁদের সম্পর্কে। আশা করি আপনারাও একিভাবে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন, যদি সাহসে না কুলায় আমাদের জানাতে পারেন, আমরা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো।’

‘এক টাকায় আহার’ সংশ্লিষ্টরা ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, ‘আমরা ব্যয়বহুল কাজটি করেছি শুধুমাত্র সমাজে শেখাতে, কিভাবে ভিন্নভাবে সামাজিক অনুষ্ঠান করা যায়। এমন ২১ জন পথশিশু আজ নবদম্পতির সাথে খাবার টেবিল শেয়ার করেছেন, উপভোগ করেছেন অনুষ্ঠানের সেরা অতিথির মর্যাদা। কৃতজ্ঞতা নবদম্পতিকে, সামাজিক দায়বদ্ধতাকে আবারো সবার সামনে তুলে আনার জন্য, পাশে থাকার জন্য শিশুদের সাথে।’

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাকিল দম্পতি নিজেদের এই বিশেষ আয়োজনের খবর প্রচার করতে চাননি। পরে ‘এক টাকার আহার’ পেইজের বিশেষ অনুরোধে নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হন তিনি। পেইজ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঘটনা জেনে সমাজের বিত্তবানরা যদি এমনভাবে সমাজের নানা প্রকারে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ান, তাহলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।

‘এক টাকার আহার’ ‘বিদ্যানন্দ’ নামে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের একটি বিশেষ কর্মসূচি। একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন প্রবাসী বাঙালি কিশোর কুমার দাশ। শৈশবে সুবিধাবঞ্চিত ছিলেন বলে পথশিশুদের জন্য কল্যাণমূলক কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেন কিশোর কুমার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার ও রাজবাড়ীতে বিদ্যানন্দের পাঁচটি শাখায় একযোগে কল্যাণধর্মী নানা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ঢাকাটাইমস

এ জাতীয় আরও খবর