গভীর রাতে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে নূরুলকে
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নূরুল হক নূরকে গভীর রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১ জুলাই, রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার পরে হুইল চেয়ারে করে নূরুলকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের বাইরে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা।
সেসময় নূরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল আমাকে ইগনোর করেছে। এরপর আমি এখানে আসছি। এখানে আসার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করবে আমরা এখানে আপনাকে রাখতে পারব না। আপনারা এখান থেকে চলে যান।
আমরা ইচ্ছা করে হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসি নাই। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সব গোছগাছ করে আমাদের হাসপাতাল ছেড়ে যেতে বলা হয়। আমি কোনো অন্যায় করিনি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন করতে গিয়ে আজ আমি ও আমার পরিবার ভুগছি।’
নূরুল হক আরও বলেন, ‘প্রশাসনের নিষেধ থাকায় অামাদের কেউ আসলে দেখা করতে দেওয়া হয় না। বিকেলে ধানমন্ডি জোনের এডিসি আমার ফেসবুকের আইডি, পাসওয়ার্ড নিয়ে গেছে। বন্ধুরা আমাকে লাইভে নেওয়ায় বলা হয়েছে, এরপর লাইভে গেলে আমাকে গ্রেফতার করা হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি তো আমাদের দাবি মেনে নিয়েছিলেন। তাহলে কেন ছাত্রলীগ আমাদের পিটিয়ে আহত করেছে, অনেককে আটক করা হয়েছে।’
আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার পরে নূরুল হককে অন্য একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে কোন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে নূরুলের পরিবারের সদস্যরা কিছু জানাতে রাজি হননি।
নূরুলের ভাবী মিতা আক্তার প্রিয়.কমকে বলেন, ‘গত রাত ১ টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমাদের বলা হয় আধা ঘণ্টার মধ্যে বের হয়ে যান। কিন্তু কেন বের হয়ে যেতে হবে তার কোনো নির্দিষ্ট কারণ বলেনি কর্তৃপক্ষ। তখন হাসপাতালের নিচে অনেক পুলিশ ছিল। নূরকে নিয়ে আমরা যখন নিচে নামি তখন তারা আবার গেট বন্ধ করে রেখেছিল।
পরে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে গেট খুলে আমরা নূরকে সিএনজিতে করে সেখান থেকে নিয়ে এসেছি। এখন অন্য জায়গায় তার চিকিৎসা চলছে। তবে নূর এখন কোথায় আছে সেটা এই মুহূর্তে আমরা বলতে চাচ্ছি না। নূরের অবস্থা ভালো না, আমিও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আজকের দিনের মধ্যে ওর অবস্থার উন্নতি হলে আমরা সবাইকে জানাব।’
হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত ৩০ জুন শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর ও অন্যদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও ছাত্রলীগ হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
১ জুলাই, রবিবার দুপুর ১২টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম নেতা রাশেদ খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ছাড়া রবিবার সাড়ে ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপরও ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ছাত্রলীগের অতর্কিত এ হামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ছয়জন আহত হয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, পুরোপুরি বাতিল নয়, কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রচলিত ব্যবস্থায় ৫৬ শতাংশ আসনে কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ শতাংশ কোটা।