নিজস্ব প্রতিবেদক : এক সকালে স্টেশন রোড এলাকায় প্রাইভেট পড়া শেষে রেলস্টেশনে হাজির হয় সরকারি অন্নদা স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফনান আলম সাকিব। তখন কয়েকজন ছেলে-মেয়ের ছোটাছোটি চোখে পড়ে। গায়ের কাপড়-চোপড়, উসকো- খোসকো চুল দেখে মনে হলো ওরা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু। অনেকের বাবা নেই, মা নেই, নেই কোনো আপনজন। সমাজের আটদশজন সাধারণ ছেলে-মেয়েদের মতো বেড়ে উঠে না ওরা। শহরের অলিগলি, ফুটপাত, স্টেশন আর পার্কের বেঞ্চিতে রাতের তারাগুণে সময় পার করে দেয়। ভাবতে থাকে সাকিব। এসব শিশুদের নিয়ে কাজ করা পরিকল্পনার ছক আঁকে।
পরদিন ১২ নভেম্বর। সেই পরিকল্পনার কথা বলা হয় ব্রাক্ষণবাড়িয়া সরকারি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিরুল ইসলাম শান্ত এবং সরকারি অন্নদা স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসিফ রহমান মোল্লা’র সঙ্গে। ওরাও সম্মত হলেন কাজ করবেন এসব শিশুদের নিয়ে। প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘আলোর মেলা’ নামে একটি সংগঠনের। এ সংগঠনের উদ্যোগে পরিচালিত হয় ‘পথ তারার ইশকুল’।
সেই থেকেই শুরু। একেএকে আলোর মেলা সংগঠনে যোগ দেন শহরের বিভিন্ন স্কুল- কলেজের ১৯জন শিক্ষার্থী। তারা পড়েন শহরের সাবেরা মডেল স্কুল, অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ব্রাক্ষণবাড়িয়া স্কুল, ব্রাক্ষণবাড়িয়া সরকারি কলেজ এবং আব্দুল মোনেম কলেজে।
প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে ১০টা পর্যন্ত ক্লাশ হয় শহরের রেলস্টেশন আর টেঙ্কের পাড়ে অবস্থিত লোকনাথ পাড়া এলাকায়। এ স্কুলে শেখানো হয় তারা পড়ান প্রাথমিকের পড়াগুলো। যেমন, স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, গণিতের প্রাথমিক গণনা, নামতা পাঠ, বাংলা এবং ইংরেজি বানান, বাংলা এবং ইংরেজি সনের বারো মাসের নাম। ফুল, ফল, পাখি, নদী ও বিভিন্ন জেলার নাম। দেশ সম্পর্কে জানার খুটিনাটি অনেককিছু। নৈতিক শিক্ষা যেমন- সালাম দেওয়া, বড়দের সমামন করা। কবিতা ছড়া পড়ানো, আঁকাআকির ক্লাস হয় সপ্তাহে একদিন।
পড়ালেখার পাশাপাশি এসব শিশুদের দেওয়া হয় ঈদের কাপড়, শীতের কাপড়। এছাড়াও পথ শিশুদের নিয়ে ফল উৎসবের আয়োজন করা হয়। রোজার মাস এলে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। ঈদ এলে আয়োজন করা হয় মেদেী উৎসবের। এছাড়াও একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস এলে এসব শিশুদের আলোচনা করা হয়। ওদের জানিয়ে দেওয়া হয় মাতৃভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। স্বাধীণতা সংগ্রামের ইতিহাস।
এর জন্য প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। একটি বাজেটকে সামনে রেখে তোলায় হয় এসব চাঁদা। আর সেই টাকাই এসব কাজে ব্যয় করা হয়।
আলোর মেলা সংগঠনের সভাপতি আফনান আলম সাকিব বলেন, আমাদের ইচ্ছে পড়াশোনার বাইরে যে সময়টুকু থাকে সেটা তাদের জন্য ব্যয় করা। আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা একদিন সার্থকতা আসবে।