বাস-মিনিবাসএখনও বেপরোয়া
নিউজ ডেস্ক : রাজধানীতে গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছেই। বাস-মিনিবাসের বেপরোয়া চলাচল, পাল্লাপাল্লির কারণে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। যত্রতত্র থামা, ওঠানামা করানো, ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘন, বিশৃঙ্খলা ঢাকার গণপরিবহনের সাধারণ চিত্র। এদের কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। কারণ, এসব পরিবহন ব্যবসা ও এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন মন্ত্রী, সাংসদ ও সরকারি দলের নেতারা।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকা ও এর আশপাশে এখন বাস-মিনিবাস চালাতে হলে দিনে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। প্রতিদিন চাঁদা ওঠে প্রায় ১ কোটি টাকা। এ খাতে যুক্ত থাকা মন্ত্রী, সাংসদ, সরকারদলীয় নেতারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করেন। ঢাকায় বাস কোম্পানি আছে ২৪৬টি। আর বাস চলে প্রায় ৮ হাজার। এর মধ্যে সাধারণ মালিকেরা বিপুল পরিমাণ চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন।
প্রভাবশালী রাজনীতিকদের বাস কোম্পানি থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ফিটনেসবিহীন, রংচটা পরিবহনের বিরুদ্ধে খুব একটা ব্যবস্থা নেয় না। চালকেরাও দেখান বেপরোয়া মনোভাব। ভাড়া নিয়ে কোনো যাত্রী উচ্চবাচ্য করলে তাঁদের শায়েস্তা করার জন্যও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিজেদের লোক রাখেন পরিবহনমালিকেরা। ফলে সরকার-নির্ধারিত হারের দু-তিন গুণ ভাড়া আদায় হচ্ছে।
সরকারের একজন মন্ত্রীর পরিবারের মালিকানাধীন কোম্পানির বাস তিনটি রুট বা পথে চলাচল করছে। সরকারদলীয় দুজন বর্তমান ও একজন সাবেক সাংসদের নিজ নামেই পরিবহন কোম্পানি আছে। এর বাইরে সাংসদের পরিবারের সদস্য, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সরকার-সমর্থক কাউন্সিলরসহ ২০ থেকে ২৫ জন নিজ নামে বা পরিবারের সদস্যদের নামে কোম্পানি করে বাস পরিচালনা করছেন। আবার পুলিশের সাবেক আইজির ভাই, ছাত্রলীগের সাবেক একজন সাধারণ সম্পাদকের কোম্পানির অধীনেও বাস-মিনিবাস চলছে ঢাকায়।
আবার মন্ত্রী-সাংসদ বা নেতাদের এসব কোম্পানিতে আছে আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী ও সমর্থক সংগঠনের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের আত্মীয়দের বাস। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে একটি বিশেষ জেলার কিছু ব্যক্তি কয়েকটি নতুন পরিবহন কোম্পানি খুলেছেন। এর মধ্যে ওয়েলকাম, স্বজন, ঠিকানা, মৌমিতা পরিবহন উল্লেখযোগ্য।
এসব মন্ত্রী, সাংসদ, নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তির বেশির ভাগই বাস কোম্পানির মালিক হয়েছেন ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসসহ সে সময়ের সরকারদলীয় সাংসদ-নেতারা ঢাকায় পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। এখন তাঁদের বেশির ভাগই প্রত্যক্ষভাবে এই ব্যবসায় নেই।
ঢাকাসহ সারা দেশের পরিবহনশ্রমিকদের সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। আর পুরো ঢাকার বাসমালিকদের সংগঠন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ হচ্ছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ শাখার সহসভাপতি। পরিবহন খাত থেকে তোলা চাঁদার মধ্য থেকে মালিক সমিতি প্রতিদিন প্রতিটি বাস থেকে ৪০ টাকা এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো ৩০ টাকা পেয়ে থাকে।
পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিক সূত্র বলছে, প্রভাবশালী রাজনীতিকেরা আবেদন করলে যাত্রীর চাহিদা কিংবা শৃঙ্খলার বিষয়ে না ভেবেই চলাচলের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় পথ (রুট) সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে রাস্তায় বাসে বাসে পাল্লাপাল্লি ও রেষারেষি হচ্ছে, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। যার সর্বশেষ শিকার কলেজছাত্র রাজীব হোসেন।
নেতাদের বাস ব্যবসা
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ভাই আজিজুর রহমান খানের বাস চলে কনক পরিবহন নামে। প্রথমে মিরপুর পল্লবী থেকে আবদুল্লাহপুরের মধ্যে ২০টি বাসের অনুমতি পায় কোম্পানিটি। পরে গাবতলী থেকে কালশী, আবদুল্লাহপুর হয়ে কামারপাড়া পর্যন্ত আরও ২০টি বাসের অনুমতি দেওয়া হয়। সর্বশেষ মিরপুরের ধউর থেকে খিলক্ষেত হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ৩০টি বাস পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কনক পরিবহনকে। শাজাহান খান নিজে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। এই সমিতি সারা দেশের পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় ফোরাম।
শাজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সাত ভাইয়ের তিনজনই পরিবহন ব্যবসায় জড়িত। শ্যালকও আছেন। এটা তাঁদের পুরোনো ব্যবসা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি-সবাই এই ব্যবসা করছে। ব্যবসা করা তো খারাপ কিছু নয়।
কিন্তু সরকারি দলের রাজনীতিকেরা এই ব্যবসায় যুক্ত থাকায় গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছে, আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না, চাঁদাবাজি চলছে-এমন অভিযোগ সম্পর্কে শাজাহান খান বলেন, ‘আমার ভাগনে লঞ্চ ব্যবসা করে। তাকেও আমি ছাড় দিইনি। এখন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে চাঁদা বন্ধ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করব। আমি এক পায়ে খাড়া আছি।’
নারায়ণগঞ্জের সরকারদলীয় সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমানের পরিবহন কোম্পানির নাম জেড এন করপোরেশন। ঢাকার গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের পথে এই কোম্পানির শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) ৫০টি বাস চলার অনুমতি পেয়েছে। ২০১৩ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহনের বাসমালিকেরা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছিলেন, শামীম ওসমানের ছত্রচ্ছায়ায় ইব্রাহীম চেঙ্গীস বন্ধন পরিবহন থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিহঙ্গ পরিবহন কোম্পানি চালু করেন আওয়ামী লীগের সাংসদ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। প্রথমে মিরপুর থেকে সদরঘাটে ৩৫টি মিনিবাস দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এরপর একে একে নতুন রুট খুলতে থাকেন। এখন ঢাকা ও এর আশপাশে পাঁচটি রুটে এই কোম্পানির অধীনে ২৪০টি বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছে পরিবহন কমিটি। এসব রুট হচ্ছে মিরপুর-সদরঘাট, মিরপুর-ঢাকেশ্বরী মন্দির, মিরপুর-কুড়াতলী, মিরপুর-মতিঝিল ও সাভারের হেমায়েতপুর-কেরানীগঞ্জ।
পঙ্কজ নাথ প্রথম আলোকে বলেন, আগে পরিবহন ব্যবসা একচেটিয়া বিএনপি-জামায়াতের দখলে ছিল। হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি হলে এই খাত বন্ধ হয়ে যেত। যাত্রীসেবা দেওয়া এবং পরিবহন খাত সক্রিয় রাখতে তাঁরা এই ব্যবসায় এসেছেন, দলীয় লোকদের উৎসাহিত করেছেন।
কোম্পানির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়ের বিষয়ে পঙ্কজ নাথ বলেন, ‘আমরা অত নিই না। প্রতি বাস থেকে ৫০০-এর বেশি না। এটা এস্টাবলিশমেন্ট কস্ট।’
আরও যাঁরা বাস চালাচ্ছেন
