ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য পুতুল নাচ বিলুপ্তির পথে
তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বৈশাখী উৎসবে বাংলার গ্রামীণ জনপদে অন্যতম আকর্ষণ ছিল পুতুল নাচ। এছাড়া সারা বিশ্বে পুতুল নাচ লোকনাট্যের অন্যতম প্রতীক। আমাদের দেশে লোকনাট্যের এ মাধ্যম পতুল নাচের জন্ম বা প্রচলন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বিপিন পালের হাত ধরে। গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ও জৌলুসপূর্ণ বিনোদনের এ মাধ্যম আজ নানা কারণে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। আগের মতো পুতুল নাচে জৌলুস না থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ফলে খুব দ্রুত এ লোকনাট্যের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। লোকনাট্যের একটি প্রাচীন মাধ্যম হলো পুতুল নাচ। বৈশাখের মতো বিভিন্ন গ্রামীণ উৎসবে পুতুল নাচের ব্যাপক চাহিদা।
আরও : ‘আমার ছেলেকে নষ্ট করো না’
সামাজিক বিভিন্ন বিষয়, পালাগান, পৌরাণিক কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয় পুতুল নাচের মাধ্যমে। জনশ্রুতি রয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিপিন পাল ভারত বর্ষে প্রথম পুতুল নাচের প্রচলন করেন। কালক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। পরে এ শিল্পের হাল ধরেন জেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের গিরীশ আচার্য, তারু মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা এলাকার ধন মিয়া, কালু মিয়া, রাজ হোসেনসহ অনেকে।কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা গেলেও এখন শিল্পী সংকট দেখা দিয়েছে। অন্য পেশায় আর্থিকভাবে লাভবান হন বলে শিল্পীরা এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। পুতুল নাচের শিল্পীরা বলেন, আমরা ওয়ারিশ সূত্রে এই পেশায় এসেছি। দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে পুতুল নাচ দেখিয়ে মানুষদের আনন্দ দিতাম। বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকতো এবং অনেক প্রজেক্টের কাজও করতাম। এখন আর তেমন কাজ পাই না।
পুতুল নাচকে টিকিয়ে রাখতে পরবর্তী প্রজন্ম আসতে দিবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের এ কাজটা এখন শিখাতে চাই না। কারণ আমাদের নিজেদের এখন দূর অবস্থা। যার কারণে ছেলে-মেয়েদের অন্য কাজের দিকে মনোযোগী হতে হচ্ছে। দিন দিন এ খেলাটি বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারে সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান তারা। বাণী বিণা দলের মাস্টার কবির হোসেন বলেন, ৩০ বছর ধরে পুতুল নাচের মাধ্যমে নাটক এবং বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান করে আসছি।