সেই ছাত্রী বর্ণনা দিলেন গায়ে আগুন দেওয়ার
নিজস্ব প্রতিবেদক : ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় পরীক্ষা কেন্দ্রে গতকাল শনিবার সকালে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের গায়ে কিভাবে আগুন দেওয়া হয়েছিল, সেই বর্ণনা দিয়েছে সে নিজেই। অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়ার সময় সে ওই ঘটনার বর্ণনা দেয়। ওই আগুনে নুসরাতের শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
নুসরাতের সেই বর্ণনায় জানা যায়, গতকাল সকালে আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় সে। সেখানে পৌঁছালে এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারছে বলে ডেকে নেয়। সেখানে আরও তিনজন ছিল।
নুসরাতের ভাষ্যমতে, ‘ওই চারজন তাকে বলে, “প্রিন্সিপালের ওপর যে অভিযোগ করেছিস তা মিথ্যা, বল।” আমি বলি না, আমি যা বলেছি সব সত্যি। তারা বলে, “তোকে এখনই মেরে ফেলব। আমরা তোর সব খবর নিছি। তোর প্রেম সম্পর্কিত সব তথ্য আমাদের কাছে আছে।” আমি বলি, আমি সব সত্য বলেছি। আমি শিক্ষকদের সম্মান করি, কিন্তু যে শিক্ষক আমার গায়ে হাত দিছে আমি তার প্রতিবাদ করেছি। সঙ্গে সঙ্গে তারা আমার হাত-পা ধরে গায়ে আগুন দেয়।”
পরে তার চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরবর্তীতে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একই মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন ও আহতের সহপাঠী আরিফুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।
নুসরাতের শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল। তিনি বলেন, ‘ওই ছাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাকে আইসিইউতে নেওয়া হবে।’
গতকাল সন্ধ্যায় নুসরাতের বরাত দিয়ে তার ভাই মাহমুদুল হাসান জানান, নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া চার দুর্বৃত্তই ছিল বোরকা পরা। তাই তাদের চিনতে পারেনি নুসরাত। তবে ওই চারজনের একজন নারীকণ্ঠে নুসরাতের সঙ্গে কথা বলেছে। অন্য তিনজন কোনো কথা বলেনি।
এর আগে গত ১৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করে বলে অভিযোগে ওঠে। পরে এ ঘটনার মামলা অধ্যক্ষ সিরাজ সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেপ্তার করে। আর এরপর থেকেই শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। অন্যদিকে আরেকটি অংশ তার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে।