নিউজ ডেস্ক : কে হচ্ছেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার? নির্বাচন কমিশনারই বা কারা থাকছেন। এনিয়ে উত্তাপ এখন নির্বাচন কমিশনে (ইসিতে)। নতুন নির্বাচন কমিশন দেখতে সবার নজর এখন নির্বাচন কমিশনের দিকে। আগের মতোই সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন ইসি কেমন হবে? দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না? এই নিয়ে এরইমধ্যে বিভিন্ন মহলে আলোচনা সমলোচনা চলছে। দেশের বৃহত্তম দুই দলের নেতাকর্মীরা পক্ষে বিপক্ষে নিজেদের বক্তব্য দিচ্ছে। এছাড়া গত সার্চ কমিটিতে বিএনপি নাম প্রস্তাব না করেও এবার সার্চ কমিটিতে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তি নাম প্রস্তাব দিতে আগামী ১৮ তারিখে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রস্তাব দেবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে।
এদিকে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টিও তাদের পছন্দের লোকদের ইসিতে নিয়োগের তদবির চালিয়ে যাচ্ছে। দলটির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইতিমধ্যে সাবেক সিইসি ড. এটিএম শামসুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পুনর্নিয়োগ দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ যদি নিজেদের পছন্দমত দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে, তাহলে এই ইস্যুতে বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনে যেতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাননো হচ্ছে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন হলে নিরপেক্ষ হবে ইসি। এখানে বিএনপির সাথে আলোচনার প্রয়োজন নেই। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। ইতিমধ্যে নতুন কমিশনে নিজের স্থান তৈরি করতে বিভিন্ন সিনিয়র সচিব-উপসচিবও আমলাদের দৌড়-ঝাপ শুরু হয়েছে। অনেকেই ধারণা করছে আগের নির্বাচন কমিশন থেকে কিছু লোক নতুন নির্বাচন কমিশনে স্থান পেতে পারে।
এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশনার স্থান পাওয়ার জন্য লবিয়িং শুরু করেছে সাবেক সরকারি কর্মকর্তারাও। এবার ৫ জন নতুন কমিশনারের মধ্যে একজন নারী কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যাদের নাম এ মুহূর্তে জোরালোভাবে আলোচনা আসছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এস এ সামাদ। এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনার শেষ নেই।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দলের পক্ষ থেকে অন্তত ৯-১০জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সূত্র মতে, সরকারি দলের তালিকায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইখতেদার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের প্রভাবশালী নেতা ড. মোহাববত খান। সূত্র জানায়, তালিকার সবার নাম এখনো জানা না গেলেও পরবর্তী কমিশনারের তালিকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও বিচারপতির নাম রয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসে শেষে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রীর কাছে এ তালিকা জমা দেয়া হবে। এদিকে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী কাছে উপস্থাপন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সরকারের সাবেক কর্মকর্তারা।
সূত্রে জানা গেছে, আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের সার্চ কমিটিকে আগামী মাসের মধ্যে নতুন ইসির নাম প্রস্তাব পাঠাতে হবে প্রধানমন্ত্রী কাছে। তিনি প্রস্তাবনাটি রাষ্ট্রপতির কাছে কাছে পাঠাবেন। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই ঘোষণা করবেন নতুন নির্বাচন কমিশনের নাম। অধিকাংশ দলের দাবির প্রেক্ষিতে সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে দিলেও এ কমিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি দেশের প্রায় সকল বড় দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শেষে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান চার সদস্যের ‘সার্চ কমিটি’ প্রস্তাব রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এ সার্চ কমিটির প্রস্তাবে বর্তমান প্রধান কমিশনার রকীবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ইসি গঠন হয়। এবারো প্রধান বিচারপতির অনুমতিক্রমে আপিল বিভাগের বিচারপতিকে প্রধান করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা হবে।
সূত্রে জানা যায়, সার্চ কমিটির নাম চূড়ান্ত হলে তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন হাতে পাওয়ার দুয়েকদিনের মধ্যে সার্চ কমিটির সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। আর এই সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের নাম সংবলিত সুপারিশ চূড়ান্ত করে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে। অনুসন্ধান কমিটি নিজেরা বৈঠক করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে দুইজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবেন। তাদের সুপারিশ থেকে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার চূড়ান্ত করে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।