স্পোর্টস ডেস্ক : ম্যাচ শেষ হতেই একটা স্টাম্প হাতে তুলে নিলেন। মাঠ ছেড়ে বেরোনোর পথে সতীর্থ-প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলালেন। সবার সঙ্গেই দু-একটা বাক্য বিনিময় হলো, অস্ট্রেলিয়া কোচ ড্যারেন লেম্যান তো আকর্ণ বিস্তৃত হাসিতে পিঠ চাপড়ে দিলেন। কিন্তু যাঁকে ঘিরে এত কিছু, সেই তিলকরত্নে দিলশানের মুখের হাসিটাই ম্লান। অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল, বিদায়টা একেবারেই মনমতো হয়নি। ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডেতে যে হারই সঙ্গী হলো শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানের।
ডাম্বুলাতে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে আজ শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে তিন ওয়ানডে শেষে এগিয়েও গেছে ২-১ ব্যবধানে।
কিন্তু সিরিজের সমীকরণ নয়, এই ম্যাচের সব আলো ছিল দিলশানকে ঘিরে। শুধু টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে খেলবেন বলেই বছর তিনেক আগে টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন। তিন বছর রঙিন পোশাকে ২২ গজে দাপটও দেখিয়েছেন তিলকরত্নে দিলশান, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষীও ওই তিনটি বছর। তবে আর নয়। আগেই জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে দিয়েই শেষ টানবেন ৫০ ওভারের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে। আজ ডাম্বুলায় সেটি টেনেও দিলেন দিলশান, বিদায় নিলেন ওয়ানডে থেকে।
তবে বিদায়ী ম্যাচে জয়টা আর পাওয়া হলো না। জর্জ বেইলির ফিফটির (৭০) সৌজন্যে ২২৭ রানের লক্ষ্যটা ২৪ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ উইকেটে ট্রাভিস হেডের (৩৬) সঙ্গে ৬২ রান, এরপর পঞ্চম উইকেটে ওয়েডের (৪২) সঙ্গেও ৮১ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে আরও বড় জয়ের স্বপ্নই দেখাচ্ছিলেন বেইলি। কিন্তু ২০৪ রানে বেইলি আউট হওয়ার পর ১৮ রানের মধ্যে আরও দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। নাটকীয় কিছুর স্বপ্ন হয়তো দেখছিল শ্রীলঙ্কা, কিন্তু জাম্পা ও হ্যাস্টিংস মিলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অস্ট্রেলিয়াকে। শেষ ম্যাচে তাই আর জয় পাওয়া হলো না দিলশানের।
মুরালিধরন-রানাতুঙ্গাদের মতো কিংবদন্তি তিনি নন। সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনেদের মতো আলাদা একটি যুগের প্রতিনিধিও তাঁকে বলা যাবে না। তবু শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে তিলকরত্নে দিলশান অনন্য এক চরিত্র, যেন ‘ত্রিকালদর্শী’। প্রায় চল্লিশে পা দেওয়া সেই দিলশানই কাল বিদায় বলে দিলেন ওয়ানডেকে। সতীর্থদের ‘গার্ড অব অনারের’ মধ্য দিয়ে মাঠে নেমে শেষ ইনিংসে করেছেন ৪২ রান। ঠিক ‘দিলশানীয়’ আক্রমণাত্মক ইনিংস নয়, বল খেলেছেন ৬৫টি। ছিল না নামের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া ‘দিলস্কুপ’ও। তবু ইনিংসটি এক অর্থে হয়ে থাকল তাঁর লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। ২৩ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সেঞ্চুরিয়ান চান্ডিমালের সঙ্গে মিলে ইনিংস গড়েছেন। আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে ব্যাট উঁচিয়ে দর্শকদের অভিবাদন জানিয়েছেন, পুরো গ্যালারিও উঠে দাঁড়িয়ে করতালিতে ধন্যবাদ জানিয়েছে তাঁকে। দিলশান আউট হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাকে টেনে নিয়ে গেছেন চান্ডিমাল, করেছেন ১০২ রান। তবে শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হওয়ায় ২২৬ রানেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ক্রিকইনফো।