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান ওরফে নিখিল হলেন চলন পরিবহন কোম্পানির চেয়ারম্যান। এই কোম্পানির ৫০টি বাস ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে মিরপুর, আশুলিয়া হয়ে নন্দন পার্ক পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি পেয়েছে।
মাইনুল হোসেন খান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘চলন পরিবহন খুব একটা চলে না। তবে আমাদের পরিবারের সদস্যরা মিলে অভিজাত পরিবহন চালু করেছিলাম। সেটার অবস্থাও ভালো না। আমাদের বাস অন্য কোম্পানিতে দিয়ে রেখেছি।’
মিরপুরের সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদারের ভাই আনোয়ার হোসেন মজুমদারের কোম্পানির নাম মোহনা পরিবহন। আনোয়ার মজুমদার ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। এই কোম্পানির বাস ৫০টি, চলে মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে বেড়িবাঁধ হয়ে সাভারের নন্দন পার্ক পর্যন্ত।
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান ওরফে ইরান। ফার্মগেট, ইন্দিরা রোড, মণিপুরি পাড়া এলাকা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর তিনি। দেশ বাংলা পরিবহন কোম্পানির চেয়ারম্যানও তিনি। তাঁর কোম্পানির বাস চলে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে আবদুল্লাহপুর পথে।
পুলিশের সাবেক আইজি এ কে এম শহীদুল হকের ভাই এ কে এম ইসমাইল হকের পরিবহন কোম্পানির নাম গ্লোরী এক্সপ্রেস। এই কোম্পানির বাস ঢাকা থেকে শরীয়তপুর এবং ঢাকার সদরঘাট থেকে গাজীপুর পথে চলাচল করে। ইসমাইল হক গত উপজেলা নির্বাচনে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগেরও নেতা।
সংরক্ষিত আসনের সাবেক নারী সাংসদ ও মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুন নেছা মোশাররফের পরিবহন কোম্পানির নাম স্বপ্ন সার্ভিসেস। এই কোম্পানির ৫০টি বাস মোহাম্মদপুর থেকে রামপুরা হয়ে ডেমরা পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী মোটরচালক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কালু শেখ তিন-চার বছরের মধ্যে তিনটি পরিবহন কোম্পানির অনুমোদন পেয়েছেন। এর মধ্যে তিনি জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন। ওয়েলকাম ও মৌমিতা ট্রান্সপোর্টের তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক। স্বজন পরিবহনেরও অন্যতম স্বত্বাধিকারী তিনি। এই তিন কোম্পানির অধীনে শতাধিক বাস চলাচলের অনুমতি রয়েছে। এর সব কটি পরিবহনের যাত্রা শুরুর স্থান সাভার ও এর আশপাশে। এই স্বজন পরিবহন ও বিআরটিসির বাসের পাল্লাপাল্লিতেই নিহত হয়েছেন কলেজছাত্র রাজীব হোসেন।
কালু শেখ প্রথম আলোকে বলেন, রাজনীতির কারণে নয়, ব্যবসায়িক যোগ্যতাতেই তিনি তিনটি পরিবহনের নেতৃত্বে। অসুস্থ প্রতিযোগিতার মূল কারণ বাসের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। তাঁর কোম্পানি প্রতিটি বাস থেকে দিনে ৬০০ টাকা চাঁদা নেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হকের পরিবহন কোম্পানির নাম ভিআইপি ক্ল্যাসিক। আজিমপুর থেকে বনানী হয়ে কুড়াতলী পর্যন্ত ৫০টি বাস চলাচলের অনুমতি আছে।
প্রজাপতি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন সাবেক নারী সাংসদ শাহিদা তারেখ (দীপ্তি)। এখনো ওই কোম্পানিতে তাঁর বাস চলে। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের শ্যালকের বাস চলে জাবালে নূর পরিবহনে। মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে সাভারের পথে চলা ক্যান্টনমেন্ট পরিবহনের এমডি পারভীন হোসেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেনের বোন।
যেভাবে পরিবহন চলে, চাঁদা ওঠে
