মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের ৩-৪টি পয়েন্টে দেদার চলছে বালুর ব্যবসা। সবকিছু ম্যানেজ করেই তারা সড়কের উপর বালু রেখে ব্যবসার কথা জানিয়েছেন। আর এ জন্য মাঝে মধ্যে সড়কে তৈরী হচ্ছে যানজট। দূর্ভোগে পড়ছে গাড়ির যাত্রী ও পথচারিরা। সেই সাথে ঘটছে দূর্ঘটনা। ঝরছে তাজা প্রাণ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নীরব। এ ছাড়া এসড়কে অধিকাংশ বালু বোঝাই ট্রাক ও ট্রাক্টর চলছে ঢাকনা ছাড়া। যাত্রী ও আশপাশের লোকজনের চোখে শরীরে যাচ্ছে বালু। নষ্ট হচ্ছে তাদের জামা কাপড়। নীরব প্রশাসন। সরজমিনে ঘুরে স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কের বাড়িউড়া, ইসলামাবাদ, শান্তিনগর, কুট্রাপাড়া মোড় ও বেড়তলা এলাকায় সড়কের উপর মাসের পর মাস বালু রেখে এক শ্রেণির লোকজন করছেন ব্যবসা। নেই কোন নিয়মনীতি। নেই প্রশাসনের চাপ। কোন ঢাকনা ছাড়াই ট্রাক বা ট্রাক্টরে করে নিয়মিত আসছে বালু। চলার পথে বাতাসে উড়িয়ে বালু ফেলছে যাত্রী ও পথচারিদের চোখে মুখে ও শরীরে। আচমকা যাত্রীদের নতুন জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নাপাক হয়ে যাচ্ছে নামাজিদের পরিধেয় কাপড়ও। বাতাসে কিছু যাত্রীবাহী গাড়ির ভিতরেও পৌঁছে দিচ্ছে সড়কে রাখা বালু। সড়কের বালু অনেক সময় ডাকাতদেরও কাজে আসছে। ঝুঁকি নিয়ে সড়কের উপর গাড়ি পার্কিং করে বালু নামাচ্ছেন ব্যবসায়িরা। একই ভাবে গাড়িতে উঠিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে বালু। সড়কের উপর বালুর ট্রাক পার্কিং-এর কারনে ব্যস্ততম এ মহাসড়কে মাঝে মধ্যেই বেধে যাচ্ছে যানজট।
বালুর দখলে রয়েছে সড়কের দু’পাশ। তাই বাধ্য হয়ে পথচারিরা হাঁটছেন সড়কের উপর দিয়ে। এ জন্য মাঝে মধ্যে বেপরোয়া গতির দূরপাল্লার কোচ, ট্রাক ও লোকাল বাসের চাপায় জীবন যাচ্ছে অনেকের। ঘটছে অটোরিকশা দূর্ঘটনাও। হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশ নিয়মিত দিনেরাতে যাতায়ত করছেন এ সড়কে। কিন্তু কেন জানি তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। স্থানীয় লোকজন জানায়, বাড়িউড়া মহাসড়কের উপর বালু রেখে ব্যবসা করছেন ইদ্রিস মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া (৩২), আবদুস ছালামের ছেলে আপন মিয়া (৩৫) ও আবদুল মালেকেরে ছেলে এনাম মিয়া (২৬) সহ কয়েকজন। ইসলামাবাদ এলাকায় ব্যবসা করছেন মনির উদ্দিনের ছেলে নওয়াব মিয়া (৩০), নাজির বক্সের ছেলে আশিদ মিয়া (২৫), আবদুল খালেকের ছেলে শিতু মিয়া (২৬) সহ আরো কয়েকজন। এ ছাড়া কুট্ট্রাপাড়া মোড়েও দেদার চলছে সড়কের উপর বালুর ব্যবসা। গত ২৩ অক্টোবর রোববার কুট্টাপাড়া মোড় এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর একটি ট্রাক্টর বালি বোঝাই করছিল। এক পর্যায়ে ট্রাক্টরটি আগে পিছে করতে গিয়ে নাসিরনগর থেকে জেলা সদরগামী সিএনজি চালিত একটি অটোরিকশাকে ট্রাক্টরটি পেছনের দিকে সজোরে ধাক্কা দিলে সেটি দুমড়ে মুছড়ে যায়। ঘটনার পরই ট্রাক্টরের চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। দূর্ঘটনায় অটোরিকশা চালক কাশেম চৌধুরীসহ (২৮) চারজন আহত হন। তাঁদেরকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় সেখানে কাশেম চৌধুরী মারা যান। কাশেম চৌধুরী সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের আঁিখতারা গ্রামের হিরা মিয়া চৌধুরীরর ছেলে।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই দুধ মিয়া বাদী হয়ে ট্রাক্টর চালকের বিরুদ্ধে বিশ্বরোড হাইওয়ে থানায় মামলা করেছেন। সড়কের উপর বালুর ব্যবসার কারনে শান্তিনগর, বেড়তলা সহ বেশ কিছু জায়গায় এমন দূর্ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। আর ঝরছে তাজা প্রাণ। ইসলামাবাদ (গোগদ) গ্রামের আশিদ মিয়া বলেন, মাঝে মধ্যে করি। এখন করছি না। বাড়িউড়া গ্রামের জুয়েল মিয়া ও মহাসড়কের পাশে বালুর ব্যবসা করার কথা স্বীকার করে বলেন, আগে সড়কের পাশে ব্যবসা করতাম। ৩ মাস ধরে সড়কের নীচে জায়গা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছি। এখানে বালু নামিয়ে পরে বিক্রি করে ফেলি। সরাইল বিশ্বরোড হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হুমায়ুন কবির কিছু লোক মহাসড়ক ঘেষে বালুর ব্যবসা করছে এমনটা স্বীকার করে বলেন, এ কারনে প্রায়ই মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যবসা কেন? মহাসড়কের পাশে বালু রাখাই ঠিক না। আগে কে কি করেছে আমি জানি না। আমি ওই ব্যবসায়িদের নাম ঠিকানা খুঁজছি। ব্যবস্থা নিব। আর মহাসড়কের দুইদিকে ২০ ফুট জায়গা পর্যন্ত একদম ফাঁকা থাকতে হবে।