ডেস্ক রির্পোট : নাসিরনগরে হিন্দু বসতবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে উঠা ব্যর্থতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মৎস্য, প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী অ্যাড. ছায়েদুল হক।
রোববার দুপুরে নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, প্রশাসন ব্যর্থ নয়। ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক কী করে?
‘কিন্তু হামলার পরেও গত শুক্রবার ভোরে ও গতকাল শনিবার উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুনের ঘটনার পরও কী বলবেন- পরিস্থিতি স্বাভাবিক?’- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বৃহস্পতিবার যেসব ঘরে আগুন লাগানো হয় ও ভাইস চেয়ারম্যানের যে ঘরে আগুন দেয়া হয়, সেসবের মানুষ থাকে না। সেসব লাকড়ির ঘর, রান্না ঘর।
রোববার ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঢাকায় বলেছেন, নাসিরনগরের ঘটনায় প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ- সাংবাদিকরা এ বক্তব্যের বিষয়ে ছায়েদুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘নাসিম ফিল্ডে নেই। ফিল্ডে আমি আছি। আমি বলছি প্রশাসন ব্যর্থ না’।
রোববার সকালে নাসিরনগরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ঘটনার জন্য প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ- এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বলেন, কোথায় কাদের সিদ্দিকী? আমার কাছে তিনি আসেননি। তিনি বললেই হবে নাকি?
তিনি সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ করে বলেন, যদি নাসিরনগরের কোনো হিন্দু বলে আমি কখনও তাদের মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছি, তবে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেব।
হামলার পূর্ব মূহুর্তে নাসিরনগরে পৃথক দুটি সমাবেশ হামলার জন্য দায়ী কি না এবং সমাবেশের অনুমতি দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন কি-না- এমন প্রশ্নে ছায়েদুল হক উত্তেজিত হয়ে পড়েন। চড়া কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ইউএনও অনুমতি দেয়নি’।
ইউএনও অনুমতি দিয়েছেন, তিনি নিজে আমাদের বলেছেন- কিছু সাংবাদিক এ কথা বলতেই উচ্চ স্বরে ছায়েদুল হক তার নেতাকর্মীদের বলেন, অই, তরা ইউএনওরে ডাক্, দেইখা লই, ও মিছা কথা কেন কইব?
অ্যাড. সুলতানা কামাল ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রানা দাশগুপ্তের কড়া সমালোচনা করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, তিনি ও সুলতানা কামাল নাসিরনগরে এসেছেন, অথচ আমার সঙ্গে দেখা করল না। আমি তো সারাদিন ডাকবাংলাতেই থাকি। কে তাদেরকে বলল আমি হিন্দুদের গালি দিয়েছি, এটা তো এই এলাকার অভিভাবক হিসেবে তারা আমার কাছে জানতে চাইতে পারত। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার কেন করল?
হামলার আগে উপজেলা সদরে মাইকিং এর বিষয়ে সাংবাদিকরা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, মাইকিং হয়নি।
আওয়ামী লীগের তিন নেতা বহিষ্কারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, রবিউল মোকতাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) এবং আল মামুন সরকারই (জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) জানেন। দলীয় কোন্দল থেকে নাসিরনগরে কোনো অশান্তি হয়নি বলে দাবি তার।
তার দাবি অনুযায়ী কুচক্রী মহল নাসিরনগর নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু কুচক্রী মহল কারা- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে ছায়েদুল হক চড়া সুরে বলেন, ২০০১ সালে আরএকে সিরামিকস্ এর মালিক একরামুজ্জামান সুখন (উপজেলা বিএনপির সভাপতি) চেয়েছিল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন করতে। কিন্তু আমি দেইনি। কারণ, তারা আওয়ামী লীগের জন্য নয়, ক্ষমতার জন্য নির্বাচন করতে চেয়েছিল। পরে তারা বিএনপিতে যোগ দেয়। তারাই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সারাদেশের মুসলিমরা ষড়যন্ত্রে পা দেননি। কিন্তু শুধু আমার এলাকাতেই ধর্ম অবমাননার অজুহাতে হিন্দু মন্দির, বাড়ি ঘর হামলা কেন হলো? এটাই একটা জ্বলন্ত প্রশ্ন ও বিরাট রহস্য।
আমাদের সময়.কম