১৮ই নভেম্বর, ২০১৬ ইং, শুক্রবার ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
  • প্রচ্ছদ » slider 4 » সরাইলের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবন আছে, সেবা ও ঔষধ নেই


সরাইলের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবন আছে, সেবা ও ঔষধ নেই


Amaderbrahmanbaria.com : - ১৪.১১.২০১৬

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে : সরাইলের শাহজাদাপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। বিশাল ভবন। বাহির থেকে দেখতে খুবই সুন্দর। কিন্তু ভবনটির ভিতর ভাল নেই। প্রত্যকটি কক্ষই নোংরা। সর্বত্রই ময়লা ও মাকড়শার জাল। চেয়ার টেবিলে ধূঁলার স্তুপ। রয়েছে ষ্টাফ স্বল্পতা। যারা আছেন তারা আসেন না। মাঝে মধ্যে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে আসেন। এক মাস বা ১৫ দিনের স্বাক্ষর করেন এক সাথে। আর যাওয়ার সময় অতি গোপনে ব্যাগ ভর্তি করে নিয়ে যান গরীবের ঔষধ। প্রভাবশালীরা চাইলে কিছু ঔষধ পান। আর নিরীহ গরীব ও অসহায়রা কাছেও ভিড়তে পারেন না। রোগীর দেখা না মিললেও ঔষধ বিতরনের তালিকা বিশাল। গতকাল সরজমিনে গেলে এমন হাজারো অভিযোগ করেন চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা। হাসপাতাল চত্বরে গিয়েই দেখা যায় প্রধান ফটকে বসে খেলা করছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভিতরের পরিবেশ একদম নিরব। নেই কোন ষ্টাফ। নেই রোগী। মেডিকেল অফিসার, উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও ফার্মাসিস্টের কক্ষে ঝুলছে তালা। তবে ফার্মাসিস্টের কক্ষের জানালাটি খোলা। বাহির থেকে দেখা যায় তার বসার চেয়ার টেবিলে ধূঁলা বালুর স্তুপ। আর রোগী বসার চেয়ারে দূর্গন্ধযুক্ত নেকড়া (ছিঁড়া কাপড়)। কে যেন চিৎকার করে ডাকছে রফিক ভাই তাড়াতাড়ি আসেন। কে যেন এসেছে। মাঠ থেকে লুঙ্গি পড়া বৃদ্ধ লোকটি দৌঁড়ে আসেন। তিনিই রফিক ভাই। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গত ৪০ বছর ধরে চাকুরী করছেন। এখানকার অনেক অনিয়ম দূর্নীতির স্বাক্ষী তিনি। পরিচয় জানতে চাইলে হতকচিত হয়ে আমতা আমতা করে বলেন, আমি রফিক। এ হাসপাতালের এম এল এস এস। অন্য ষ্টাফরা কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি ছাড়া কেউ নাই স্যার। ডাক্তার রেজাউল স্যার মাসে ২/১ বার আসতো। উনি বদলি হয়ে চলে গেছেন ২ মাস। এখন আর কেউ আসে না।

 

এখন ডাক্তার এবং চাকমো নেই। সুধাংশো স্যার মাঝে মধ্যে আসেন। কতক্ষণ কাজ করে আবার চলে যান। ষ্টাফ নাই তার এখন আর স্থানীয় রোগীরা আসে না। হঠাৎ কেউ আসলে আমি ঔষধ দিতে পারি না। পরে তিনি ফার্মাসিস্টেরে কক্ষের তালা খুলে দেন রফিক। হাজিরা খাতা ও রোগী দেখে ঔষধ বিতরনের রেজিষ্ট্রার চাইতেই কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান রফিক। দুটি রেজিষ্ট্রারেই হাজারো অনিয়ম ও দূর্নীতির চিত্র ঝকঝক করছে। এরপর কক্ষের ভিতরে ময়লা আবর্জনা ও মাকড়শার জালে ভরা। একটি কাঠের আলমিরা খুলে দেখা যায় বিশৃঙ্খভাবে পড়ে আছে কাগজপত্র। চারিদিকে ধুঁলার পাহাড়। রোগী বসার চেয়ারের ময়লাই প্রমাণ করে গত এক/দেড় মাস ধরে এ চেয়ারে কেউ বসেনি। অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেই সুধাংশোর। এমনকি এম এল এস এস রফিকের গত ২ দিনের স্বাক্ষরের ঘর ফাঁকা। সাংবাদিক এসেছে এ খবরে গ্রামের মূহুর্তের মধ্যে গ্রামের অর্ধশতাধিক লোক জড়ো হয়। সকলের অভিযোগ একটাই এখানে কোন ষ্টাফ আসে না। শুধু হাসপাতাল ভবনটাই আমাদের শান্তনা। কোন চিকিৎসা নেই। ঔষধ চাইলেই বলে নেই। শাহজাদাপুর গ্রামের বাসিন্ধা সুমন মিয়া (২৮), মোঃ হাবিবুর রহমান (৫৫), ছাদেক মিয়া (৩০), মোঃ নূরু মিয়া (৫৪), রফিক মিয়া (১৮), কাউছার মিয়া (৩৭), মোক্তার মিয়া (৪৮) ও চিত্তন শীল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২ বছর ধরে ডাক্তার দেখি না। ফার্মাসিস্ট সুধাংশো ২০-২৫ দিন পর মন চাইলে পেছনের স্বাক্ষর গুলো করতে আসেন।

