গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে বাদী
বিনোদন ডেস্ক : নাট্যপরিচালক সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন এক তরুণী গৃহবধূ।
শুক্রবার রাজধানীর শ্যামপুর থানায় মামলা করার পর থেকে গৃহবধূ কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (৩০) ও তার পরিবারের সদস্যদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। পর্নোগ্রাফি সরবরাহের অভিযোগে সুমাইয়ার করা মামলার তদন্ত করছে থানা পুলিশ।
এর পাশাপাশি সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনও তদন্ত করছে। তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি গাজী রাকায়েত।
মামলার এজাহারে সুমাইয়া উল্লেখ করেন, মেসেঞ্জারে কথা বলার সময় (২৭ ফেব্র“য়ারি রাত ৩টা ১ মিনিট) গাজী রাকায়েত তার ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন অশ্লীল, অনৈতিক ও ধর্মীয় অনুভূতি-পরিপন্থী ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন ও প্রস্তাব দেন। এ সময় আমি তাকে এসব বন্ধ করতে বলি। কিন্তু তিনি আমার কথায় কর্ণপাত না করে জঘন্য যৌন উত্তেজনাপূর্ণ কথা বলে আমায় প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেন ও উত্ত্যক্ত করেন। গাজী রাকায়েত একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তার আইডি থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত হই। মেসেঞ্জারের কথোপকথনটি স্ক্রিনশট দিয়ে তা একটি ক্লোজ গ্রুপে পোস্ট দিই। এ পোস্টের পর ৬ মার্চ গাজী রাকায়েত জানায়, তার দুটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে।’
শ্যামপুরের পোস্তগোলা এলাকার সুমাইয়া আরও বলেন, ঘটনার পর আমি সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমার দাম্পত্য জীবন সংকটে পড়েছে। বিষয়টি আমার বান্ধবী মানবাধিকার কর্মী অপরাজিতা সঙ্গীতাকে জানাই। এরপর সঙ্গীতা ফেসবুকের মাধ্যমে গাজী রাকায়েতের সঙ্গে জানতে চান কবে তার অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে? রাকায়েত এ প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিলে সঙ্গীতা ওই কথোপকথনের (রাকায়েত-সঙ্গিতা) স্ক্রিনশট ফেসবুকে পোস্ট করেন। এর পরদিন আমাকে ও সঙ্গীতাকে ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিভিশন প্রযোজক সমিতি ও শিল্পী সমিতি নিকেতন অফিস তলব করে। বিষয়টি তদন্ত করার আশ্বাস দেয় তারা। পাশাপাশি সঙ্গীতার ফেসবুক পোস্টটি হাইড করে রাখতে বলা হয়। সেই অনুযায়ী ১০ মার্চ থেকে সঙ্গীতার ফেসবুক পোস্টটি হাইড (অনলি মি) করে রাখা হয়েছে।
সুমাইয়ার অভিযোগ, ১০ মার্চের পর থেকে তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। আপস-মীমাংসার নামে বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়া হয়। সঙ্গীতার ওপর বিভিন্ন চাপ দিয়ে পরোক্ষভাবে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এসব বিষয় উল্লেখ করে ১৭ মার্চ শ্যামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং ১৩ মার্চ সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনে অভিযোগ করি। অন্যদিকে এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় গাজী রাকায়েত বাদী হয়ে ১৬ মার্চ সঙ্গীতার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় একটি মামলা করে। পাশাপাশি অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য তার ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুমাইয়ার ভাই বলেন, মামলা করার পর আমরা এখন বিপাকে আছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজী রাকায়েতের পক্ষে আছে বলে ভয় দেখানো হচ্ছে। ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করতে বলে। কিন্তু তা না করে আমরা পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেছি। কেন ৫৭ ধারায় মামলা করলেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫৭ ধারা একটি কালো ধারা। আমরা এর বিরোধী। কিন্তু গাজী রাকায়েত আমার বোনের বান্ধবীর বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করে অযথা হয়রানি করছেন।
এ বিষয়ে গাজী রাকায়েত বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, আমি কেন একজন মেয়ের সঙ্গে ভোররাতে কথা বলতে যাব? আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল। সেটি বোধহয় আপনার জানা নেই। কবে হ্যাক হয়েছিল? কারা হ্যাক করেছিল? কীভাবে ফের সচল হল এসব জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না।
এ প্রসঙ্গে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি বলেন, গাজী রাকায়েত উদ্ভট সব যুক্তি হাজির করছেন, ‘কখনও বলেন যে তার আইডি কয়েকজন মিলে চালায়, কখনও বলেন তার কাজের লোক আইডি চালায়, কখনও বলেন তার আইডি হ্যাক হয়ে গেছে।’
আরিফ জেবতিক বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা অনলাইনে লড়ব, রাস্তায় লড়ব, আদালতে লড়ব। দেখতে চাই, ক্ষমতার দাপট বড়, না সাধারণ মানুষের শক্তি বড়। সঙ্গীতার বিরুদ্ধে গোপনে মামলা করেছে গাজী রাকায়েত। আজ সঙ্গীতার পাশে না দাঁড়ালে কাল আরেক সঙ্গীতা এসে আমার-আপনার মতো মানুষের পাশে দাঁড়াবে না।’
শ্যামপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, মামলার প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এসআই মাহবুব আলমকে। বিষয়টি নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনও ছায়া তদন্ত করছে। শ্যামপুর থানার পরিদর্শক শাহীনুর রহমানও একই ধরনের তথ্য জানান। সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের উপকমিশনার আলীমুজ্জামান বলেন, গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে যেমন মামলা হয়েছে, তেমনি গাজী রাকায়েতও মামলা করেছেন। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র : যুগান্তর