‘মা, তুমি কারো কাছ থেকে তরকারি চাইয়া খাইয়ো’
নিউজ ডেস্ক।। স্বামী-ছেলে নেই, আছেন তিন মেয়ে। তাদেরও বিয়ে হয়েছে। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় মা আনোয়ারা বেগমকে দেখাশোনার সুযোগ হয় না মেয়েদেরও। ঈদের দিন সকালে আনোয়ারাকে হোটেল থেকে এক প্লেট সাদা ভাত এনে দিয়ে গেছেন এক মেয়ে। মেয়ে বলেছেন, ‘মা, তুমি কারো কাছ থেকে তরকারি চাইয়া খাইয়ো।’
যিনি যে পেশাতেই থাকুক না কেন, অন্তত ঈদের দিন ছুটি নেন কাজ থেকে। এমনকি অনেক ভিক্ষুকও ছুটি নেন ঈদের দিন। কিন্তু কিছু ভিক্ষুক থাকেন, যাদের ঈদের দিনও মানুষের কাছে হাত পাতা ছাড়া উপায় থাকে না। আনোয়ারা বেগম তাদেরই একজন।
তিনি জানান, অসুস্থ থাকায় সাদা ভাত খেতে না পেরে তা অন্য অনাথ এক মেয়েকে দিয়ে দেন। বেলা আড়াইটায় যখন ধানমন্ডি-১৫ নম্বরে তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন পর্যন্ত কেবল একটি রুটি চেয়ে খেয়েছেন তিনি। প্রিয়.কম
এমনই আরেকজন জামালপুরের দেবঘর ইউনিয়নের সলিকান্দা গ্রামের ফিরোজা। যমজ সন্তান মালেক ও মজিবরের জন্মের পরপরই ফিরোজার স্বামী ক্যান্সারে মারা যান। তারপর থেকে অনেক কষ্টে দুই সন্তানকে মানুষ করছেন। একপর্যায়ে ছেলে দুজনের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে না পেরে ভিক্ষা শুরু করেন এই মা। ছেলে দুজন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, ভর্তি হবে কলেজে। বর্তমানে তারা থাকেন ভালুকায়। কিন্তু ১০ রোজার দিন বড় ছেলে মালেকের ডান পা ভেঙে যাওয়ায় তারপর থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে সে। সঙ্গে আছে ভাই মজিবর।
মালেকা জানান, ভিক্ষা করলেও প্রতি ঈদেই অন্তত কিছু সময় সন্তানদের সঙ্গে কাটাতেন তিনি। কিন্তু এবার আর সেটা হচ্ছে না। ছেলের চিকিৎসার টুকটাক যেসব খরচ আছে, সবটা জোগাড় করতে ঈদের সময়কেই বেছে নিয়েছেন তিনি। গত কয়েক দিন ধরে ঢাকায় ভিক্ষা করছেন। ঈদের পরের দিন সন্তানের সঙ্গে দেখা করবেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ঈদের দিন দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, মালেকা রাজধানীর পুরানা পল্টনে ঘুরছেন, সঙ্গে একটি পানির বোতল। মালেকা জানান, কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করছেন আর পান খাচ্ছেন। এর বেশি কিছু খাওয়া হয়নি তখন পর্যন্ত।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফিরোজার মতো কিছু ভিক্ষুক ভিক্ষা করছেন। তবে সংখ্যায় তুলনামূলক কম।