নিউজ ডেস্ক : ব্রিটিশ হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক বলেছেন, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সমস্যা থেকেই যাবে। যদিও হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর সরকারের পদক্ষেপে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবুও এতে তৃপ্ত হয়ে আমাদের থেমে যাওয়া ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোর অনেক ঘটনার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। নিরাপত্তা পরিস্থিতি একটা দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা। এটি একটি জটিল সমস্যাও বটে। কেননা অনেকে ভালো পারিবারিক ব্যাক গ্রাউন্ড থেকে জঙ্গিবাদে যোগ দিচ্ছে।
সোমবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসভবনে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব-এর ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ব্লেইক এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পহেলা জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ জঙ্গি নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে কাজ করছে। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং আস্থা ফিরতে শুরু করেছে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করবে যাতে এদেশের নাগরিকরা নিরাপদে থাকতে পারেন।
নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্লেইক বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত। অনেক কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে কাজ করে। কোনো কোনো ব্রিটিশ ক্রেতা এদেশে পণ্য কিনতে আসছে; আবার কোনো কোনো কোম্পানি নিরাপত্তার কারণে পণ্য ক্রয় স্থগিত করেছে। জঙ্গিবাদ অবশ্যই অর্থনীতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে জনগণ রায় দিলেও বিদেশীদের তাদের দেশ সফর করার ব্যাপারে তারা স্বাগত জানাবেন। ব্রেক্সিট হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক একই থাকবে। সম্ভব হলে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও ভাল হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে এদেশের কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করি না। বাংলাদেশের সরকার নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে নিজেরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। আমরা নির্বাচন কমিশনকে সমর্থন দিয়ে যাব।’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা সম্পর্কিত এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে সেখানে কোনো বিদেশী কূটনীতিকের পক্ষে সফর করা সম্ভব নয়। সংখ্যালঘুদের সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ভাংচুর ও লুটের ঘটনা শক্ত হাতে দমন করা উচিত। এই ঘটনায় অপরাধীদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ব্লেইক জানান, ব্রিটিশ ভিসা অফিস দিল্লি থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ এটা এখানে ফিরিয়ে আনার সঙ্গে অনেক ব্যয় ও সরঞ্জামের ব্যাপার রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ২০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী রয়েছেন। আমাদের দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অবৈধ বাংলাদেশীদের সংখ্যা নির্ধারণ করেছে। অবৈধ বাংলাদেশীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান কীসের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যে আছেন- জানতে চাইলে ব্লেইক বলেন, ‘তিনি (তারেক রহমান) যুক্তরাজ্যে আছেন। তবে তার সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়া কিংবা মন্তব্য করতে আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি।’
ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান।