নিজস্ব প্রতিবেদক :নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে জনমত সৃষ্টি করে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দেশে ফিরে খালেদা জিয়ার মূল ইস্যু হবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য জনমত সৃষ্টি করা। এ লক্ষ্যে তিনি শান্তিপূর্ণ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।
সৌদি আরবে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের ফাঁকে ফাঁকে মা ও ছেলের মধ্যে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।
সেখানেই স্বাধীন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ নানা বিষয় উঠে আসে। সৌদি আরব সূত্রে এসব বিষয় জানা গেছে।
দলের হাইকমান্ড মনে করেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের দাবিকে বানচালের জন্য সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালাতে পারে।
এর অংশ হিসেবে এ ইস্যুতে বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য নীলনকশা আঁটতে পারে। তবে সে ব্যাপারে তারা সতর্ক থাকবেন।
তারা মনে করেন, কার অধীনে আগামী নির্বাচন হবে তা এই মুহূর্তে ভাবার সময় নেই। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিয়ামক হচ্ছে স্বাধীন কমিশন। তাই সরকারকে চাপে রেখে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে ভোট রক্ষা করা সম্ভব হবে। তাই সৌদি আরব থেকে ফেরার পর চেয়ারপারসন এটাকেই মূল ইস্যু করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
সূত্র জানায়, হজের সময় সৌদি আরবে এসব বিষয়সহ দলের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মাঝে আলোচনা হয়েছে।
এর পাশাপাশি আপাতত সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনে না গিয়ে উভয়েই দল গোছানোকেই অগ্রাধিকার দেন। তৃণমূল পুনর্গঠনের পাশাপাশি ঘোষিত কমিটিতে রদবদল নিয়েও তারা ঐকমত্যে পৌঁছেন। পাশাপাশি যুবদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও ঢাকা মহানগর বিএনপি দ্রুত পুনর্গঠন নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়।
পুনর্গঠন করতে গিয়ে যে কোনো মূল্যে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন তারেক রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং লন্ডন থেকে তারেক রহমান সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হন। ইতিমধ্যে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারা হজ পালন করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, পবিত্র হজ পালনের জন্য তারা সৌদি আরব গেছেন।
পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে ভালো একটা সময় পার করছেন। এখানে রাজনৈতিক বিষয়ে বড় ধরনের আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তারপরও শীর্ষ দুই নেতার সাক্ষাতে দলীয় এবং রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে একেবারে যে আলোচনা হবে না তা ঠিক নয়।
কিছু বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে হজে যাওয়া এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার কোনো বৈঠক হয়নি।
হজের আনুষ্ঠানিকতার ফাঁকে ফাঁকে হোটেলে অবসর সময়ে সার্বিক বিষয় নিয়ে তাদের আলোচনা করতে দেখা গেছে।
এসব আলোচনায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর নেতাদের নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াও স্থান পায়। স্থায়ী কমিটির দুই শূন্য পদে কাদের নিয়োগ দেয়া যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়। তবে এই দুই নিয়োগের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করার পক্ষে তারা।
বিশেষ করে একটি পদে নিয়োগ দেয়া হলেও আরেকটি পদে সময় নিয়ে নিয়োগ দেবেন এমন আলোচনাই শোনা গেছে।
স্থায়ী কমিটিতে জায়গা দেয়ার ক্ষেত্রে কয়েক নেতার ব্যাপারে জোর আপত্তি জানান তারেক রহমান। তবে তারেক রহমানের আপত্তিতে খালেদা জিয়া সম্মত কিনা সে বিষয়ে কিছুই বলেননি।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, কমিটি রদবদলের আগে এক নেতার এক পদ নীতি বাস্তবায়নে আরও কঠোর হওয়ার বিষয়ে একমত হন তারা।
এ ব্যাপারে কোনো ছাড় না দিতে তারেক রহমান চেয়ারপারসনকে অনুরোধ জানান। এটা আগে বাস্তবায়ন করে তারপর তৃণমূল পুনর্গঠনে জোর দিতে বলেন তিনি। এছাড়া দ্রুত সময়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি দেয়ার ব্যাপারেও তাদের মধ্যে কথা হয়।
এ বিষয়ে তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অনেকে তার নাম ভাঙিয়ে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। যারাই আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, চেয়ারপারসন যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত।
জানতে চাইলে সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি আহমেদ আলী মুকিব টেলিফোনে বলেন, চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হজ পালনেই ব্যস্ত ছিলেন। বর্তমানে তারা মদিনায় আছেন। হজের কারণে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ও করেননি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো ব্যাপারে তাদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করতে দেখিনি। তবে অবসর সময়ে হোটেলে তারা একত্রে বসে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেখানে রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে।