‘মেড ইন জার্মানির’ বিরুদ্ধে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ভবিষ্যতের সরকারি প্রকল্পগুলোতে জার্মান প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করেছেন। ব্যবসায়ীদের বরাতে জার্মান সংবাদমাধ্যম স্পিগেল অনলাইন লিখেছে, পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক তিক্ততার সূত্র ধরেই ওই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কার্যকর হয়েছে। ৬ মাস আগে সৌদি আরব জার্মানিতে নিযুক্ত তার রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠিয়েছিল। এখন পর্যন্ত তাকে আর জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হয়নি। সৌদি আরবে থাকা জার্মান ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করেছেন, সৌদি আরব জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অসহযোগিতা করছে।
সৌদি সরকারের একটি সূত্রের বরাতে জার্মানির হ্যানোভারভিত্তিক ভার্চুয়াল ডিপার্টমেন্ট স্টোর ভি- লাইনের মালিক ডেলেফ দাউয়েস স্পিগেলকে বলেছেন, যুবরাজ সালমান জার্মানির পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে তীব্রভাবে অসন্তুষ্ট। গত নভেম্বরে যখন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল ‘রাজনৈতিক হঠকারিতার’ কথা উল্লেখ করেছিলেন, তাখন অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন যুবরাজ সালমানকে লক্ষ্য করেই জার্মানির পক্ষ থেকে ওই মন্তব্য করা হয়েছে। তখন মধ্যপ্রাচ্য সংশ্লিষ্ট অনেকেই ধারণ করেছিলেন, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিরকে জোর করে রিয়াদে আটকে রাখা হয়েছে এবং ক্ষমতা ছাড়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে।
রিয়াদে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে রাজপরিবারের একজন সদস্য মন্তব্য করেছিলেন, ‘গ্যাবরিয়েলের যদি এতটাই আপত্তি থাকে তাহলে তিনি সরাসরি রিয়াদে ফোন করতে পারতেন।’ স্পিগেল লিখেছে, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে ‘সস্তা বলে মন্তব্য’ করেছেন।
আরও : মালিতে জঙ্গি হামলায় নিহত ২০
নিষেধাজ্ঞার কারণে সিমেন্স, বেয়ার, বোহ্রিঙ্গার ইঙ্গেলহেম, ডাইমলারের মতো বড় জার্মান প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সিমেন্স গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের জন্য ৫টি গ্যাস টার্বাইন সৌদি আরবে সরবরাহ করার কার্যাদেশ প্যেছিল। ওই প্রকল্পের মূল্যমান ছিল ৪০ কোটি ডলার। অন্যদিকে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডাইমলার সৌদি আরবের বাস পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এসএপিটিসিওকে ৬০০টি মার্সিডিজ বেঞ্জ সিটারো বাস সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছিল। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সিমেন্স, বেয়ার ও বোহ্রিঙ্গার ইঙ্গেলহেম। শুধু ডাইমলার বলেছে, সৌদি আরবে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম এখনও চালু আছে।
সৌদি আরবে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জার্মান ব্যবসায়ী শুক্রবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বর্তমানে বিশেষ করে সৌদি আরবের চিকিৎসা খাতে কার্যাদেশ পাওয়ার প্রক্রিয়া কঠিনভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তার ভাষ্য, ‘প্রশ্ন করা হয়: পণ্যগুলো কোথায় উৎপাদিত? সেগুলো জার্মানিতে তৈরি কি না? আপনাদের কি অন্য কোথাও কারখানা আছে? যখনই বলা হচ্ছে, পণ্যগুলো জার্মানিতে তৈরি তখনই টেন্ডারের জন্য জমা দেওয়া জার্মান প্রতিষ্ঠানের আবেদন বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে।’
রয়টার্স ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করেছে। ব্লুমবার্গ গত মার্চে জানিয়েছিল, অপরিহার্য নয় এমন সেবাগুলোর বিষয়ে জার্মান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে থাকা চুক্তি নবায়ন না করতে সরকারি সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র: আরটিএনএন