আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উরি নিয়ে শীর্ষবৈঠক। অথচ রহস্যজনক ভাবে অনুপস্থিত বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
ক’দিন ধরে তাঁর অসুস্থতার খবর শিরোনামে। কিন্তু সুষমার ঘনিষ্ঠরাই জানাচ্ছেন, এখন সেই অসুস্থতাও নেই। আজ দিব্য তিনি সকাল থেকে নিজের দফতরে ছিলেন। ক’দিন আগে রোম থেকে ঘুরে এসেছেন। আর সামনের সপ্তাহেই নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে সন্ত্রাস প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান নিয়ে সরব হওয়ার ভার তাঁরই কাঁধে। এমন এক গুরুতর ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, যেখানে স্বাভাবিক ভাবেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর আছেন, এমনকী আছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও। তা হলে বিদেশমন্ত্রী নেই কেন?
সরকারের পক্ষ থেকে এর কোনও জবাবই দেওয়া হয়নি। সুষমার ঘনিষ্ঠদের জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বলছেন, খোঁজ নিন বিদেশ মন্ত্রকে। আর বিদেশ মন্ত্রক সকাল থেকে এই নিয়ে চুপ। ক’দিন আগে এক বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের কারণে মন্ত্রিসভার রদবদলে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে টুইট করে দিয়েছিলেন খোদ সুষমা। আগেভাগে বলে দিয়েছিলেন, ‘‘আমি মন্ত্রিসভার রদবদল বয়কট করেছি, সংবাদমাধ্যম যেন না ভাবে।’’ কিন্তু আজ সুষমাও ছিলেন চুপ। তবে সরকার নীরব থাকলেও বিরোধীরা থাকবে কেন? প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা তাই দুপুরেই প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে খোদ নরেন্দ্র মোদী উরির ঘটনার জন্য দায়ী, সেখানে কেন বিদেশ নীতি সংক্রান্ত বৈঠকে রহস্যজনক ভাবে গরহাজির রাখা হল সুষমা স্বরাজকে? কেনই বা তাঁকে এই বৈঠকে ডাকা হল না?
কংগ্রেসের প্রশ্ন, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক মধুর নয় বলে এমন একটি গুরুতর বিষয়েও দেশের বিদেশমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে অবজ্ঞা করা হবে? যেখানে অরুণ জেটলি-সহ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার কমিটির অন্য সদস্যেরা রয়েছেন, সেখানে বিদেশমন্ত্রীর পদকে উপেক্ষা করে কী বার্তা দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী? এত দিন তো পাকিস্তানের সঙ্গে যাবতীয় দহরম-মহরম করার সিদ্ধান্ত একাই নিয়েছেন তিনি! গোটা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়িয়ে বিদেশনীতি নিজেই স্থির করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
দিনভর এটি নিয়ে বিতর্ক দানা পাকায় রাতে বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্র অবশ্য দাবি করে, আসলে বিদেশমন্ত্রীকে অন্য দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে উরির বিষয়টি উত্থাপন করার ভার প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রীকেই। আমেরিকা, ব্রিটেন সমেত বিভিন্ন দেশ যে কারণে আজ বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে উরির ঘটনায় নিন্দা করেছে। বিদেশমন্ত্রী হিসেবে সুষমা স্বরাজ আজ এই দৌত্যের কাজেই ব্যস্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আগেই এ ব্যাপারে আলোচনা হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন তাতেও থামেনি। উরির ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তা ও কৌশলগত সব বৈঠকের ছবি বেনজির ভাবে প্রকাশ করছে মোদী সরকার। লক্ষ্য একটাই, উরির ঘটনায় সরকার যে সক্রিয়, সেই বার্তা গোটা দেশ ও বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এমন একটি বৈঠকে দেশের বিদেশমন্ত্রীকে বাদ রেখে কী বার্তা নরেন্দ্র মোদী দিতে চাইলেন, তার সদুত্তর যদিও মিলল না এখনও। সূত্র: আনন্দবাজার