একটি বাঁধের অভাবে অরক্ষিত কোটি টাকার ফসল
ডেস্ক রিপোর্টস : মাত্র ৩০ ফুটের একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের অভাবে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের জোয়ানশাহী হাওরটি অরক্ষিত রয়েছে। ফলে প্রায় বছরই অসময়ে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে এই হাওর তলিয়ে কোটি কোটি টাকার ইরি-বোরো ফসল নষ্ট হয়।
হাওরের ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে প্রতি বছরই অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে আসছেন। কিন্তু যেকোনো সময় মাত্র কয়েক মিনিটে এই বাঁধ ভেঙে কৃষকের স্বপ্নের সোনালী ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় হতাশ তারা।
কৃষি বিভাগ জানায়, উপজেলার শ্রীনগর, আগানগর ও সাদেকপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এই হাওরে অন্তত ৩ হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। জোয়ানশাহী এই হাওর শস্য উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় কৃষি অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখলেও এখন পর্যন্ত সামগ্রিক উন্নয়নের বাইরে রয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে দেশের অন্য যেকোনো হাওরাঞ্চল থেকে এই হাওরে একর প্রতি ধানের আবাদ ও উৎপাদন অধিক বেশি হয়। এ বছরও বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ওরার খাল নামের একটি নালায় দিয়ে মেঘনা নদী থেকে দ্রুত গতিতে পানি প্রবেশের ফলে বেশির ভাগ মৌসুমেই কৃষকরা তাদের জমিতে উৎপাদিত ধানের তৃতীয়াংশ ফসল গোলায় তুলতে পারেন না।
সম্ভাবনাময় এই হাওরটি মাত্র ৩০ ফুট প্রস্থের একটি স্লুইস গেইটের অভাবে বছরের পর বছর ধরে অরক্ষিত হয়ে পড়ে রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, পানি বেশি হলে একদিকে যেমন হাওরের ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অপরদিকে শুকনো মৌসুমে পানি পায় না কৃষকরা। অথচ হাওর অঞ্চলের উৎপাদিত ফসল থেকেই উপজেলার মোট আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অর্জিত হয়।
হাওর উন্নয়নে ও স্লুইস গেইট নির্মাণে সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও রাজনৈতিক নেতারা একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন হয়নি।
২০০৫ সালে স্লুইস গেইট নির্মাণের জন্য জাপানী সংস্থা জাইকার একটি প্রতিনিধি দল সরজমিনে পরিদর্শন গেলে হাওরের কৃষকরা আশায় বুক বাধে। এরপর দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এর অগ্রগতির সম্পর্কে কেউই কিছুই বলতে পারেন না।
আগানগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফারুক শিকদার জানান, প্রতি বছরই চৈত্র মাসের শেষে বা বৈশাখ মাসের শুরুতে এলাকাবাসীরা মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে আসছে। মেঘনায় পানি বাড়লে ও বাঁধে ভাঙন দেখা দিলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া মাত্রই বাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসী ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমনও সময় গেছে একদল কৃষক দিনে ও একদল কৃষক রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিতে হয়েছে।
ফারুক শিকদার আরও জানান, আগানগর ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে এ বছর প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে আমরা একটি অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেছি। কিন্তু নদীতে পানি বাড়লে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধে ভাঙন দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। তাই স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানে একটি স্লুইস গেইটসহ বাঁধ নির্মাণ খুবই প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে শ্রীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সার্জন মো. আবু তাহের (অব:) জানান, দুঃখজনক হলেও সত্য তিন ইউনিয়নের জনগণ বছরের পর বছর ধরে একটি স্লুইস গেইট নির্মাণের দাবি করলেও এখনো সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে বোরো মৌসুমে এলাকার কৃষকদের জমিতে ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে দুশ্চিন্তাও। আরটিভি অনলাইন