g সরাইলের ১৮ চিকিৎসক এখন কক্সবাজারে “চাঁদা দাও, নইলে ৬ মাস হাসপাতাল নিষিদ্ধ” | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ২রা আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সরাইলের ১৮ চিকিৎসক এখন কক্সবাজারে “চাঁদা দাও, নইলে ৬ মাস হাসপাতাল নিষিদ্ধ”

AmaderBrahmanbaria.COM
অক্টোবর ২২, ২০১৫

---

সরাইল প্রতিনিধিঃ “চাঁদা দাও, নইলে আগামী ছয় মাস হাসপাতাল নিষিদ্ধ”- কক্সবাজার ভ্রমনের টাকা আদায় করতে স্থানীয় ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের উদ্যেশ্যে এমন হুশিয়ারী উচ্চারন করলেন সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. নোমান মিয়া। চাঁদার পরিমান সর্বনিম্ন ৩০ হাজার আর সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। ১০টি কোম্পানীর প্রতিনিধির কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে এ চাঁদা। ৩০ হাজার করে দিয়েছে ৬টি কোম্পানী। ৫০ ও ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে ২টি কোম্পানী। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত মার্কেটিং ও রয়েছে এ বাজেটে। তবে চাঁদা দাতা কারো ভ্রমনের সুযোগ নেই। তাই তারা ঘুরে ঘুরে হ্যাঁ হুতাশ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী ও ঔষধ কোম্পানীর স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৮ জন চিকিৎসক গত বুধবার গভীর রাতে রওয়ানা করেছেন কক্সবাজার ভ্রমনে। বিলাস বহুল শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সাকুরা পরিবহনের একটি কোচে করে চিকিৎসকদের ভ্রমন সঙ্গী পরিবার, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি ও শ্যালক শালিকাসহ ৪০ জন। হাসপাতাল এখন একেবারেই ফাঁকা। তারা ঘুরে আসবেন সেন্টমার্টিনও। সেখানে অবস্থান করবেন চারদিন। রাত্রি যাপন করবেন আবাসিক হোটেলে। থাকা খাওয়া খরচ অনেক। চিকিৎসকরা এ খরচ ঔষধ কোম্পানীর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। চাঁদা আদায়ের দায়িত্ব পালন করেন ডা. মো. নোমান মিয়া।  প্রথম সারির ১২টি কোম্পানীকে টার্গেট করে ভ্রমন বিনোদনের চাঁদা উত্তোলন করা হয়। চাঁদা আদায়ে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয় এমআর (মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ) দের। বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রতিনিধিরা ৫০ হাজার , ‘বি’ ক্যাটাগরি ৪০ হাজার ও ‘সি’ ক্যাটাগরি বা নীচের সারিতে থাকা প্রতিনিধিরা ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। যারা টাকা দিবে না, তারা আগামী ছয় মাস হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবে না। আবার চাঁদা দাতা কেউ ভ্রমনে যাওয়ার দাবী তুলতে পারবে না। চাঁদা দাতাদের আগামী ছয় মাস দেয়া হবে বিশেষ সুবিধা। ভাল মানের কোম্পানীর এমআর’দের বেতন ভাল। তাই চাকুরী বাঁচানোর জন্য ইচ্ছা না থাকা সত্বেও দ্রুত জমা দিয়েছেন চাঁদার টাকা। টাকার বদলে ৪০টি গেঞ্জী ও ৪০টি ক্যাপ দিতে হয়েছে এক কোম্পনীকে। সেখানে খেলার জন্য একটি ফুটবল আদায় করেছেন ছোট ১টি কোম্পানীর প্রতিনিধি থেকে। ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির কোম্পানীর প্রতিনিধিদের আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ার উপক্রম হয়। তাদেরকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখা গেছে। চাঁদা দেয়ার ভয়ে একাধিক এম আর এক সপ্তাহ হাসপাতালে প্রবেশ করেননি। কারন তাদের বেতনই ১০-১৫ হাজার টাকা। তারা ৩০/৪০ হাজার টাকা কোথায় থেকে দিবে? তারপরও চাকুরী বাঁচানোর জন্য ঋণ করে চাঁদা দিয়েছে কেউ কেউ। চাঁদার টাকা হাতে পেয়ে আবাসিক চিকিৎসক কোম্পানীর ব্যবস্থাপকদের ধন্যবাদ পত্রও দিয়েছেন। পত্রে ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। চাঁদা বুঝে পেয়ে লিখিত টোকেন ও দিয়েছেন অনেককে। চাঁদা না দেওয়ায় হাসপাতালের সাবেক এক চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে ডা. নোমান মিয়া এস কে এফ- এর ঔষধ লিখতে নিষেধ করার বিষয়টি এখন চাউর রয়েছে গোটা সরাইলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঔষধ কোম্পানীর স্থানীয় একাধিক প্রতিনিধি ক্ষোভের সাথে বলেন, সম্প্রতি হাসপাতালের একটি দেওয়াল নির্মাণে দুটি কোম্পানীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্যাররা (চিকিৎসকরা) তো সচেতন। উনাদের লেখার উপর আমাদের চাকুরীটা নির্ভর করে। তাই বলে এভাবে চেপে ধরা ঠিক হয়নি। কক্সবাজারে গিয়ে উনাদের কাপড় ছোপড় ও আমাদের টাকায় ক্রয় করতে হবে? আল্লাহ তো উনাদের কম দেননি। সেখানে যেয়ে গেঞ্জী পড়বেন, সেটাও দিতে হবে ঔষধ কোম্পানীকে। আবার কোম্পানীর নাম লিখা যাবে না। এ কেমন চতুরতা! দাবী অনুযায়ী চাঁদা দিতে না পারা অনেক এমআরকে চিন্তাযুক্ত দেখা যাচ্ছে। কারন কক্সবাজার ভ্রমন শেষ করে আসার পর হয়ত স্যাররা ওই কোম্পানীর ঔষধ লিখবেন না। এমনকি ঘোষনানুযায়ী আগামী ছয় মাস হাসপাতালে প্রবেশ নিষিদ্ধ হতে পারে। এ ব্যপারে বক্তব্য নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. হাসিনা আখতার বেগম ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. নোমান মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 
জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. হাসিনা আখতার মুঠোফোনে বলেন, তাদের কক্সবাজার যাওয়ার বিষয়টি আমি জানি। তবে এম আরদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। অফিস খোলার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখব। চাঁদা নেয়ার বিষয়টি অবশ্যই নীতি বহির্ভূত। 

 

এ জাতীয় আরও খবর