নামাজ, প্রশান্তি লাভের একমাত্র মাধ্যম
ইসলাম ডেস্ক: ঘরে, বাইরে যেদিকেই তাকাই সর্বত্র যেন অশান্তি আর অশান্তি। এসব অশান্তি থেকে উদ্ধারের কি কোনো পথ খোলা নেই? অবশ্যই আছে, আর সেই মাধ্যম হচ্ছে নিষ্ঠার সঙ্গে নামাজ আদায়। এই নামাজই আরবের পশুতুল্য বর্বর জাতিকে ফেরেশতায় রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছিল আর অশান্তির অগ্নিকে শান্তিতে পরিণত করেছিল এই নামাজ। আসলে নামাজ এমন এক ইবাদত, যা একজন মানুষকে খোদার নৈকট্যে পৌঁছায় এবং সে প্রশান্তি লাভ করে। মাছ যেমন পানি ছাড়া থাকতে পারে না, তেমনি মুমিন নামাজ ছাড়া থাকতে পারে না। নামাজ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।
মহান আল্লাহতাআলা বলেছেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো’ (সুরা বাকারা : ৪৩)। আল্লাহতাআলার সঙ্গে মানুষের অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের বহির্প্রকাশের নামই ইবাদত। আল্লাহর অনুগ্রহ মানুষের দেহ, মন ও আত্মাকে ঘিরে রেখেছে। তাই পরিপূর্ণ ইবাদত তা-ই, যার মাঝে দেহ ও আত্মা সমভাবে অংশগ্রহণ করে। উভয়ের অংশগ্রহণ ছাড়া ইবাদতের চেতনা ও সারবস্তু সুরক্ষিত থাকতে পারে না। কেননা যদিও হৃদয়ের নিবেদনই মূল বিষয় এবং শারীরিক ইবাদত বা উপাসনা খোলস মাত্র, তথাপি খোলস বা আবরণ ছাড়া সারবস্তু সংরক্ষিত হতে পারে না। খোলস নষ্ট হলে সারবস্তুও নষ্ট হয়ে যায়।
নামাজ কায়েম করার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বারবার নির্দেশ দান করা হয়েছে। এ ছাড়া মানব সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহপাকের ইবাদত করা। সুরা ইব্রাহিমের ৩২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতাআলা ঘোষণা করেন, ‘আমার যেসব বান্দা ইমান এনেছে, তুমি তাদের বলো, তারা যেন নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। একটি কথা মনে রাখতে হবে, একা একা কখনো নামাজ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সম্মিলিতভাবে বাজামাতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে নামাজকে কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদি বিশেষ কোনো কারণে মসজিদে গিয়ে বাজামাত নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়, তা হলে ঘরে সবাই মিলে বাজামাত নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করা সবচেয়ে উত্তম কাজ।
এ সম্পর্কে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য’ (সুরা নেসা : ১০৩)। দৈনিক পাঁচবারের যে নামাজ, তা যথাসময়ে আদায় করা খুবই উত্তম। যদি কোনো কারণে নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করতে অসুবিধা হয় বা আদায় করা সম্ভব না হয়, তা হলে তা অন্য সময়ে অবশ্যই আদায় করতে হবে। কেননা কোনো অবস্থায়ই নামাজ মাফ করা হয় না। এমনকি নামাজের কোনো কাফফারা নেই, যার মাধ্যমে নামাজের কমতি দূর হতে পারে! তাই প্রত্যেক নামাজিকে তার নামাজ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনো নামাজ ছুটে না যায়। মুত্তাকিরা সর্বদা নামাজ কায়েম করে থাকে। কোনো কারণে নামাজ আদায় করা না হলে তার মাঝে অস্থিরতা কাজ করে থাকে। মনে হয়, কী যেন তার বাদ পড়ে গেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে’ (সুরা আনকাবুত : ৪৫)। এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (স.) বলতে শুনেছি, ‘তোমরা বলো তো দেখি! কারো ঘরের সামনে দিয়ে যদি কোনো নদী প্রবাহিত হয় এবং সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তা হলে কি তার দেহে কোনো ময়লা থাকতে পারে কি? সাহাবিরা (রা.) বললেন, ‘না, ময়লা থাকতে পারে না।’ তিনি (স.) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও তদ্রুপ। আল্লাহ এর দ্বারা সব দোষ-ত্রুটি মিটিয়ে ফেলেন’ (বোখারি)।
উপরোক্ত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (স.) আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তাৎপর্য বর্ণনা করে নামাজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ ছাড়া আল্লাহতাআলা বলেন, প্রকৃত নামাজ মানুষকে অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। আর রাসুল (স.) বলেছেন, প্রকৃত নামাজ আদায় করলে আল্লাহ আমাদের দোষ-ত্রুটি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে দেন।
আল্লাহ ও তার রাসুলের (স.) এত স্পষ্ট বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও আমরা অনেকেই নামাজে গাফেল, আবার অনেকে এমনও আছি, যারা নামাজও পড়ি আবার নানা অশ্লীল এবং মন্দ কাজেও লিপ্ত থাকি। এমন যাদের অবস্থা তাদের নামাজ প্রকৃত নামাজ হয় না, কেননা যে কেবল আল্লাহর জন্য নামাজ পড়বে তার নামাজ বিফলে যেতে পারে না, সে একটা প্রশান্তি লাভ করবেই। আসলে প্রকৃত নামাজ আদায়কারী কখনো মন্দকর্মে লিপ্ত হতে পারে না, এটাই আল্লাহপাকের ফয়সালা। আল্লাহপাকের দেওয়া এই মাপকাঠিতে যেভাবে বলা হয়েছে, দৈনিক পাঁচবেলা গোসল করলে শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না, ঠিক তেমনি নিষ্ঠার সঙ্গে আমরা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি তা হলে আমাদের হৃদয়ে পাপের কোনো ছাপ থাকতে পারে না। তাই সবকিছু থেকে প্রশান্তি লাভ করতে হলে নিষ্ঠার সঙ্গে নামাজ আদায় ছাড়া বিকল্প কোনো মাধ্যম নেই।