স্বাস্থ্য ডেস্ক : সারা বছর বাড়িতে লেগেই থাকে অসুখ-বিসুখ। সবরকম রোগের জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়া যায় না। দেখা যায় ছোটখাটো রোগের চিকিৎসা নিজেরাই করে ফেলছি এটাসেটা দিয়ে। নানি-দাদীর আমল থেকে এসব আমরা শিখে এসেছি। কিন্তু এসব ঘরোয়া প্রতিকার আসলে কতটা নিরাপদ আর কতটাই বা যুক্তিযুক্তই? দেখা যায়, বিজ্ঞান আসলেই কিছু কিছু ঘরোয়া প্রতিকার সমর্থন করে। চলুন দেখে নিই বিজ্ঞান সমর্থিত সেসব ঘরোয়া প্রতিকার যারা আসলেই কার্যকরী।
১) ব্যাঙ:-
প্রথম যে প্রতিকারের কথা বলবো তা আমাদের দেশে প্রচলিত নয়, বরং তা একটি রাশিয়ান ধারণা, যে দুধের মাঝে ব্যাঙ রাখলে দুধ টকে যাবে না। শুনেই অনেকে ছিঃ ছিঃ করছেন বটে, কিন্তু গবেষকেরা এই উটকো প্রতিকারের পক্ষেই কথা বলেছেন!
২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ব্যাঙ নিজের ত্বক রক্ষা করার জন্য এক ধরণের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল নিঃসরণ করে। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের জীবাণু থেকে এভাবে সে নিজেকে রক্ষা করে। রাশিয়ান ব্রাউন ফ্রগ এমন ২১ টি পদার্থ নিঃসরণ করে যার অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কোনো ধরণের উপকারী বৈশিষ্ট্য আছে। পরবর্তী গবেষণায় ব্যাঙের ত্বকে এমন ৭৬ টি পদার্থ পাওয়া যায় যা জীবাণু দূরে রাখে। এসব পদার্থ দুধ টকে যাওয়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে বাধা দিতে পারে বলে মনে করেন গবেষকেরা।
২) মধু
প্রাচীন মিশরীয়, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান এবং আফ্রিকান সংস্কৃতিতে আলসার, পোড়া ক্ষত, অঙ্গ ব্যবচ্ছেদসহ বেশকিছু চিকিৎসায় ব্যবহার হতো মধু। এখনও আমরা ছোটখাটো অসুস্থতায় এক চামচ মধু মিশিয়ে নিই চায়ের সাথে। এতে ডাক্তারদের সমর্থনও আছে শতভাগ। যেমন বাচ্চাদের কাশি হলে ঘুমাতে যাবার ৩০ মিনিট আগে অল্প করে মধু খাইয়ে দেওয়া ভালো। এতে ঘন ঘন কাশি হবার সমস্যা কমে যাবে।
৩) রসুন
মধু মতো রসুনকেও আমরা ব্যবহার করি ঠাণ্ডা কমানোর কাজে। এছাড়া ব্যথা বেদনায় রসুন দিয়ে তেল গরম করে তা দিয়ে মালিশ করা হয়। আমেরিকায় মনে করা হতো তা হুপিং কফ সারাতে সক্ষম। হুপিং কফের মতো এত বড় রোগ সারাতে সক্ষম না হলেও এর অন্যান্য উপকারিতা আছে। এর আছে অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। টাটকা রসুন থেঁতো করলে এর থেকে পাওয়া যায় অ্যালিসিন, যার সংস্পর্শে এলে মারা যায় জীবাণু।
৪) পিঁয়াজ
ধারণা করা হতো পিঁয়াজ ফোসকা এবং ত্বকের কিছু রোগ সারাতে সক্ষম। তা সঠিক না হলেও এতে থাকা ভিটামিন সি, সালফিউরিক যৌগ, ফ্ল্যাভনয়েড এবং ফাইটোকেমিক্যাল অন্যান্য উপকারে আসে। ফাইটোকেমিক্যাল হলো এমন সব জৈব যৌগ যারা ক্যান্সার, হৃদরোগ, অস্টিওপোরোসিস এবং ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম।
৫) আদা
গবেষণায় দেখা যায়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আদা বমিভাব কমাতে সক্ষম। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই আদা ব্যবহার করি ঠাণ্ডা, পেটব্যথা এবং পিরিয়ড চলাকালীন ব্যথা কমাতে। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা যায় কেমোথেরাপির পর বমি ভাব কমাতে পারে আদা। এছাড়াও অস্ত্রোপচারের আগে আদা খাওয়া হলে তা অস্ত্রোপচারের ব্যথা কমাতে সক্ষম। ২০১২ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, কোলনের প্রদাহ কমাতে এবং কলোরেক্টাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমাতে কাজ করে আদা।