গিবত করা মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সমান
ফিরোজ আহমাদ : কোনো ব্যক্তির অগোচরে কুৎসা রটানো, দোষ বলা, অপবাদ দেয়া কিংবা দুর্নাম প্রচার করাকে গিবত বলে। গিবত মুমিনের পারিবারিক-সামাজিক সম্প্রীতি ও মমত্ববোধ বিনষ্ট করে। গিবত করা আল্লাহ তায়ালার কাছে অপছন্দনীয় কাজ। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মন্দ কথা প্রচার করা আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারো ওপর অবিচার করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (সূরা নিসা : ১৪৮)। আর যেসব ব্যক্তি গিবত করার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট অপছন্দনীয় হবেন; তাদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ সা: দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই এ দুই কবরবাসীকে আজাব দেয়া হচ্ছে। তবে বড় কোনো অপরাধের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না; বরং এই কবরবাসী পেশাব করার সময় সতর ঢাকত না। আর ওই কবরবাসী গিবত করে বেড়াত। (বুখারি : ৫৬২৬)।
কারো প্রতি গিবত করতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিষেধ করেছেন। গিবত করা আর আপন মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া একই কথা।
কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপো উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপো উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।
ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাকো। কারণ, অনুমান কোনো কোনো েেত্র পাপ। এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তাহার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণাই করো। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজরাত : ১১-১২)। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, তোমরা আন্দাজ-অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অনুমান করে কথা বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। (বুখারি : ২২৮৭, মুসলিম : ২৫৬৩)।
কিয়ামতের ময়দানে গিবতকারীর পরিণাম ভয়াবহ হবে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ রয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য, যে সামনে ও পেছনে নিন্দা করে।’ (সূরা হুমাজাহ : ১)।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই বান্দা এমন কিছু কথা বলে; যে কথার পরিণাম সম্পর্কে চিন্তাও করে না। অথচ এ কথা বলার কারণে সে নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামের এমন গভীরে; যার দূরত্ব মাশরিক থেকে মাগরিবের দূরত্বের চেয়ে অধিক। (বুখারি : ৬০৩৩)।
আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে অপছন্দনীয় কাজ গিবত করা ও শোনা থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে। কারণ, গিবত-পরনিন্দার মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে একে অপরের দূরত্ব তৈরি হয়। সামাজিকভাবে দূরত্ব তৈরি হলেই পারস্পরিক বৈরিতা সৃষ্টি হয়। আর বৈরিতা থেকে হানাহানি, মারামারি ও কলহ সৃষ্টি হয়। সুতরাং গিবতের মতো ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকতে আল্লাহ তায়ালা সবাইকে তৌফিক দান করুক। আমিন।
লেখক : প্রবন্ধকার