নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে : সুরা তুর
সুরা তুরের ১৭ নম্বর আয়াতে ও এর পরের কয়েকটি আয়াতে খোদাভীরুদের জন্য নির্ধারিত অশেষ পুরস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলছেন: ‘নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে। তারা উপভোগ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আজাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন।’
বেহেশতবাসীরা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নানা নেয়ামত পেয়ে খুশি হবেন এবং তারা এ প্রসঙ্গে আনন্দজ্ঞাপক ও সুমিষ্ট নানা কথা বলবেন। সেখানে তাদের অন্তর সব ধরনের দুঃখ ও বেদনা থেকে মুক্ত হবে এবং তারা নজিরবিহীন প্রশান্তি অনুভব করবেন। বিশেষ করে মহান আল্লাহ তাদেরকে শাস্তিমুক্ত রাখার নিশ্চয়তা দেয়ায় এবং তাদেরকে দোযখের শাস্তি থেকে মুক্ত রাখায় তারা অপার সুখ ও শান্তি অনুভব করবেন। বেহেশতে তাদেরকে বলা হবে:
‘তোমরা যা করতে তার প্রতিফল হিসেবে তোমরা তৃপ্ত হয়ে পান ও আহার কর।’
-এটা স্পষ্ট বেহেশতের নানা ধরনের খাবার ও পানীয় দুনিয়ার নানা খাবার ও পানীয়ের মত নয় এবং সেসবে অনাকাঙ্ক্ষিত নানা প্রতিক্রিয়া থাকে না। বেহেশতের সুখের উপকরণ ও নেয়ামতগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও নেই। তাই এসবই পুরোপুরি উপভোগ্য।
সারিবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে পুরোপুরি প্রশান্ত-চিত্তে বসার ব্যবস্থাও হবে অন্যতম বেহেশতি সুখ। ফলে তারা বন্ধুদের ঘনিষ্ঠতাকেও ব্যাপক মাত্রায় উপভোগ করবে। এ ছাড়াও সুরা তুরে মহান আল্লাহ বলছেন,আয়তলোচনা সুন্দরী হুরদেরকে বিয়ে দেয়া হবে বেহেশতি পুরুষদের সঙ্গে।
এরপর সুরা তুরের ২১ নম্বর আয়াতে বেহেশতের আরও কিছু আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত নেয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলছেন:
‘যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী,আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলন ঘটিয়ে দেব এবং তাদেরনেক আমলের প্রতিদান বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।’
ঈমানদার সন্তান ও প্রিয় বংশধরদেরকে বেহেশতে নিজের কাছে পাওয়া বড় ধরনের এক নেয়ামত তথা খোদায়ী অনুগ্রহ। তাদের প্রতি ভালবাসার সুযোগ অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক বিষয়। কিন্তু এর বিনিময়ে বেহেশতিদের কোনো নেয়ামত ও পূন্য কমানো হবে না। এ ধরনের সন্তানরা ঈমানের পথে পিতৃপুরুষদের অনুসরণ করতে গিয়ে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি বা উদাসীনতার শিকার হলেও মহান আল্লাহ সৎকর্মশীল পিতৃপুরুষদের সম্মানে তাদের সন্তানদেরকেও ক্ষমা করে দেবেন এবং তাদেরকেও দেবেন উচ্চ মর্যাদা। আর এটা পিতৃপুরুষদের ও তাদের বংশধর উভয়ের জন্যই মহান আল্লাহর এক মহাপুরস্কার।
বেহেশতবাসীদের অশেষ প্রশান্তি ও সুখের জন্য যা যা দরকার তার সব কিছুরই ব্যবস্থা করেছেন মহান আল্লাহ। আর এসব বিষয়ে কিছু বর্ণনার পর বেহেশতি ফল ও খাবার সম্পর্কে বক্তব্য এসেছে সুরা তুরের আয়াতে। বেহেশতের এইসব খাবার ও ফলও চিরস্থায়ী। সুরা তুরের ২২ থেকে ২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:
