আন্তর্জাতিক ডেস্ক :২০১৫ সালে নেপালে একাধিক ভূমিকম্প হয়, যাতে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন ২০ হাজারের বেশি৷
ভূমিকম্পের মাত্র ক’দিন আগে জার্মান ছাত্র ইয়ান ভারজাভা তাঁর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে নেপালে গিয়েছিলেন৷ সবাই আর্কিটেকচারের ছাত্র৷ তারা সেখানে একটি স্কুল তৈরি করেছিলেন৷ জার্মানিতে ফিরে ইয়ান শুনলেন নেপালে ভূমিকম্পের কথা৷ শুনলেন, নতুন স্কুলটা দাঁড়িয়ে আছে বটে, কিন্তু বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে৷তিনি বলেন, তখন আমার মাথায় এলো একটি সহজ ধরনের বাড়ি বানানোর কথা, যাতে পাহাড়ি অঞ্চলের অতি গরীব গ্রামগুলোতেও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে৷”
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইয়ান তাঁর ‘ভূমিকম্পপ্রতিরোধী’ বাড়ির নকশা করে ফেলেন – এমন এক বাড়ি, যা স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করে সহজেই তৈরি করা যাবে৷ তার জন্য কংক্রিট, স্ক্রু-ড্রাইভার কিংবা বোরিং মেশিনের দরকার পড়বে না।
ইয়ান ও তাঁর বন্ধুরা মাত্র নয় দিনের মধ্যে একটি ভূমিকম্পপ্রতিরোধী বাড়ি তৈরি করে ফেলেন। বড় ধরনের ভূকম্পনেও বাড়িটা ধসে পড়বে না। কেননা তার একক অংশগুলো হালকা আর পরস্পরকে ধরে রাখছে৷
ইয়ান ভারজাভা জানান, বাড়ির একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই ‘বেভেল’ বা ঢালু করা কোণগুলো৷ এর ফলে ভূমিকম্পের শক্তি বাড়ির দেয়ালগুলো দিয়ে ঘুরে যায়৷ দেয়ালটা এদিকে ঠেলে, আর পরের দেয়ালটা সেই শক্তি শুষে নেয়৷ এভাবে ভূমিকম্পের শক্তি ভাগাভাগি হয়ে যায়৷ সাধারণ সমকোণ দেয়ালগুলোতে একটি দেয়াল তার অক্ষ থেকে সরে যায়৷ এছাড়া ছাদটা দেয়ালের ওপর থাকলেও, দেয়ালের সঙ্গে জোড়া নেই – বরং দু’টোর ভিতরে একটা ফাঁক রয়েছে৷ কাজেই দেয়ালের একাংশ ভেঙে পড়লেও, ছাদটা ভেঙে পড়ে কাউকে চাপা দেবে না৷
দেয়ালের ইটগুলো একবার সোজা, একবার বাঁকা করে বসানো, যা শুধু একদিকে মুখ করে বসানো ইটের দেয়ালের চেয়ে অনেক বেশি স্থায়ী, নেপালে সাধারণত যা করা হয়৷
ইয়ান এ নিয়ে একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি করেছেন। সেটি তিনি ইন্টারনেটে দেবেন৷ তখন অন্যরাও এরকম বাড়ি বানাতে পারবেন৷ তবে আইডিয়াটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তরুণ স্থপতি ও আবিষ্কারকের সাংগঠনিক ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন৷