সরাইলের বিশ্বরোড মোড় আবারও রণক্ষেত্র, পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : মাত্র ১০ টাকা বাসের ভাড়া দেয়া না দেয়াকে কেন্দ্র করে গত শনিবারের সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল সোমবার সরাইলের বিশ্বরোড মোড় আবারও রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। মাইকে ঘোষনা দিয়ে খাঁটিহাতার সাথে যোগ দেয় আরো ৪-৫ গ্রামের লোক। রণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে সরাইলের কুট্রাপাড়া গ্রামের বাসিন্ধারা। দফায় দফায় দুইদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক লোক। বনের (খের) স্তুপে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে দাঙ্গাবাজরা। মহিলা পুরুষ ও শিশুসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছে ৭ জন। সংঘর্ষের কারনে জাতীয় মহাসড়কের ৩ দিকে ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেলে আবারও সংঘর্ষ ঠেকাতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। হাইওয়ে পুলিশ, সরাইল, আশুগঞ্জ ও সদর থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের হস্তক্ষেপে আড়াই ঘন্টা পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। কিন্তু পক্ষের থমথমে অবস্থা কমেনি। গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের বিশ্বরোড মোড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শনিবার বাসের ভাড়াকে কেন্দ্র করে সরাইল সদর ইউনিয়নের কুট্রাপাড়া গ্রামের ইমান উদ্দিনের ছেলে ফরহান মিয়ার (২২) সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাঁটিহাতা গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে দুখু মিয়ার (১৯) প্রথমে বাক-বিতন্ডা ও পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে উভয় গ্রামের সহ¯্রাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহাসড়কের উপর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাট হয়। মহাসড়কে দেড় ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে ও ১২ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক লোক। এ সংঘর্ষের জের ধরেই গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরাইলের বিশ্বরোড মোড়ে আবারও ওই দুই গ্রামের বাসিন্ধারা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খাঁটিহাতা গ্রামের সাথে আরো কয়েকটি গ্রামের লোকজন যোগ দেয়। এতে করে সংঘর্ষের ব্যাপকতা আরো বৃদ্ধি পায়। গোটা বিশ্বরোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দেড় ঘন্টায় ঢাকা-সিলেট, কুমিল্লা-সিলেট, সিলেট-ময়মনসিংহ ও চট্রগ্রাম-ময়মনসিংহ সড়কের ৩ দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। সাধারন যাত্রীরা দিক বিদিক ছুটাছুটি শুরু হয়ে। দুপুর ১২টার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন মহাসড়কের পাশের খালি মাঠে নেমে সংঘর্ষ চালায়। এক সময় বাড়ির ঘরের সামনে বনের (খের) স্তুপে আগুন জ্বেলে দেয়। জেলা সদর থানা, সরাইল থানা, আশুগঞ্জ থানা ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে ২২৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৭ রাউন্ড টিয়ারসেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ঘুরে ফিরে দাঙ্গাবাজরা মহাসড়কের আশপাশেই অবস্থান করতে থাকে। ফলে ওই এলাকায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। বিকেল ৫টার দিকে উভয় পক্ষ আবারও মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। দুই দফায় আড়াই ঘন্টার সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। আহতদের জেলা সদর ও সরাইল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গুরুতর আহত রায়হান উদ্দিন (৩০), হাফিজ উদ্দিন (২৫) ও কাউছার মিয়া (৪৫) কে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আউলিয়া বেগম (৪১), মুসা মিয়া (২৬), সফর আলী (৩০), হালিম মিয়া (১৮), সাগর মিয়া (২৭), হৃদয় মিয়া (২১) ও ফাহিম মিয়াকে (১৩) ঢাকায় প্রেরন করা হয়েছে। সরাইল থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ময়নাল হোসেন জানান, সংঘর্ষে অফিসার ইনচার্জ রুপক কুমার সাহা, এস আই ময়নাল ও কন্সটেবল মুজিবুর রহমান আহত হয়েছেন। বিশ্বরোড হাইওয় থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ অবস্থান করছে।