যেভাবে ডিএনএ টেস্ট করা হয়
নিউজ ডেস্ক : যেসব মরদেহের পরিচয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় না ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিয়িক এসিড) টেস্ট করেই তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়। এজন্য নিহতের ডিএনএ প্রোফাইল করতে হয়। নিহতের সংখ্যা যদি বেশি হয় সেক্ষেত্রে প্রতিটি মরদেহের আলাদা আলাদা ডিএনএ প্রোফাইল করতে হয়। ডিএনএ প্রোফাইল টেস্টের এই পদ্ধতি বিশ্বজনীন স্বীকৃত। নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের মরদেহগুলোর ডিএনএ-ও একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হবে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মরদেহগুলো থেকে এবং নিহতদের স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করেন পরীক্ষক দল। নেপাল ও বাংলাদেশ উভয় দেশের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও একই পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ করবেন। এক্ষেত্রে ভিকটিম ও স্বজনদের নমুনার সংখ্যা প্রায় ৯০টি হবে। স্বজনদের নমুনা সংগ্রহের পর সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সময় বেশি না লাগলেও মরদেহের ডিএনএ টেস্টে সময় লাগবে। টেস্ট করার পর ম্যাচিং এবং কোনোটি না মিললে তা পুনরায় করা, এজন্য ভিকটিম ও তাদের স্বজনদের মোট ৮০/৯০ টি নমুনা পরীক্ষায় অন্তত এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে।
ডিএনএ টেস্টের প্রক্রিয়ার বিষয়ে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির (এনএফডিপিএল) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশীষ কুমার মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডিএনএ টেস্টের জন্য ভিকটিম বা মরদেহের দাঁত ও হাড় নমুনা হিসাবে সংগ্রহ করা হয়। অপর দিকে ভিকটিমের পরিবার বা স্বজনের রক্ত বা মুখের লালা সংগ্রহ করা হয়। কোনও কোনও সময় দুটিই সংগ্রহ করা হয়। নিহতদের নমুনাকে বলা হয় ‘মিসিং পার্সনস স্যাম্পল’ ও স্বজনদের নমুনাকে বলা হয় ‘রেফারেন্স স্যাম্পল’। রেফারেন্স স্যাম্পল টেস্ট করতে তেমন সময় লাগে না। এগুলো একদিনের ভেতরে দেওয়া সম্ভব। তবে ভিকটিমদের স্যাম্পল টেস্ট করতে এবং তা প্রোফাইলিং করতে একটু সময় লাগে।’
তিনি বলেন, ‘রেফারেন্স স্যাম্পলের আবার তিনটি ভাগ রয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়। প্রথম রেফারেন্স স্যাম্পল হচ্ছে বাবা-মা, সন্তান, ভাইবোন। দ্বিতীয় রেফারেন্স স্যাম্পল হচ্ছে দাদা-দাদি, নানা-নানি এরকম এবং তৃতীয় রেফারেন্স স্যাম্পল হচ্ছে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এমনকি কখনও কখনও পোশাক আশাকও নেওয়া হয়।’
প্রথমে বাবা-মা ও সন্তানদের নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়। তাদের না পাওয়া গেলে ভাইবোন, তাও না পাওয়া গেলে দাদা-দাদি, নানা-নানি। তাও না পাওয়া গেলে তৃতীয় ধাপের রেফারেন্স স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয় বলেও জানান তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিএনএ ল্যাবের এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পোশাক কারখানা রানা প্লাজা ধস ও তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের লাশ শনাক্তের প্রক্রিয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘এর আগে আমরা এই দুই ঘটনায় ডিএনএ স্যাম্পল টেস্ট করেছি। তখন ডাটাবেজ করা হয়েছিল। সেখানে ডিএনএ প্রোফাইল করে রাখা হয়েছে। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা প্রোফাইল রয়েছে।’
ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির (এনএফডিপিএল) ল্যাব প্রধান অধ্যাপক শরিফ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘নিকট অতীত ও বর্তমানে সারা বিশ্বের মধ্যে রানা প্লাজা ধস ছিল সবচেয়ে বড় দুর্যোগ। আমরা সেখানে নিহত শ্রমিকদের ডিএনএ টেস্ট করেছি। এই অভিজ্ঞতা অনেক দেশের নাই। যা আমাদের আছে। আমাদের সেই টেস্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আমাদের ল্যাব অত্যন্ত আধুনিক।’
নেপালে দুটি ডিএনএ ল্যাব থাকলেও তাদের এমন অভিজ্ঞতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নেপালের ল্যাব নিয়ে আমার তেমন অভিজ্ঞতা নেই। তবে আমাদের ডিএনএ টেস্ট সংক্রান্ত যে অভিজ্ঞতা আছে তা নেপালসহ আমাদের পাশের অনেক দেশের নেই।’
শরীফ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘রানা প্লাজায় অনেক ধরনের ভিকটিম ছিল। বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল। সেগুলো আমরা সব ঠিকঠাকভাবে করতে পেরেছি। সেই অভিজ্ঞতার তুলনায় নেপালের এই অভিজ্ঞতা আমাদের কাছে বড় না। তবে নেপালের কাছে বড়। তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ল্যাব সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। সরকার যেখানে চাইবে, সেখানেই ডিএনএ টেস্ট হবে। তবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’