বুধবার, ১৪ই মার্চ, ২০১৮ ইং ৩০শে ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে রাঙামাটি

ডেস্ক রিপোর্ট : পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে পর্যটন নগরী রাঙামাটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে এ পর্যটন নগরী। পর্যটকদের পদচারণায় হয়ে উঠেছে মুখর। ঈদের পরের দিন থেকে সপ্তাহজুড়ে বুকিং রয়েছে সরকারি পর্যটন মোটেলসহ শহরের প্রায় সবগুলো আবাসিক হোটেল, রেস্ট হাউজে। বুকিং থাকবে আগামী ২৬ জুলাই পর্যন্ত।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পর্যটকদের আগমনে হঠাৎ জমজমাট হয়ে ওঠে শহরে পর্যটন হোটেল, মোটেল, রেস্তোঁরা ও নৌ-পরিবহন ব্যবসা। অন্যদিকে ঈদ উৎসব ও পর্যটকদের আগমন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোটা শহরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রেখেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উৎসবে বরাবরের মতো এবারও ঈদ অবকাশে পর্যটন শহর রাঙামাটিতে প্রচুর পর্যটকের সাড়া মিলেছে। সরকারি পর্যটন মোটেলসহ শহরের প্রায় আবাসিক হোটেল, মোটেলে সপ্তাহব্যাপী বুকিং রয়ে গেছে। পর্যটন মোটেলে কোথাও রুম খালি নেই। সরকারি সার্কিট ও রেস্ট হাউসগুলোতেও রয়েছে অগ্রিম বুকিং।

রাঙামাটি সরকারি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, আগামী ১৯-২৪ জুলাই মোটেলের সবগুলো কক্ষ অগ্রিম বুকিং করা রয়েছে। আগত পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসা ঝুলন্ত সেতুটি। সেতুটি মজবুত রাখতে নতুন পাটাতন পাল্টানো হয়েছে। এখন সুবলং ঝরণাটি জীবিত। সেখানে পানি রয়েছে। সতেজ হয়েছে প্রকৃতি। পানিতে পূর্ণ কাপ্তাই লেক। পর্যটকরা সরাসরি মোটেল থেকে নৌযান নিয়ে কাপ্তাই লেকে নৌ-ভ্রমণসহ সুবলং ঝরণাটি উপভোগ করে আসছেন।

এদিকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলগুলো থেকে পার্বত্যাঞ্চলে ঈদ উৎসব অনেকটা ব্যতিক্রমী। উৎসবে বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাকার হয়ে মেতে ওঠেন পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীসহ অন্য সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সম্প্রদায়ের নর-নারী। এতে ঈদ উৎসব পরিণত হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলায়। জাতিতে জাতিতে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে ঘটে মহামিলন। প্রতি বছরের মতো এবার ঈদ উপলক্ষে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে গোটা পর্যটন নগরী রাঙামাটি।

রাঙামাটি সরকারি পর্যটন ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, প্রতি বছর ঈদ উৎসব ঘিরে গোটা কমপ্লেক্স উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। এবার ঈদেও দলে দলে আপনজন ও পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটন মোটেলে ছুটে যাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন ও অগণিত পর্যটক।

তিনি জানান, ঈদের পরদিন থেকে সপ্তাহজুড়ে আবাসিক মোটেলে সবগুলো কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে ভিড় জমছে অগণিত মানুষের। ব্রিজের প্রবেশমূল্য দশ টাকা।

কমপ্লেক্সে নির্মিত ৫১ কক্ষবিশিষ্ট তিন তারকা মানের আন্তর্জাতিক নতুন মোটেলটি গত বছর থেকে চালু করা হয়েছে। মোটেলে সুইমিংপুল নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া আছে। সুইমিংপুল নির্মিত হলে পাঁচ তারকা মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক মোটেল হবে এটি। এছাড়া আগের মোটেলে কক্ষ রয়েছে ৩৫টি। ভাড়া নতুন, পুরাতন মোটেল উভয় ক্ষেত্রে ডাবল (এসি) ৩ হাজার টাকা, নন এসি (ডাবল) ১ হাজার ৮শ, সেমি ডাবল (এসি) ১ হাজার ৬শ। কনফারেন্স রুম দৈনিক দশ হাজার টাকা। এছাড়া কটেজ (এসি) ৬ হাজার টাকা এবং নন এসি ৩ হাজার ২শ টাকা।

রাঙামাটি শহরে সরকারি পর্যটন কমপ্লেক্সের মোটেল ছাড়াও রয়েছে অনেকগুলো ভালোমানের আবাসিক হোটেল। সেগুলোর মধ্যে হোটেল সুফিয়া, গ্রিন ক্যাসেল, আল মোবা, নীডস হিলভিউ, প্রিন্স উল্লেখযোগ্য। এ সকল আবাসিক হোটেলে এবার ঈদ অবকাশে আসা অতিথিদের আগমনে ভিড় রয়ে গেছে।

হোটেল প্রিন্সের মালিক ও রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. নেছার উদ্দিন বলেন, অতিথিদের আগমনে তার হোটেলের সবগুলো কক্ষ ১৭-২৬ জুলাই অগ্রিম বুকিং হয়ে রয়েছে। তার আগে হোটেলে কোনো রুম খালি নেই।

নৈসর্গিক রাঙামাটি অবলোকনে আসা পর্যটকরা সরকারি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্স, বেসরকারি পর্যটন স্পট টুকটুক ইকোভিলেজ, পেদাটিংটিং, সুবলং ঝরণা স্পট, বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ, চাকমা রাজার বাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় যাদুঘর, সাপছড়ি স্পট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভাস্কর্য স্পটসহ অসংখ্য দর্শনীয় ও উপভোগ্য স্থানগুলো ঘুরে যাচ্ছেন।

প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে যে কোনো স্থান থেকে সরাসরি ঘুরে আসা যায় পর্যটন শহর রাঙামাটি। এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙামাটি বিলাসবহুল পরিবহন সার্ভিস এস আলম, শ্যামলী, ইউনিক, ডলফিন ইত্যাদি চালু আছে। চট্টগ্রাম থেকে বিআরটিসি, পাহাড়িকাসহ বিভিন্ন বাস সার্ভিসে সরাসরি খুব সহজে যাওয়া যায় রাঙামাটি।     

Print Friendly, PDF & Email