ছাত্র মৃত্যুর গুজব ছড়ানোয় মামলা হচ্ছে ইমরানের বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ছাত্র মৃত্যুর গুজব ছড়ানোয় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের পর এই গুজব ছড়ানোর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে ব্যাপক হামলা হয়। হামলাকারীরা বাসভবনের দুটি গাড়ি ছাড়াও ভবনের ভেতর থেকে আসবাবপত্র বের করে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। লুটপাট করে স্বর্ণালঙ্কার ও প্রত্নতাত্ত্বিক নানা মূল্যবান জিনিস।
এই ঘটনায় হামলাকারীদের শনাক্তের পাশাপাশি ফেসবুকে কারা ছাত্রের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল তাদেরকেও শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে মঙ্গলবার সচিবালয়ে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, এদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রদের যে দাবি, এই দাবিকে তারা যৌক্তিক মনে করছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অবগত। তার মুখে ‘নো’ বলে কোনও শব্দ নাই। কিন্তু মিথ্যা. ভুয়া তথ্য দিয়ে ছাত্রদের উত্তেজিত করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুকে একজনের মৃত্যু সংবাদ যে ছড়িয়েছে তাকে শনাক্তের চেষ্টা হচ্ছে। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হবে। এই ঘটনা ছাত্রদের উত্তেজিত করেছে।’
যারা ফেসবুকে এই তথ্য দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। পরে অবশ্য তিনি সেই পোস্ট ভুল জানিয়ে তা মুছে দেন।
গুজব ছড়ানোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হলে ইমরানের কী হবে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান একজন সংবাদিক।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ইমরান এইচ সরকার ছাড়াও অনেকে আছে। ওই রাতে মৃত্যুর খবর নিয়ে যে গুজব ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা হবে।’
এদিকে ছাত্রের মৃত্যুর বিষয়ে পোস্ট দেয়া ইমরান এইচ সরকার ফেসবুকেই একজন মন্তব্যকারীর প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিউজটি দিয়েছিলাম একাত্তর টিভিতে আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের বক্তব্য দেখে। সত্য-মিথ্যা নিশ্চিত করতে না পেরে পোস্ট ডিলিট করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ইমরানকে নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের বিষয়টি নিয়েও ফেসবুকে ইমরানকে জানান একজন মন্তব্যকারী।
ফজলে রাব্বী নামে একজন ইমরানকে বলেন, ‘ভাই ওরা এখন আপনাকে ইন্ধনদাতা হিসাবে গ্রেপ্তার এর জন্য জোরালো দাবি জানাচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট।’
জবাবে ইমরান লেখেন, ‘এসবকে ইমরান সরকার পরোয়া করে না। গ্রেপ্তার করলে করুক। তারপরও ন্যায্য যা তাই বলব।’
যে ছাত্রের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল, সেই ছাত্রের ভূমিকায় প্রশংসা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, “যে ছেলেটির মৃত্যু সংবাদ ছড়ায়, সেই ছেলেটি পরবর্তীতে ফেসবুকে নিজের নাম পরিচয় দিয়ে ‘আমি মরিনি’ বলে যে স্ট্যাটাস দিয়েছে, এটি একটি ভালো কাজ। এই স্ট্যাটাস দেখার পর অনেকেই শান্ত হয়েছে।”
‘এই হামলা ছাত্ররা করতে পারে না’
হামলার পরদিন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেন, ‘ছাত্ররা আন্দোলন করতেই পারে। আমরাও করেছি। কোনও ছাত্র এই কাজ করতে পারে না। ছাত্ররা মুখোশ পড়বে কেন?’।
ওই বাড়িতে মুখোশ পরে আগে নারী এবং পরে পুরুষ হামলাকারীরা ঢুকেছিল বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘তার (উপাচার্য) পরিবারের লোকজন ভয়ে ঘর থেকে বের হয়ে বাগানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ভিসিকে নানাভাবে নাজেহাল করা হয়েছে। সচেতন সমাজ এটি সমর্থন করতে পারে না।’
অন্য এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘কোনও রাজনৈতিক নেতাকর্মী এই কাজে জড়িত আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
‘নীলক্ষেত প্রান্ত দিয়ে এসব সন্ত্রাসীরা ঢুকেছে। হাজার খানেকেরও বেশি মানুষ ঢুকেছে। যে কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘হামলায় কারা জড়িত তা শনাক্তে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারের সব বিভাগ কাজ করছে। এদের শনাক্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’
‘ছাত্রলীগ জড়িত নয়’
উপাচার্যের বাসভবনে হামলায় ছাত্রলীগকে জড়িয়ে বিএনিপ নেতা রুহুল কবির রিজভী যে অভিযোগ করেছেন, সে বিষয়টি নিয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকরা।
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, কোনও ধরনের নাশকতার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত নয়। ফেসবুকে ছাত্রলীগের নামে অপপ্রচার হয়েছে।’