নিউজ ডেস্ক : গাইবান্ধার রংপুর সুগার মিল লিমিটেড এলাকায় গুঁড়িয়ে দেওয়া পল্লি থেকে সরিয়ে সাঁওতালদের গোবিন্ধগঞ্জের কাটাবাড়ি উলুপাড়া ব্রিজের কাজে বসতি করে দেবে সরকার। এ ব্যাপারে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ইতোমধ্যে সরকার ১৪ একর জমি চিহ্নিত করেছে। জানা গেছে, চিহ্নিত করা এই জমি চিনি কলের ৫/৬ কিলোমিটারের মধ্যে। এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও সরকারের দায়িত্বশীল দুজন মন্ত্রী এবং গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক।
সরকারের দাবি অনুযায়ী, সাঁওতালরা যেখানে বসবাস করত, সেটা চিনি কলেরই জায়গা এবং সেখানে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হলে অনুপ্রবেশকারী হতে হবে। তাই বিকল্প এলাকায় সাঁওতালদের জন্যে জমি চিহ্নিত করেছে সরকার। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রংপুর সুগার মিল লিমিটেডের দাবি, ১৯৬২ সাল থেকে চিনি কলের নামে জায়গাটি রেকর্ডকৃত। তারা নিয়মিত খাজনাসহ যাবতীয় কাগজপত্র হালনাগাদ করে আসছে। তাই চিনিকলের ভেতরে সাঁওতালদের বসতি গড়তে দিলে তাদের অনুপ্রবেশকারী হয়ে যেতে হবে। কারণ, এটা আইনগতভাবে চিনি কলেরই জায়গা। এসব বিষয়গুলো বিচার বিশ্লেষণের পর সাঁওতালদের জন্যে বিকল্প জায়গার চূড়ান্ত ব্যবস্থা করার কাজ চলছে।
তবে বিভিন্ন সূত্র জানায়, জমি অধিগ্রহণের সময়ে শর্ত ছিল চিনি কল উক্ত জমি ব্যবহার না করলে, তা পুনরায় আগের মালিকদের ফেরত দিতে হবে। আগের মালিদকদের মধ্যে স্থানীয় বাঙালি ও সাঁওতালরা ছিল।রংপুর চিনি কল অনেকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। উপরন্তু,চিনি কল অব্যবহৃত জমি বিভিন্ন জনের কাছে লিজ দিয়ে আসছে। এতেই প্রমাণ হয় যে, এ জমি চিনি কল আখ চাষের কাজে ব্যবহার করছে না, বলে দাবি করেছেন সাঁওতালরা।
সূত্র জানায়,এ প্রক্রিয়া শুরু হবে গোবিন্ধগঞ্জ এলাকা স্বাভাবিক হলে। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, সরকারের ‘গুচ্ছগ্রাম’ প্রকল্পের আওতায় সাঁওতালদের ঘরবাড়িও করে দেওয়া হবে।তবে সাঁওতালদের ঘরবাড়ি একটু আলাদা ধাঁচের। ফলে সেখানে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সরকার গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হবে।
এদিকে গত রবিবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লি উচ্ছেদের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। তারা সেখানে গিয়ে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালদের আবাসন, চাকরি, ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার আশ্বাসও দিয়েছেন প্রতিনিধি দলের নেতারা। তারা সেখানে সাঁওতালদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন। সাঁওতাল পল্লি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের কোনও ছাড় দেয়া হবে না বলেও আশ্বাস দেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পদক বি এম মোজাম্মেল হক, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক টিপু মুন্সি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য রেমণ্ড আরেং।
ঘটনাস্থলে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক খোঁজখবর নেন। বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কেউ নির্যাতিত হবে না। সাঁওতালরাও এর বাইরে থাকবে না।’
প্রতিনিধি দলের সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের সরকারি জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি তাদের আয়ের সুযোগ করে দেওয়া হবে। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে উৎপাদনমুখী কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যারা ব্যবসা করতে আগ্রহী তাদেরকে বিনা জামানতে ঋণ দেওয়া হবে। আর সন্তানদের শিক্ষার জন্য প্রাথমিক স্কুল করে দেওয়া হবে।’
গত ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনি কলের সাহেবগঞ্জ আখ খামারের নামে অধিগ্রহণ করা জমিতে উচ্ছেদ অভিযানের সময় সাঁওতালদের সঙ্গে চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় প্রভাবশালী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে তিন জন সাঁওতাল নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশের উপস্থিতিতেই সেদিন লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় শতাধিক বাড়িতে। এরপর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দিয়েছে।
এই ঘটনায় হতদরিদ্র সাঁওতালরা আরও দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছেন। খোলা আকাশের নিচে তিন বেলা খাওয়াপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।
ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সারা দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ঘটনাস্থলে নেতা পাঠিয়ে তদন্ত করার কথা জানায়।
১৯৬২ সালে সাঁওতাল অধ্যুষিত মাদারপুরসহ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার এক হাজার ৮৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
চিনিকল কর্তৃপক্ষের দাবি,দুই বছর আগে এসব জমি পূর্বপুরুষদের সম্পত্তি দাবি করে এগুলো ফেরত চেয়ে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। তখন তারা নানা কর্মসূচিও পালন করে। আর বিরোধপূর্ণ জমিতে ঘর তুলে বসবাস করতে থাকে। আর এগুলো উচ্ছেদ অভিযানে গেলে একাধিকরার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয় তাদের। বাংলা ট্রিবিউন