‘আমি তাদেরকে দেব ফল-মূল এবং গোশত্ যা তারা চাইবে। সেখানে তারা একে অপরকে সুরাপূর্ণ পানপাত্র দেবে;যাতে অসার বকাবকি নেই এবং পাপও নেই। দেখতে সুরক্ষিত মোতির মত কিশোররা তাদের সেবায় ঘুরাফেরা করবে। তারা একে অপরের দিকে মুখ করে এতোসব সাফল্যের কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করবে। তারা বলবেঃ আমরা ইতোপূর্বে দুনিয়ায় নিজেদের ঘরে পরিবারের মধ্যে আজকের দিনের শাস্তি সম্পর্কে ভীত-কম্পিত ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন। আমরা আগেও আল্লাহকে ডাকতাম। তিনি সৌজন্যশীল,পরম দয়ালু। ‘
একদল অবিশ্বাসী মানুষ কুরআনকে ইসলামের নবীর (সা) রচিত বই বলে মনে করে। এই কাফিররা বলে যে ইসলামের নবী কুরআনকে আল্লাহর বাণী বলে যে দাবি করে থাকে তা মিথ্যা দাবি মাত্র। গোঁড়া ইসলাম-বিদ্বেষী অবিশ্বাসীরা এই ভিত্তিহীন দাবির অজুহাতে ইসলামের নবী ও কুরআনের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করত বলে এ মহাগ্রন্থে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা তুরের ৩৪ নম্বর আয়াতে কাফিরদের এই দাবির দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে মহান আল্লাহ বলছেন: ‘যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে,তবে এর অনুরূপ কোনো রচনা উপস্থিত করুক।’-অর্থাৎ মহান আল্লাহ বলছেন, এই কুরআন যদি মানুষের চিন্তা-প্রসূত ও মানুষের রচিত হয়ে থাকে তাহলে তারা এর অনুরূপ রচনা নিয়ে আসুক। কারণ মানুষের রচিত নানা রচনার সঙ্গে যদি কুরআনেরও মিল থেকে থাকে তাহলে তো মানুষও কুরআনের বাণীর অনুরূপ বাণী রচনা করতে পারে। কিন্তু সবার কাছেই এটা স্পষ্ট যে কুরআনের অপূর্ব ভাষা-শৈলী, এর বিষয়বস্তু, নানা ভবিষ্যদ্বাণী, অতীতের অজানা অনেক ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা ও ইতিহাস এবং নানা অচিন্তনীয় ও অভিনব তথ্য -এসবই প্রমাণ করে যে কুরআন মহান স্রস্টারই রচনা।
তাই মহান আল্লাহর এই চ্যালেঞ্জ তথা ‘যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে,তবে এর অনুরূপ কোনো রচনা উপস্থিত করুক।’- বিশেষ কোনো যুগের জন্য নয় বরং তা সব যুগের মানুষকেই দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহর এই চ্যালেঞ্জের ইতিবাচক জবাব আজও কেউ দিতে পারেনি যদিও কুরআন নাজিল হওয়ার পর ১৪টি শতক পার হয়ে গেছে। আর তাই ইসলামের শত্রুরা পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও ইসলাম-বিদ্বেষী নানা প্রচারণায় এখনও বিপুল অঙ্কের অর্থ অপচয় করছে।
কুরআন ও ইসলামের মোকাবেলায় তাদের এতো বিপুল অর্থ অপচয় ও পণ্ডশ্রম পবিত্র এই মহাগ্রন্থ এবং পবিত্র এই ধর্মের অলৌকিকতারই প্রমাণ। কুরআন যে আসমানি গ্রন্থ তা ফুটে উঠেছে ইসলামের শত্রুদের এইসব ব্যর্থতা থেকেও।
সুরা তুরের শেষ আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ রাসুলকে বলছেন তিনি যেন ধৈর্য ও দৃঢ়তা তথা প্রতিরোধ বজায় রাখেন এবং নিজের মন ও আত্মাকে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে আলোকিত ও আনন্দময় করেন। অন্য কথায় বিশ্বনবী (সা) যেন এসবের মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছেই মদদ চান।