কিম যে কারণে মল-মূত্র নিয়ে দেশে ফিরলেন
ডেস্ক রিপোর্ট।। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো গত মঙ্গলবার। তাদের এই বৈঠক প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে বলে দাবি করেন ট্রাম্প। এই বৈঠককে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় ছিল চোখে পড়ার মতো। হওয়াটাও স্বাভাবিক। কেননা তাদের নাম ও পদ দুটো খুব দামি।
তবে নিরাপত্তা ইস্যুতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম যেন একটু বেশি সতর্ক ছিলেন। কেননা তার আশঙ্কা ক্ষমতা থেকে সরাতে এবং খুন করতে চক্রান্ত চলছে। তার সন্দেহ, আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান এবং নিজের অধীনস্থ সেনাবাহিনীর একদল উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেনারেল তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চক্রান্ত করছে। তাই নিজের চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, গতিবিধি, রুচি-পছন্দ নিয়ে সব সময় রহস্যের ঘেরাটোপে থাকতে পছন্দ করেন তিনি।
শুধু তাই নয়, কিম নিজের বাসভবনের বাইরে কোথাও পানিও স্পর্শ করেন না। এমননি নিরাপত্তার কারণে মল-মূত্র, থুতু ফেললেও তা নির্দিষ্ট টয়লেট বক্সে সংরক্ষিত করা হয়। তারপর তা নির্দিষ্ট জৈব-রাসায়ানিক প্রক্রিয়ায় নষ্ট করা হয় তার সুরক্ষিত প্রাসাদের ভেতরেই।
উদ্দেশ্য, সর্বাধিনায়ক কিমের বর্জ্য পদার্থের নমুনা যেন কোনোভাবেই শত্রুদের হাতে না পড়ে। সিঙ্গাপুরের ঐতিহাসিক বৈঠকে এসেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। কিমের সঙ্গে থাকা মেডিকেল টিম সিঙ্গাপুরে কিমের যাবতীয় বর্জ্য পদার্থ নির্দিষ্ট বক্সে সংরক্ষণ করেছে। সবটাই এয়ার চায়নার বিশেষ কার্গো বিমানে কিমের সঙ্গে ফেরত যাবে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে। সেখানে তা জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নষ্ট করা হবে। উত্তর কোরিয়া চায় না কিমের মল-মূত্র, থুতু কিংবা ঘামের কোনো নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ’র হাতে যাক।
কিমের বর্জ্য পদার্থের নমুনা শত্রুর হাতে যাওয়া মানে কিমের ‘ডিএনএ’ এবং তার শরীরে যাবতীয় তথ্য শত্রুরা জেনে যাবেন। ফলে সিঙ্গাপুরে ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে কিমের ব্যবহার করা চামচ, প্লেট, গ্লাস, টিস্যু পেপার যেখানে তার আঙুলের ছাপ কিংবা মুখের লালার চিহ্ন রয়েছে সেগুলোও দেশে নিয়ে যাবেন উত্তর কোরিয়ার সেনা গোয়েন্দারা।
আরও : উল্টাপাল্টা ফল হচ্ছে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপে : প্রধানমন্ত্রী
কারণ, কিমের ডিএনএ-র নমুনা থেকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আরেকজন নকল কিম বা কিমের ‘ক্লোন’ তৈরি করা শত্রুদের জন্য খুব সহজ। সেরকম কিছু হলে কিম ও উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তার পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে। তাই এসব নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতেই চায় না কিমের প্রশাসন।
কমিউনিস্ট একনায়ক কিম এ ব্যাপারে রোমানিয়ার নিকোলাই চাওসেস্কুর পথই অনুসরণ করেছেন। রোমানিয়ার কমিউনিস্ট একনায়ক চেসেস্কু একসময় এরকমই কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকতেন। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান ও সেনার গুলিতে নিজের অকাল মৃত্যু তিনি ঠেকাতে পারেননি।
কিম জং উন পৌঁছনোর আগেই পিয়ং ইয়ং থেকে পণ্যবাহী আইএল-৭৬ বিমান সিঙ্গাপুর পৌঁছে যায়। এই বিমানে অন্য জিনিসের মধ্যে কিমের ব্যক্তিগত টয়লেট বক্সও ছিল। এই টয়লেটে উত্তর কোরিয়ার সর্বাধিনায়কের বর্জ্য পদার্থ সংরক্ষণ করে তা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিশেষ বন্দোবস্ত আছে বলে কোরিয়ার একটি নিউজ ওয়েবসাইটের দাবি।
এই পদ্ধতি অবশ্য পুরনো। ২০০৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লু. বুশের অস্ট্রিয়া সফরের সময় মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের আধিকারিকরা তার জন্য একটি টয়লেট বক্স সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন।
অনেকের মতে, অতীতে সিআইএ-সহ বিভিন্ন গুপ্তচর সংস্থা নানা দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মল বা বর্জ্য থেকেও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়েছে।