নিজস্ব প্রতিবেদক : গারো তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় আদালত থেকে পালানো আফসান রহমান রুবেলকে (২৬) ফের গ্রেপ্তারের পর ৬ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গতকাল পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরী এ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এবিএম মামুন গতকাল তাকে ওই আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন দাখিল করেন। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত শুক্রবার র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসী রুবেল ধরেই নিয়েছিল এ ঘটনায় তার দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড হতে পারে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর র্যাব-পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করলেও তখন থেকে সে পালানোর সুযোগ খুঁজতে থাকে। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে গত রোববার তাকে আদালতে নেন বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক ইমরানুল হাসান ও কনস্টেবল দীপক চন্দ্র পোদ্দার। বিকালে জবানবন্দি দেয়ার আগে এক ফাঁকে হাতকড়াসহ সে সেখান থেকে সটকে পড়ে। হাতকড়া পরা ডান হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে সরে পড়ার সময় আদালতপাড়ায় এক ব্যক্তির সন্দেহ হয়। জানতে চান তার পরিচয়। জবাবে সে নিজেকে আদালতের কেরানি বলে পরিচয় দিয়ে পার পায়। এরপর সে আদালতপাড়ায় একটি তুলার দোকানে যায়। সেখানে তুলা ও কাপড় দিয়ে ওই হাত ব্যান্ডেজের মতো করে মুড়িয়ে ফেলে। ঢেকে ফেলে হাতের হাতকড়া। তারপর আদালতপাড়ায় একটি মসজিদে ঢুকে পড়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে মুসল্লি বেশে আসরের নামাজ পড়ে। অসুস্থতার ভান করে অপেক্ষা করতে থাকে আঁধার নামার। সময় হলে মাগরিবের নামাজও পড়ে। এরপর মুসল্লিদের সঙ্গে হাতকড়া পরা হাত একইভাবে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে পড়ে। চট্টগ্রামে থাকা তার এক আত্মীয়কে ফোন করে বিকাশে ১ হাজার টাকা নেয়। একটি দোকানে গিয়ে চা পান করে। সিগারেট খায়। এরপর রাস্তায় যায়। সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসে ওঠে। গুলিস্তান পৌঁছে নেমে পড়ে ওই গাড়ি থেকে। এরপর গ্রামীণ পরিবহনের একটি গাড়িতে করে বাড্ডার শাহজাদপুরে যায়। সে কয়েক স্থানে ছোটাছুটি করে। পরে ভাটারার নুরেরচালা এলাকায় গিয়ে একটি বাড়ির ছাদে রাত কাটায়। সকালে টঙ্গীর বোর্ডবাজারে যায় হাতকড়া কাটাতে। তাতে ব্যর্থ হয়ে সোমবার সে আবার বাড্ডায় ফিরে যায়। রাতে বাড্ডায় সুবাস্তু টাওয়ারের পেছনে খালের পাশে গিয়ে দুটি ঘরের মাঝখানে সংকীর্ণ খালি জায়গায় রাতে ঘুমায়। তার অনুসন্ধানে থাকা সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা মঙ্গলবার ভোরে উত্তর বাড্ডা এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে গতকাল ভোরে সেই স্থান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে গত রোববার গারো তরুণী ধর্ষণ মামলার ওই প্রধান আসামি পালানোর পর এসআই ইমরান ও কনস্টেবল দীপককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় বিচারক আসামি রুবেলের কাছে জানতে চান তার কোনো আইনজীবী আছেন কিনা। রুবেল ‘না’ সূচক জবাব দিয়ে নিজেই শুনানিতে অংশ নেয়। এ সময় রুবেল আদালতকে জানায়, পুলিশের মারধরের ভয়ে আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম। সে তার রিমান্ড না মঞ্জুর করার আবেদনও জানায়।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল মানবজমিনকে বলেন, রুবেল কেন ও কিভাবে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পালিয়েছে তা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। সে ধরে নিয়েছিল গারো তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় তার দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড হবে। এটা থেকে বাঁচার জন্যই সে পালিয়েছিল বলে আমাদের জানায়।
উল্লেখ্য, গত ২৫শে অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডায় এক গারো তরুণী তার হবু বরের কাছে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন। এরপর ২৮শে অক্টোবর এ ঘটনায় রুবেল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ঘটনার অর্ধমাস পর গত শুক্রবার বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে তাকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। রুবেল রামপুরা ও বাড্ডা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে উভয় থানায় ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতির প্রস্তুতি, মাদক, অস্ত্র ও সন্ত্রাসের অভিযোগে রয়েছে ৮টি মামলা। তাছাড়া রয়েছে অন্তত ২০টি অভিযোগ। সে উত্তর বাড্ডার মফিজ উদ্দিন ওরফে মফু মিয়ার পুত্র।