১লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং, বৃহস্পতিবার ১৭ই ভাদ্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ


পাসপোর্ট অফিসে দিনে দুই লাখ টাকার ঘুষ আদায়!


Amaderbrahmanbaria.com : - ২৯.০৮.২০১৬

 
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি গ্রাহক হয়রানি ও ভোগান্তির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অফিসের নিচে হেল্প ডেস্ক থেকে শুরু করে তিন তলায় সহকারী উপ-পরিচালকের অফিস পর্যন্ত ঘুষের টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তি পোহাতে হয় পাসপোর্ট গ্রহিতাদের।

সোমবার হয়রানি ও ঘুষের অভিযোগে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে র্যা ব-৬ পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালায়। এ ঘটনায় আটক হয় ১১ দালাল। তবে ঘুষখোর কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী আটক হয়নি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এক বছর আগে ফাইল প্রতি আটশ’ টাকা করে ঘুষ আদায় করা হতো। বর্তমান সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই যোগদানের পর থেকে নেয়া হচ্ছে নয়শ’ টাকা করে। এ হিসেবে দিনে আনুমানিক দুই লাখ টাকা করে ঘুষ আদায় হচ্ছে। অফিসের আলপিন নাহার নামে এক মহিলা ঘুষের টাকা আদায় করেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ রবিবার ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকে পাসপোর্টের বিপরীতে ২১৯ জন টাকা জমা দেন। যার প্রতিটি ফাইল থেকে নয়শ’ টাকা করে মোট এক লাখ ৯৭ হাজার একশ’ টাকা ঘুষ আদায় করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে বর্তমান সহকারী উপ-পরিচালকের সময় (১৪ জুলাই ২০১৬ পর্যন্ত) পাসপোর্টের জন্য ২০ হাজার ৯০১ টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৬৮৪ টি পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়।

অফিসের বিশেষ একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ঘুষের টাকা ভাগাভাগি হয়। এর মধ্যে সহকারী উপ-পরিচালক পান ৬০% ও বাকী ৪০% টাকা সাধারণ স্টাফরা ভাগ করে নেন। কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্ব পালনকালে আব্দুল মোত্তালেব সরকার রহিঙ্গা শরণার্থীদের পাসপোর্ট দিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সরকারের উপর মহলকে জানানো হলে তাকে বদলি করা হয়। কিন্তু তার খুটির জোর থাকায় কোনো শাস্তি হয় না বলে অভিযোগ।

তবে ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, কে কোথায় ঘুষ নেন তা আমার অজানা। এদিকে অভিযোগ উঠেছে উপ-পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের ঘুষ আদায় ও যৌন হয়রানিকে কেন্দ্র করে গত বুধবার ঘটে গেছে তুলকালাম কাণ্ড। ওই দিন হয়রানি, উত্ত্যক্তসহ যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তদন্ত করতে ঝিনাইদহে আসেন প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সংস্থাপন) নাসরিন পারভিন নুপুর। তিনি ঢাকা ফিরে যাওয়ার পর থেকেই সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব অন্যত্র বদলি হচ্ছেন এমন খবর চাউর হয়ে পড়ে।

এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী এলাকার মাসুদ নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তিনি অনলাইনে ফরম পূরণ করে জমা দিতে গেলে নানা রকম ভুল ধরে ফাইল ফিরিয়ে দেন কাউন্টারে বসে থাকা অফিসের কর্মচারী গৌতম কুমার সাহা। পুলিশ রিপোর্ট ভাল আসার পরও মামলা ও বয়স নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ফিরিয়ে দেয়া হয় মাসুদকে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, পাঁচ দিন অফিসে ঘোরার পর দালালদের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে ফিংগারিং ও ছবি ওঠার ব্যবস্থা হয়। কোটচাঁদপুরের ধোপাবিলা গ্রামের শিমুল হোসেন, শান্তি মিয়া, বিল্লাল হোসেন, সদর উপজেলার হাজরা গ্রামের বিপুল হোসেনও মোবাইলে তাদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার কথা স্বীকার করেন। তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট প্রতি নয়শ’ টাকা করে ঘুষ নেয়া হয়েছে বলে জানান।

মহেশপুরের মানিকদিহি গ্রামের বকুল জানান, তার ভাগ্নেকে পাসপোর্ট করতে মোট ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ২০১৬ সালের ৩১ মে তারিখে ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার কমল কুমারের কাছ থেকে ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট করার নামে ২১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। পাসপোর্ট

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম হচ্ছে একদিনেই পাসপোর্ট গ্রহিতাদের সব কাজ সারতে হবে। কিন্তু ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ঘুষের টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘুরিয়ে চরমভাবে হয়রানি করা হয়।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আউট সোর্সিং ও সরকারি ভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অসাধ্য কাজ সাধন করে থাকে। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে কামাল হোসেন, মাসুদ হাসানসহ অনেকে।

এদিকে ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দালাল ও হয়রানিমুক্ত দাবির একদিন পর র্যা ব-৬ একজন ম্যজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ১১ দালালকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেককে একমাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।

আটক দালালরা হচ্ছে- লাল চাঁদ, দিপংকর, স্বপন কুমার, শামছুল, আনোয়ার, সাধন, তাজুল, সজল, জিল্লুর রহমান, টরি ও জয়দেব কুমার।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার জানান, ‘কে, কীভাবে টাকা নিচ্ছে আমার জানা নেই। যারা টাকা দিচ্ছেন তাদের আমার কাছে আসতে বলেন।’ এসময় তিনি নিজের অফিস দালাল ও হয়রানিমুক্ত দাবি করে বক্তব্য দেয়ার একদিন পর ১১ দালাল আটকের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদকঃ জাবেদ রহিম বিজন
চেয়ারম্যান : আলহাজ্ব নুরুজ্জামান
ঠিকানা : ৬০৩ ফুলবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563


close