সাড়ে ১১টায় এসে তড়িঘড়ি করে ১২টায় চলে যায়। চিকিৎসাও নেই। ঔষধও নেই। আর রফিক নামের লোকটা রাতের বেলা চুরি করে ঔষধ বিক্রি করে। আর রোগী গেলে বলে নেই। হাসাপাতালে কিছুই না থাকায় এখন আর গ্রামের লোকজন সেখানে যায় না। আস্তে সকলেই হাসপাতালের কথা ভুলে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মোঃ আজহার মিয়া বলেন, সরকার জনগনের স্বাস্থ্য সেবার আশায় এখানে যে টাকা খরচ করছেন। এর চুল পরিমান উপকারও কেউ পাচ্ছে না। প্রতি বছর যে লাখ লাখ টাকার ঔষধ আসে। সে গুলো কোথায় যায়? ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ৪ জন ষ্টাফ থাকতেও তারা ইচ্ছেমত মাসে ২/১ দিন এসেছেন শুধু প্রতারণা করে স্বাক্ষর গুলো দেওয়ার জন্য। এখন ২ জনের মধ্যে ফার্মাসিস্ট মন চাইলে মাসে ২/৩ দিন আসেন আখের ঘুচাতে। একজন ফার্মাসিস্ট আর কি চিকিৎসা করবে? গোটা ইউনিয়নের সেবার লক্ষ্যে সরকার হাসপাতাল করলেও শুধু শাহজাদাপুর গ্রামের লোকজনই এখন সেবা থেকে বঞ্চিত। এখানে সেবা ও ঔষধ কোনটাই পায় না জনগন।
যেভাবে হচ্ছে দূর্নীতিঃ
মেডিকেল অফিসার সহ মোট ৪ জন ষ্টাফ থাকার কথা। কিন্তু শাহজাদাপুরে গত ২ মাস ধরে নেই মেডিকেল অফিসার। কয়েক বছর ধরে নেই চাকমো। আছে শুধু ১ জন ফার্মাসিস্ট সুধাংশো ও এম এল এস এস রফিক। বয়সের ভারে নুজ রফিক এখন খুব একটা নড়াচড়া করতে পারে না। রফিক চাকমোর জন্য বরাদ্ধ বাসায় ফ্রি থাকেন। সেই সুযোগে রফিককে ব্যবহার করছেন সুধাংশো। ঔষধের নাম না জানলেও তিনি রফিকের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে ফাঁকি দেন। অজপাড়া গাঁ হওয়ায় এখানে উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তিরা আসেন কম। তাই অনেক সময় ফোন আসলে পাইক পাড়ার বাসায় বসেই সুধাংশো বলেন হাসাপাতালে আছি। সুধাংশো মাসে ২-৩ বারের বেশী আসেন না। তাও আসেন শুধু কাগজপত্র ঠিক করতে। আর হাজিরা খাতায় পেছনের স্বাক্ষর গুলো করতে। সরজমিনে তার হাজিরা খাতায় দেখা যায়, গত ১-৫ নভেম্বর পর্যন্ত তার স্বাক্ষরের ঘর গুলো ফাঁকা। পরে কিন্তু তিনি সেখানে স্বাক্ষর করে ফেলবেন। সেই সাথে রোগী দেখে ঔষধ বিতরণের রেজিষ্ট্রারেও ১-৫ নভেম্বর পর্যন্ত ফাঁকা।

 

গত ১ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রত্যেক দিন রেজিষ্ট্রারের ৩৩টি ঘর পূরন করে ৩৩ জন রোগী দেখেছেন ও তাদেরকে ঔষধ দিয়েছেন মর্মে দেখিয়েছেন। আবার সেই তালিকায় রোগীদের বয়স ও ঠিকানা লিখেননি। অথচ তিনিই বলেছেন এত দূরে সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশী যাওয়া যায় না। প্রশ্ন হচ্ছে সপ্তাহে তিনি ২ দিন গেলে বাকী ৪ দিন কিভাবে রোগী দেখে ঔষধ বিতরণ করেছেন? আবার গত ৩১ অক্টোবর তিনি রেজিষ্ট্রারে দেখিয়েছেন ৫৬ জন রোগী দেখে ঔষধ দিয়েছেন। একই নামের রোগী সপ্তাহে ৪ জায়গায় এন্ট্রি করা। এভাবে তিনি হাসপাতালের ঔষধ গায়েব করে চলেছেন। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে বছরে এ হাসপাতালে ২ লক্ষাধিক টাকার ৬-৭ ধরনের ঔষধ দেয় সরকার। অথচ লোকজন প্যারাসিটামল আর নাপা ছাড়া কিছুই পায় না। মাসের ৬-৭ দিন ডিউটি করে সুধাংশো কি ২ লাখ টাকা ঔষধই রোগীদের দিয়ে দেয়? তাহলে বাকী ঔষধ যায় কোথায়? অভিযুক্ত ফার্মাসিস্ট সুধাংশো ষ্টাফ স্বল্পতা ও সপ্তাহে ৩ দিন কর্মস্থলে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, জেলা শহর থেকে সেখানে যেতে খুবই কষ্ট। তারপর ২-৩ ঘন্টা সময় লাগে। গিয়ে পৌঁছতে ৯-১০ টা বেঁজে যায়। রোগী দেখে ঔষধ বিতরণের তালিকার অনিয়ম সম্পর্কে কোন সদত্তোর দিতে পারেননি। ঔষধ গায়েব করা বিষয়ে বলেন, ভাই লোকজন তো কত কথাই বলে। তাদের কথা শুনে কি কাজ করা যাবে? এসব মিথ্যা। সেখানে সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশী যাওয়া যাবে না এটা সবাই জানে। সাক্ষাতে সব কথা বলব ভাই। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হাসিনা আকতার বেগম বলেন, এ বিষয়ে খুঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিব।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদক : বিশ্বজিত পাল বাবু
চেয়ারম্যান : আলহাজ্ব নুরুজ্জামান
ঠিকানা : ৬০৩ ফুলবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563


close