বাস-মিনিবাস থেকে চাঁদা ওঠে মূলত দুই পদ্ধতিতে। প্রতিটি বাস-মিনিবাস দিনের শুরুতেই যে আয় করে, তা থেকে কোম্পানির চাঁদা পরিশোধ করে। এই চাঁদার কতগুলো নাম দেওয়া হয়েছে। যেমন গেট পাস (জিপি), ওয়েবিল (চলাচল খরচ), রুট খরচ, অফিস ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। কোম্পানি ভেদে এই চাঁদার পরিমাণ ৭০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
সাধারণত প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনীতিক ও প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিরা চেয়ারম্যান বা এমডি হয়ে কোম্পানি খোলেন। তবে তাঁদের বাস খুব কম। একটা বাসের মালিকও অনেক সময় প্রভাব থাকার কারণে চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বনে যান। এর অধীনে অন্যরা বাস চালান।
জিপি, ওয়েবিল বা রুট খরচের নামে যে চাঁদা তোলা হয়, এর একটা অংশ খরচ হয় কোম্পানির অফিস ব্যবস্থাপনায়। এ ছাড়া পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানি বন্ধে, স্থানীয় রাজনৈতিক চাঁদাবাজদের পেছনেও কিছু টাকা ব্যয় হয়। এসব কিছুর বাইরে মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ৭০ টাকা চাঁদা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার বেশি নয়। বাকিটা কোম্পানির প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ও এমডিদের পকেটে যায়।
অসুস্থ প্রতিযোগিতা কেন
ঢাকা ও এর আশপাশে বাস-মিনিবাস চলে দুই পদ্ধতিতে। এক. মালিক সরাসরি চালক-শ্রমিককে দৈনিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে বেতন দেন। দুই. মালিক নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে চালক-শ্রমিকের কাছে বাস ভাড়া দিয়ে দেন।
চালক-শ্রমিক বেতনের ভিত্তিতে কাজ করলে বাসে সারা দিন কতজন যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে, তা পথের নির্দিষ্ট স্থানে থাকা কোম্পানির কর্মীরা লিখে দেন। এটা দেখেই দিন শেষে আয় হিসাব করা হয়। আর চালক-শ্রমিকের কাছে বাস-মিনিবাস দৈনিক চুক্তিতে দিলে দিনে বাসটি কতবার চলবে (ট্রিপ), সেটাও নির্দিষ্ট করা থাকে। বাড়তি চালালে মালিককে বাড়তি টাকা দিতে হয়। সব খরচ মিটিয়ে নিজেদের আয় বাসায় নিতে হয় চালক-শ্রমিককে। এ জন্যই চালক যাত্রী ওঠানো-নামানো ও অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লাপাল্লির প্রতিযোগিতায় নামেন।
সামগ্রিক বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় বাস চলাচলের অনুমতি দেয় যে কমিটি, তাতে সরকারি কর্মকর্তা আর মালিক-শ্রমিক নেতারাই সদস্য। রাস্তার ধারণক্ষমতা ও যাত্রীচাহিদা নিরূপণ কিংবা শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার বৈজ্ঞানিক কোনো পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় না। পরিবহন কোম্পানি ও মালিকের যোগ্যতা যাচাইয়ের কোনো সুযোগ নেই। বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় আবেদন করলেই অনুমতি পেয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বাস চালানোর অনুমতি পেতে প্রতিযোগিতায় পড়তে হয় না। বরং রাস্তায় নেমে এক মালিক অন্য মালিকের সঙ্গে, এক চালক অন্য চালকের সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতা লিপ্ত হচ্ছেন।
অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, পরিবহন নেতা হওয়া, পদ পাওয়া ও চাঁদার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া-এটা লোভনীয় বিষয়। এই ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। পুরো বাসব্যবস্থা পাঁচ থেকে ছয়টা কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসতে হবে। আর দরকার অধিক ক্ষমতার একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার।