সোমবার, ২৬শে মার্চ, ২০১৮ ইং ১২ই চৈত্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বন্ধ ছাড়া পাবলিক পরীক্ষায় পদ্ধতির পরিবর্তন হবে।

Nurul-islam 2.7.14সরকারি বন্ধ ছাড়া পাবলিক পরীক্ষার মধ্যে বিরতি (গ্যাপ) থাকবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

এইচএসসিতে প্রশ্নফাঁসের তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আগের মতো আর পরীক্ষা হবে না। দেড় মাস ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন হবে। তবে কতটুকু সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারব সেটা দেখার বিষয়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকাল-বিকাল পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের আগেও এভাবে পরীক্ষা হয়েছে। এখন তিনদিন গ্যাপ না দিয়ে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। আগামীতে আমরা সে অবস্থায় যাই জানি না তবে সরকারি বন্ধ ছাড়া পরীক্ষার মধ্যে কোনো গ্যাপ থাকবে না।’

‘আমি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের এখনই প্রস্তুতি নিতে বলবো। আশা করি, তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন ও হঠাৎ করে কোনো বক্তব্য দেবেন না। আমরা সকলের সহযোগিতায় নিশ্চিত নিরাপদ পরীক্ষা নিতে চাই’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ফাঁস রোধে তদন্ত প্রতিবেদনের সুনির্দিষ্ট চারটি সুপারিশ ও সাধারণ সুপারিশগুলো সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়। নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমরা কমিটির সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেব। এগুলো নিয়ে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলব, ওয়ার্কসপ করব।’

তিনি বলেন, ‘যারা প্রশ্ন পেয়েছেন তারা কোথা থেকে পেয়েছেন তা জানাননি তদন্ত কমিটি। কোনো সূত্র দিয়ে তারা সহযোগিতা করেননি। ড. জাফর ইকবালও প্রশ্ন পাওয়ার সূত্রের কথা জানাননি। ফরিদপুরে প্রশ্নপত্রসহ একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যক্তির মাধ্যমেই প্রশ্ন ফাঁসের উৎস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

নাহিদ বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসকারীদের খুঁজে বের করতে এমন কোন কাজ নেই যা আমরা করব না। এমন কোনো শক্তি নেই যা আমরা ব্যবহার করবো না।’

গত সাড়ে ৫ বছরে পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ওঠেনি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘এবারই এইচএসসিতে প্রথম প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে।’ এইচএসসিতে দু’টি বিষয়ে প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করে পরীক্ষা নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এইচএসসিতে ৫৫টি বিষয়ের দুই সেট করে ১১০টি প্রশ্ন ছাপাতে হয়েছে। তত্ত্বীয় বিষয়ে এক কোটি ২৩ হাজার ৫৮০টি প্রশ্নপত্র, ব্যবহারিকের প্রশ্নপত্র ১৩ লাখ ৯০ হাজার। ১০ হাজারেরও বেশি জায়গায় এ প্রশ্নপত্র পাঠাতে হয়েছে। এত প্রশ্নপত্র পাঠানো, সংরক্ষণ খুবই চ্যালেঞ্জিং ও জটিল কাজ।’

গত রবিবার শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) সোহরাব হোসাইন।

প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় গত ১০ এপ্রিল ঢাকা বোর্ডে এইচএসসি ও ডিআইবিএসের (ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিস) ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

এ বিষয়ে ১০ এপ্রিলই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষামন্ত্রণালয়। সাত সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় সোহরাব হোসাইনকে।

কমিটিতে সদস্য ছিলেন- জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন করে যুগ্মসচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (কলেজ) ও যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও কলেজ) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক (বিদ্যালয়)।

কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। পরে এ কমিটি দুই দফা সময় বাড়িয়ে নেয়।

গত ৩ এপ্রিল দেশব্যাপী একযোগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাসচিব মোহাম্মদ সাদিক, তদন্ত কমিটির সদস্যসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

Print Friendly, PDF & Email