আন্তর্জাতিক ডেস্ক :কাশ্মিরে হামলার ঘটনা তদন্তে নেমে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে পাকিস্তানি চর খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এনআইএ-এর মতে, সেনা ঘাঁটির ভেতর থেকে সহযোগিতা না পেলে হামলাকারীরা ঘাঁটির মধ্যে প্রবেশ করতে পারত না। তাই সেই চর বা চরদের খুঁজে বেরার অভিযানে নেমেছেন তদন্তকারীরা।
উরির হামলার পুরো তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এনআইএ-কে। সোমবার একটি দল উরি সেনাঘাঁটিতে গিয়ে কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। নিহত জঙ্গিদের ডিএনএ নমুনা চেয়েছেন এনআইএ কর্মকর্তারা। কথা বলেছেন ঘাঁটিতে মোতায়েন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও।
জানুয়ারিতে পাঞ্জাবের পাঠানকোটে হামলা। এরপর রবিবার কাশ্মিরের উরিতে সেনা ঘাঁটিতে হামলায় ১৭ জন জওয়ান নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ভারতীয় সেনা কর্তৃপক্ষ। তাদের আশঙ্কা, নজরদারি থাকার পরও বারবার সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ছে হামলাকারীরা। তাদের হয়ত সাহায্য করা হচ্ছে স্থানীয়ভাবে।
উরির হামলার ক্ষেত্রে এএনআই কর্মকর্তাদের ধারণা, সেনাঘাঁটির ভেতর থেকেই তথ্য ও সহযোগিতা হামলাকারীরা। ফলে তারা অনায়াসে ঘাঁটিতে ঢুকে রীতিমতো সুবিধাজনক অবস্থান নিয়ে হামলা চালায়।
গোয়েন্দাদের মতে, উরি সেনাঘাঁটি থেকে নিয়ন্ত্রণরেখার দূরত্ব ছয় কিলোমিটার। আর বারামুলা শহর থেকে ওই ঘাঁটির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। নিয়ন্ত্রণরেখা বা বারামুলা, যে দিক দিয়েই হামলাকারীরা সেনাঘাঁটিতে প্রবেশ করুক না কেন তার আগে আগে বেশ কিছুটা দূরত্ব পেরিয়ে আসতে হয়েছে হামলাকারীদের। গোয়েন্দাদের প্রশ্ন, এ সময় কোথায় ছিল টহলদারি দল? কেন চ্যালেঞ্জ করা হয়নি হামলাকারীদের?
গোয়েন্দারা জানান, উরি সেনাঘাঁটির মূল প্রবেশপথটি নিয়ন্ত্রণরেখার দিকেই। ফলে স্বভাবতই এখানে পাহারা বেশি। হামলাকারীরা তাই বেছে নেয় পেছনের রাস্তা। ঘাঁটির পিছনের কোনও অংশ দিয়ে হামলাকারীরা প্রবেশ করেছিল তা এখন খুঁজে বের করা হচ্ছে। কিন্তু গোয়েন্দাদের কাছে মূল প্রশ্ন হলো, পেছনের অংশ দিয়ে প্রবেশ করলে কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না- এই তথ্যটা পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইকে জানিয়েছিল কে?
সেনা সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত ফিদায়েন জঙ্গিদের দাড়িগোঁফ কামানো থাকে। কিন্তু উরি ঘাঁটিতে হামলাকারীদেরমুখে এক দিনের না কামানো দাড়ি ছিল। তা দেখে গোয়েন্দারা মনে করছেন, জঙ্গিরা এক দিন আগে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে প্রবেশ করে। এখন সীমান্ত পেরিয়ে প্রথম যে লক্ষ্যবস্তু পাওয়া যাবে তার ওপরেই হামলা চালাতে জঙ্গিদের নির্দেশ দিয়েছে আইএসআই। সামরিক পরিভাষায় যে কৌশলের নাম ‘শ্যালো ইনফিলট্রেশন’।
প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন, বারামুলা-উরি এলাকায় আইএসআইয়ের স্লিপার সেল আছে। যাদের কথা স্থানীয় পুলিশের অজানা। সেনাঘাঁটি থাকায় ওই স্লিপার সেল তৈরি করা হয়েছিল। জঙ্গিদের রাতের আশ্রয় ও রাস্তা চিনিয়ে দেওয়ার দায়িত্বে ছিল ওই স্লিপার সেলের সদস্যরা। শুধু তাই নয়, ঘাঁটির ভেতরের সমস্ত খবরও সরবরাহ করেছে তারা।
গোয়েন্দারা জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে বহু স্থানীয় মানুষ উরি সেনাঘাঁটিতে আসেন। তারা সারাদিন সেখানে থাকেন। কাজ করেন। আবার রাতে ফিরে যান। নিত্যদিন আসা-যাওয়ার সুবাদে ঘাঁটির ভেতরের খবর সংগ্রহ করাটা তাই কঠিন নয়। বিশেষ করে কবে ঘাঁটিতে দায়িত্ব বদল হচ্ছে, ডিজেল কোথায় মজুত করে রাখা আছে, সেনারা কোথায় ঘুমোতে যান— এ সব তথ্য ওই স্থানীয় বাসিন্দারা সহজেই জানতে পারেন। তাদের একাংশও আইএসআইকে তথ্য সরবরাহ করে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। খোদ সেনাবাহিনীর মধ্যেই পাক সেনার চরচক্র আছে কি না তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। কারণ গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন সেনাঘাঁটি থেকে একাধিক পাকিস্তানি চরকে গ্রেফতার হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সেনাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় কোনও বাসিন্দার যোগাযোগ রয়েছে কি না জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
উল্লেখ্য, ১৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ভারি অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত একদল লোক কাশ্মিরের উরিতে লাইন অব কন্ট্রোলের নিকটে সামরিক বাহিনীর একটি প্রশাসনিক স্থাপনায় হামলায় চালায়। ওই হামলায় ১৭ সেনা সদস্য ও ৪ হামলাকারী নিহত হন। এখন পর্যন্ত কোনও সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই হামলার দায় স্বীকার করা হয়নি। তবে হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মোহাম্মদকেই সন্দেহ করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে চলতি বছরের প্রথমদিকে পাঞ্জাবের পাঠানপকোটে ভারতের বিমানঘাঁটিতে হামলার জন্যও ওই সশস্ত্র সংগঠনটিকে দায়ী করেছিল ভারত। জঙ্গি এ সংগঠন পাকিস্তানের সৃষ্টি এবং পাকিস্তানে থেকেই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে বলে ভারত দাবি করে আসছে।