বুধবার, ১১ই এপ্রিল, ২০১৮ ইং ২৮শে চৈত্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

শাহবাগে বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিপেটা-কাঁদানে গ্যাস (ভিডিও)

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা ও তাঁদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। আজ রোববার রাত পৌনে আটটার দিকে পুলিশ চড়াও হলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় জলকামানও ব্যবহার করা হয়। শাহবাগ, ঢাকা, ৮ এপ্রিল। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে সরে এসে চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে কাঁদানে গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে আন্দোলনকারীরা আগুন জ্বালিয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। কয়েকজন আন্দোলনকারী, পথচারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

আন্দোলনকারীদের দিকে ডাবের খোসা নিক্ষেপ করছেন এক পুলিশ সদস্য। শাহবাগ, ঢাকা, ৮ এপ্রিল। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

কেন্দ্রীয়ভাবে আজ রোববার বেলা দুইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে এই পদযাত্রা শুরু হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে রাজু স্মৃতি ভাস্কর্য হয়ে নীলক্ষেত ও কাঁটাবন ঘুরে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন তাঁরা।

কোটা সংস্কার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের দাবি, বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সংস্কার করে কমাতে হবে। চাকরিতে কোটা সব মিলিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রোববার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। রাত পৌনে আটটার দিকে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে সেখান থেকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। শাহবাগ, ঢাকা, ৮ এপ্রিল। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশসন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছিলেন। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা শাহবাগের মূল রাস্তায় অবস্থান নেওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সে সময় আন্দোলনকারীরা বলছিলেন, কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট আলোচনা শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং শাহবাগ মোড়ে অবস্থান অব্যাহত রাখবেন।

তখন থেকে শাহবাগ মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এ সময় আন্দোলনকারী ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিতে দেখা যায়। পুলিশ একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকার শাহবাগে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৫৫ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের অগ্রাধিকার কোটা রয়েছে। আর বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধা কোটায়। এ জন্য এই কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রামে গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, চট্টগ্রাম। দামপাড়া, চট্টগ্রাম। ছবি: জুয়েল শীল

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার বিকেল সোয়া পাঁচটা থেকে এ অবরোধ শুরু হয়। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল।

অবরোধের ফলে মহাসড়কের উভয় দিকে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, কোটার কারণে মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে না। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন  বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। আমরা তাঁদের মহাসড়ক ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করছি।’


ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ

কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় গেটের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করছি। আমরা চাই, সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবির কথা বিবেচনা করে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত জানাবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কিছুদিন ধরে ই-আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না। আমরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এভাবে প্রতিদিন আন্দোলনে নামতে চাই না। আমরা আমাদের দাবির বাস্তবায়ন চাই।’

কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী, ৮ এপ্রিল, ২০১৮। ছবি: শহীদুল ইসলামকোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী, ৮ এপ্রিল, ২০১৮। ছবি: শহীদুল ইসলামশিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো: কোটার শূন্য পদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, চাকরির পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একবারের বেশি নয়, কোটায় বিশেষ নিয়োগ বন্ধ এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অভিন্ন করতে হবে।

এর আগে বেলা দুইটায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন। পদযাত্রায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পদযাত্রাটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট দিয়ে বেরিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে যায়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে ক্যাম্পাসের পরিবহন মার্কেটের সামনে আসে। সেখানে তাঁরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লুৎফর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ময়মনসিংহে রোববার বেলা তিনটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীরা। কমপক্ষে তিন ঘণ্টা মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখা হয়। তবে এ সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন ময়মনসিংহের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বই-খাতা মহাসড়কের ওপর রেখে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। ময়মনসিংহ বাইপাস মোড়, ৮ এপ্রিল ২০১৮। ছবি: আনোয়ার হোসেনকোটা সংস্কারের দাবিতে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন ময়মনসিংহের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বই-খাতা মহাসড়কের ওপর রেখে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। ময়মনসিংহ বাইপাস মোড়, ৮ এপ্রিল ২০১৮। ছবি: আনোয়ার হোসেনআন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শিকারিকান্দা মোড়ে শিক্ষার্থীরা সমবেত হন। পরে প্রায় এক ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় তাঁরা ‘সরকারি আমলার’ কুশপুতুল দাহ করেন।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম  বলেন, শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা সরে যাননি।

Print Friendly, PDF & Email