রবিবার, ১৮ই মার্চ, ২০১৮ ইং ৪ঠা চৈত্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

‘টেনে বের না করলে বিমানেই পুড়ে মরতাম’

নিউজ ডেস্ক : নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত শাহরিন আহমেদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ড. সামন্ত লাল সেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে আহত শাহরিনকে নেপাল থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি বিকাল ৫টায় ঢাকা মেডিকেলে এসে পৌঁছায়। এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন এবং ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন তাকে রিসিভ করেন, এরপর আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
আহত শাহরিন আহমেদ তার ভাই ক্যাপ্টেন সরফরাজকে বলেছেন, ‘বিমান বিধ্বস্তের পর নেপাল আর্মির সদস্যরা যদি আমাকে টেনে না তুলতেন, তাহলে আমি ওখানেই আগুনে পুড়ে মারা যেতাম। শাহরিনের পায়ে একটা ভাঙা আছে। সেটার অপারেশন লাগতে পারে। যেহেতু সে এক পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারছে, তাই তাকে আমরা দেশে আনতে পেরেছি।
তিনি আরো জানান, ‘শাহরিন যেহেতু সামনের সিটে বসে ছিল, তাই সে বেঁচে গেছে। সামনের দিকের সিটে যারা বসে ছিলেন তারা সবাই বেঁচে গেছেন। পেছনের দিকে যারা ছিলেন, তাদের বেশির ভাগই আহত বা নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার সময়ের কথা ও নিজের বেঁচে যাওয়ার স্মৃতিচারণ করার সময় শাহরিন কাঁদছিল। সে প্রচণ্ড ট্রমার ভেতর আছে।’
আহত শাহরিন স্কলাশটিকার সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার। তিনি একটা গ্রুপের সঙ্গে নেপাল বেড়াতে গিয়েছিলেন। ওই গ্রুপের বেশিরভাগই মারা গেছেন। অল্প কয়েকজন বেঁচে গেছেন।
এদিকে, ঢামেক হাসপাতালে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ড. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘শাহরিনের পায়ে একটা ফ্র্যাকচার আছে। শরীরে বার্ন হয়েছে পাঁচ শতাংশ। তাকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর কিছু পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার রেজাল্ট হাতে আসার পর জানা যাবে যে, তার কোনো অপারেশন লাগবে কিনা। তার অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো। ক্যাজুয়ালিটি যা হওয়ার হয়েছে, এখন যে অবস্থায় আছে সেখান থেকে আমরা তাকে সারিয়ে তুলতে পারব ।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সিরাজুল হক খান বলেন, ‘আমার জীবনে বাংলাদেশের বিমান দুর্ঘটনার এমন মর্মান্তিক ঘটনা এর আগে কখনো শুনিনি। আমাদের কাছে সবচেয়ে বেদনার দিক হচ্ছে, নেপাল থেকে আসা শিক্ষার্থী যারা রাগিব-রাবেয়া, শেখ সায়রা খাতুন ও কুমুদিনি মেডিক্যালে এমবিবিএস পরীক্ষা দেয়ার পর বাড়ি ফিরছিলেন, তারা পরিণত ডাক্তার হয়ে বাড়ির মাটি স্পর্শ করার আগেই পৃথিবী থেকে চলে গেলেন। এটা আমাদের জন্য খুবই মর্মান্তিক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এনায়েত হোসেন প্রমুখ।
Print Friendly, PDF & Email