প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের আর্থিক খাত সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং অর্থমন্ত্রীর যথাযথ পদক্ষেপে দেশের আর্থিক খাত সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।
তারা বলেন, গত দশ বছরে শেখ হাসিনার সুযোগ্য রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। নির্ধারিত সময়ে উন্নতশীল দেশে পরিনত হয়ে ২০৪১ সালের মদ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিনত হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বিকেল ৩টা ১০মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়।
গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার দ্বিতীয় দিনে আজ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সরকারি দলের টিপু মুন্শি, বেগম উম্মে রাজিয়া কাজল, মো. মোসলেম উদ্দিন, মৃনাল কান্তি দাস, আনোয়ারুল আবদীন খান ও হোসনে আরা বেগম অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটকে যুগোপযোগী উল্লেখ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সার্বিক চিত্র পাওয়া যায়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিরোধী দল কিছু অসত্য বক্তব্য রেখেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণেই দেশের সকল ব্যাংক এখনো সচল আছে। ব্যাংকগুলো যথাযথভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
আয় করের আওতা বাড়িয়ে কমপক্ষে ২ কোটি মানুষকে করের আওতায় আনার সুপারিশ করে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভ্যাট আদায়ে ডিজিটালাইজ ব্যবস্থা চালু করলে আরো ৪ গুন বেশি পরিমান ভ্যাট আদায় সম্ভব হবে। তিনি আয়কর বাহাদুর পুরস্কারের পরিবর্তে ভ্যাট বাহাদুর পুরস্কার ঘোষণারও প্রস্তাব করেন।
সরকার সবার জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশে অর্থ পাচার রোধে ফ্লাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্থের উৎস অনুসন্ধান বন্ধ করতে হবে এবং ফ্লাট ক্রয়ের টাকার উপর ১০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে এই টাকা সাদা করার সুযোগ দিতে হবে। তিনি ফ্ল্যাট রেজিষ্ট্রেশন কর বিদ্যমান ১৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানান।
সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বাজেটে গৃহ ঋণ বাবদ ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের দাবি জানান। এ তহবিল থেকে ১ অংকের সরল সুদে ঋণ দেয়া হবে এবং ২৫ বছর মেয়াদে তা আদায় করার প্রস্তাব করেন।
তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার শহরকে যানজটমুক্ত করতে ওই তিন শহর থেকে ধীর গতির সকল গাড়ি উঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন।
বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার ২৪৫ মেগাওয়াট। বর্তমানে দেশ ১৮ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০০৯ সালে ক্যাপটিভ পাওয়ার ছাড়া সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট বর্তমানে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে। বর্তমানে ২৩ হাজার ৯৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১২৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৭ হাজার ৮শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন ৬৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে। ১৫ হাজার ২০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রায় ৫৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ৪ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন ২৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভারত থেকে প্রায় ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী করা হচ্ছে। আগামী মাসে ভারত থেকে আরো ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পায়রা, মাতারবাড়ি, মহেশখালী ও রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ধরণের ৮টি মেগা প্রকল্প থেকে ৯ হাজার ৯৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
আরও : উল্টাপাল্টা ফল হচ্ছে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপে : প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, আগামী ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় পুরনো সব বিদ্যুকেন্দ্র বন্ধ করে, যেগুলো সম্ভব সেগুলো রিপাওয়ারিং করা হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানী প্রায় ৫০১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন ৫২ লাখ বাড়িতে সোলার হোম সিস্টেম চালু রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। এ লক্ষ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করতে সঞ্চালন লাইন ৮ হাজার থেকে প্রায় ১১ হাজার সার্কিট কিলোমিটার উন্নীত করা হয়েছে। ২০৪০ সালের মধ্যে ৩২ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করতে হবে।
ঢাকা শহরে নিরবিচ্ছিন্ন করতে সকল বিদ্যুৎ লাইন আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যা সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে একটি সিঙ্গেল নম্বর চালু করা হচ্ছে। সেখানে কল করে সারা দেশ থেকে বিদ্যুৎ সম্পর্কে যেকোন সমস্যার কথা জানানো যাবে।
জ্বালানী ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে দূরদৃষ্টির কারণে ৫টি গ্যাস ক্ষেত্র ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট দেশ পেয়েছিলো। সেখান থেকে দেশের প্রায় ৩৪ শতাংশ জ্বালানী চাহিদা মেটানো হচ্ছে। গ্যাসের মজুদ ঠিক রাখতে বিদেশ থেকে এখন গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে আমদানীকৃত এই এলএনজি গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা যাবে এবং গ্যাসের সমস্যা চিরদিনের মতো অবসান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে তেল সরবরাহের ঝামেলা দূর করতে ও অর্থ সাশ্রয় করতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পাইপ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই পাইপ লাইনের একটি অংশ বিমান বন্দরেও সংযুক্ত থাকবে।
তেল পরিবহনে বিদ্যমান ৪ শতাংশ কর বহাল রাখার দাবি জানিয়ে তিনি মেয়ে ও ছেলে ক্রিকেটারদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে ক্রীড়া খাতে অধিক বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।
জ্বলানী সাশ্রয়ের লক্ষ্যে তিনি হাইব্রিড কার ও ইলেক্ট্রিক কারের আমদানি কর কমিয়ে শূণ্যের কোটায় নিয়ে আসার দাবি জানান। তেলের গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে পাররে বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট দেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সহযোগিতা করবে।
বিএনপি জামায়াতের মিথাচার ও ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে তারা ‘মানিনা মানব না’ শব্দটি বলে আসছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকে তারা মানতে পারেনি। তারা এখনো দেশ ও দেশের অগ্রগতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বিএনপি-জামায়াত মিথ্যাচার করে দেশের এই অর্জনকে নসাৎ করতে চাচ্ছে।
তারা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ৫ বছরের শাসনামলে দেশ পর পর ৫বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতির কপালে কলঙ্ক কালিমা লেপন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির সেই কলঙ্ক মোচনের জন্যে নিরলসভাবে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববাসী এখন বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে চিনে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে দিয়ে এদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় পরিচালিত করতে চেয়েছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে, এদেশের মানুষের মন থেকে জাতির পিতাকে মুছে ফেলতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করে দেশ থেকে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। এতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে।
তারা বলেন, তারা গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইলেও আমরা গ্রেনেডের বিনিময়ে এর জবাব দিতে চাইনা। জনগণই আমাদের গ্রেনেড, এই জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে এই গ্রেনেডের জবাব দেবে।
নন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে উল্লেখ করে সংসদ সদস্যরা তাদের প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।