নাসিরনগর উপ-নির্বাচন : উৎসব-আমেজ পরিলক্ষিত হয়নি কেন্দ্র ? জাতীয় পার্টির কারচুপির অভিযোগে পুনঃ নির্বাচন দাবি
মাজহারুল করিম অভি : কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে শান্তিপ‚র্নভাবে গতকাল মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-(নাসিরনগর) আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুব কম। শান্তিপ‚র্নভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচনে কোন উত্তাপ, উৎসব-আমেজ পরিলক্ষিত হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে। তবে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজোয়ান আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, নৌকার সমর্থকরা ৪০/ ৫০টি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে পুলিশের সহায়তায় ব্যালেট পেপারে সীল মেরেছে। তিনি এই নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান। সরজমিনে গতকাল সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে কুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোট কেন্দ্র ফাঁকা।
ভোট কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও কোন ভোটার নেই। এ কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ২৮২। তবে সকাল ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের ৪টি বুথে ভোট পড়ে মাত্র ৪৯ ভোট। পাশের ভোট কেন্দ্র কুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা তিনহাজার ৭৭৫। সকাল ৯টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট পড়ে মাত্র ৮৬টি। নাসিরনগর সদরের আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা চার হাজার ২৩৭। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৩০০টি। বুড়িশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এ কেন্দ্রের মোট তিন হাজার ৮৯৪ ভোটারের সকাল ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়ে ৪৭৪টি। উপজেলার পন্ডিতরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার তিন হাজার ২৩৪জন। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ফয়জুল করিম জানান, সকাল ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৩৫১টি।
বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আতুকোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে মহিলা ভোটারদের লাইন। ওই কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ৩৮৩। বেলা ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ৫৫৭টি ভোট পড়ে বলে জানান, কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সন্তোষ চন্দ্র রায়। চাপরতলা ইউনিয়নের খান্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মোট ভোটার দুই হাজার ৫৭৩। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট পড়ে মাত্র ৮৫০টি। একই ইউনিয়নের চাপরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার তিন হাজার ৬২৫। দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১ হাজার ১৩০টি। উপজেলার গুনিয়াউক ইউনিয়নের চিতনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় মহিলা ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। এই কেন্দ্রের মোট ভোটার দুই হাজার ৮৭০।
দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১ হাজার ২৬৭ ভোট। নাসিরনগরের প্রয়াত সংসদ সদস্য ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হকের নিজ গ্রাম প‚র্বভাগ এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুপুর ১টায় গিয়ে কোন ভোটারকে ভোট দিতে দেখা যায়নি। এই কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ৭১৯জন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১ হাজার ৭শটি। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নিজ ভোট কেন্দ্র ভুবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুপুর দেড়টার সময় গিয়ে কোন ভোটার দেখা যায়নি। তবে কেন্দ্রের বাইরে দু’দলের কর্মীদের দেখা গেছে। ওই কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা প্রায় তিনহাজার। তবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার ৪শত ভোটার ভোট দেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার পার্থ প্রতিম সোম। প‚র্বভাগ ইউনিয়নের স‚চীউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ভোটার দুই হাজার ৯৯।
দুপুর ২টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১হাজার। এদিকে বিকেলে নাসিরনগর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজোয়ান আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, নৌকার সমর্থকরা ৪০/৫০টি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে পুলিশের সহায়তায় ব্যালেট পেপারে সীল মেরেছে। তিনি বলেন, সকালে নৌকার সমর্থকরা চাতলপাড় ইউনিয়নের ৭টি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্ট বের করে দিয়ে পুলিশের সহায়তায় ব্যালেটে নৌকা মার্কায় সীল মারে। দুপুর তিনটার পর সরকারি দলের সমর্থকরা উপজেলার ভলাকুট, গোয়ালনগর ইউনিয়নের সবকটি কেন্দ্রসহ, উপজেলার ন‚রপুর, স‚চিউরা ভোট কেন্দ্র দখল করে নৌকা মার্কায় সীল মারে।
তিনি এই নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান। এ ব্যাপারে নির্বাচনে সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ শফিকুর রহমান জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শান্তিপ‚র্বভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ সম্প‚র্ন বানোয়াট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী তাদের কাছে কোন অভিযোগ করেনি। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তিনি বলেন, শান্তিপ‚র্নভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম।