১৮ই নভেম্বর, ২০১৬ ইং, শুক্রবার ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ


ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবে এনবিআর


Amaderbrahmanbaria.com : - ১৫.১১.২০১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক : মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ প্রশমনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।


ভ্যাট নিয়ে অসন্তোষে ব্যবসায়ীরা যাতে নতুন করে আন্দোলনে না যায় সে বিষয়ে এনবিআরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নিদের্শনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই সঙ্গে ভ্যাট সংগ্রহের সঠিক হিসাব সংরক্ষণের জন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বল্পমূল্যে ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) মেশিন সরবরাহেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী এনবিআর’র সঙ্গে ভ্যাটসংক্রান্ত সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন। তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। সমস্যা সমাধানে এনবিআর আগামীকাল বুধবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়।

এর আগে এক অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন সঠিক নয় বলে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দোকান মালিক সমিতির দাবি গ্রহণযোগ্য নয়, তারা ভ্যাট না দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছে।

ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী দেশে ভ্যাট নিবন্ধনকারী ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ৭৭ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ১৪ হাজার ব্যবসায়ী ভ্যাট দিচ্ছেন। ভ্যাট প্রদানকারীর সংখ্যা বাড়লে ভ্যাট কমানো হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

দোকান মালিকদের ওপর প্রস্তাবিত বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার এবং বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখার দাবিতে দোকানপাট বন্ধ করে আন্দোলন করে আসছে ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতি। এরই মধ্যে তারা ঢাকা মহানগরে তাদের দাবির পক্ষে একদিন দোকানপাট বন্ধ রেখেছিল।

ভ্যাটের আওতায় যেসব দোকান মালিক রয়েছেন, তারা বছরে ১৪ হাজার টাকা ভ্যাট দিচ্ছেন, যা বর্তমান অর্থবছরে বাড়িয়ে ২৮ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এখানেই ব্যবসায়ীদের আপত্তি। চলতি মাসের মধ্যে বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে আগের ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ বহালের ঘোষণা না দিলে আবারও ধর্মঘটে নামার হুমকি দিয়েছেন তারা।

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে চার স্তরে মোট ৬০ শতাংশ ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে- তাদের এমন অভিযোগের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভুল হিসাব। ব্যবসায়ীরা তাদের অ্যাকাউন্ট ঠিকভাবে সংরক্ষণ করেন না। ফলে তারা এমনটা মনে করছেন। ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক দাবি করার আগে নিজেদের অ্যাকাউন্ট ঠিকভাবে সংরক্ষণের পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী।

পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) মেশিন ব্যবহার না করে ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে তা রাজস্ব খাতে জমা না দেওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, সব ব্যবসায়ীকে ইসিআর মেশিন ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তারা তা করছেন না। এতে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে ইসিআর মেশিন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর এক লাখ ইসিআর মেশিন ব্যবসায়ীদের মধ্যে সাশ্রয় মূল্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজকের বৈঠকে প্রাথমিকভাবে ২০ থেকে ২৫ হাজার ইসিআর মেশিন ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরবরাহ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র জানায়, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে। ভ্যাটের চাপ মূলত ভোক্তাদের ওপর পড়লেও আন্দোলনে নেমেছেন প্রায় সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে খুচরা দোকানদার পর্যায়ে ভ্যাটের হার একলাফে দ্বিগুণ করে দেওয়ার প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহারের পাশাপাশি প্যাকেজ ভ্যাটের পরিবর্তে আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া সর্বজনীন ভ্যাট ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে। ইতোমধ্যে একদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করেছেন তারা। চলতি মাসের মধ্যে তাদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে ১ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে সব দোকান বন্ধ রেখে লাগাতার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সহজ শর্তে ১০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ আট হাজার কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল নতুন ভ্যাট আইন। শর্ত মেনে সে টাকা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। শর্তানুসারে সরকার ইতোমধ্যে আইনটি প্রণয়নও করেছে। আইনটি বাস্তবায়নে সারাদেশের ভ্যাট অফিস অটোমেশনের জন্য ৫৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। আগামী বছর থেকে আইনটি কার্যকরের ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়ীদের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে সরকার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, বর্তমানে প্যাকেজ ভ্যাট অনুসারে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার প্রত্যেক দোকানিকে বছরে ১৪ হাজার, অন্যান্য সিটি করপোরেশনে ১০ হাজার, জেলা শহরের পৌর এলাকায় সাত হাজার ২০০ ও দেশের অন্যান্য এলাকায় তিন হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। প্যাকেজ ভ্যাটের বিধান বহাল রাখার দাবি জানিয়ে এফবিসিসিআই থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এনবিআর’র কাছে আবেদন জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলেছেন, ব্যবসায়ীরা প্যাকেজ ভ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য ১৮ হাজার, অন্যান্য সিটি করপোরেশনের জন্য ১৪ হাজার, জেলা শহরের জন্য ১০ হাজার এবং দেশের অন্যান্য এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা হিসেবে পরিশোধে রাজি। তবে সরকার নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ সম্পন্ন করেছে।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদক : বিশ্বজিত পাল বাবু
চেয়ারম্যান : আলহাজ্ব নুরুজ্জামান
ঠিকানা : ৬০৩ ফুলবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563


close