‘বাবা আমি কি মইরা যামু আমারে বাঁচানো যায় না?’
ফয়সল আহমেদ খান , বাঞ্ছারামপুর : ‘বাবা, আমি কি মইরা যামু..আমারে বাঁচানো যায় না। আমারে বাঁচান। আমারে যদি বাঁচাইতে বেশী টাকা লাগে তইলে বাঁচানো দরকার নাই। ‘বাবার কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই আর্তনাদ এক ধর্ষিতা শিশুর।
শিশুটি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পাহাড়িয়াকান্দি ইউপির ব্যাপারীবাড়ির অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আবদুস সালাম মিয়ার বাসার গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো। এর মাঝেই সালাম মিয়ার লালসার শিকার হয় শিশুটি। অভিযোগ উঠেছে সালাম মিয়া বাড়ি ফাঁকা পেয়ে টানা ৬ দিন ধরে একাধারে ওই শিশুকে ধর্ষণ করেন। আজ সকালে (শনিবার) তার শারিরীক অবস্থার মারাত্বক অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা থেকে মুঠোফোনে শিশুটির পিতা সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের দিনমজুর তার একমাত্র মেয়েকে অভাবের তাড়নায় একই উপজেলার পাহাড়িয়াকান্দি গ্রামের কৃষি কর্মকর্তা আবদুস সালাম মিয়ার বর্তমান আবাসস্থল নরসিংদীর ভেলানগরের বাসায় কাজের জন্য দেয়।
মেয়েটির পিতা জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সালাম মিয়ার স্ত্রী ঢাকায় চলে গেলে মেয়েটা আর সালাম মিয়া ছাড়া বাসায় কেউ ছিল না। এই সুযোগে ঐ দিন থেকে কয়েকদিন একাধারে তার মেয়েকে ধর্ষণ করতে থাকে। এতে ওই শিশুর রক্ষক্ষরণ হওয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি শিশুটি তার পরিবারকে বিষয়টি ফোনে জানায়। ৬ মার্চ রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় শিশুকে বাঞ্ছারামপুরে পিতার কাছে পাঠিয়ে দেয় সালাম মিয়া। তাকে তাৎক্ষণিক পল্লী চিকিৎসক দেখানো হলে সেই চিকিৎসক বাঞ্ছারামপুর সরকারি হাসপাতালে শিশুটিকে পাঠায়।
তিনি আরো জানান, স্থানীয় সরকারি চিকিৎসক ডা.ফাহরিন রুবাইয়া হোসেন পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতি গুরুতর দেখে ঐদিন দুপুরে (মঙ্গলবার) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ওয়ানষ্টপ ক্রাইসিস ওয়ার্ডে পাঠায়। বর্তমানে আমরা এখানেই আছি। মেয়ে সুস্থ হলে আমি এই বিষয়ে মামলা করে বিচার চাইবো।
এই বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. সাব্বির রহমান বলেন, ‘মেয়েটিকে নিয়ে তার বাবা যখন সরকারি হাসপাতালে আসে তখন বিষয়টি জেনে নিজ উদ্যোগে মেয়েটিকে হাসপাতালে দেখতে যাই এবং মেয়েটির পিতাকে ঘটনাস্থল নরসিংদী থানায় মামলা করতে পরামর্শ দেই’।
নরসিংদী জেলার ভেলানগর ফাড়ির এএসআই আইরিন সুলতানা মুঠোফোনে জানান, ‘আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব, তবে ঘটনাটি জেনে নিজ দায়িত্বে অভিযুক্ত সালাম মিয়ার বাড়িতে যেয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি পলাতক।’
অভিযুক্ত সালাম মিয়া ও ধর্ষিতা শিশুর সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মো.গাজিউর রহমান, মো.তাজুল ইসলাম ও ওয়ার্ড মেম্বার মোহন মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকার দরিদ্র দিনমজুরের মেয়ে আজ মৃত্যুশয্যায়। ধর্ষক সালাম মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি’।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে অভিযুক্ত সালাম মিয়া নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে দিয়ে বলেন, ‘এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে নিউজ করলে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করবো। মেয়েটির বাবার সাথে আমরা আপোষ করে নিবো, আপনারা বাড়াবাড়ি করবেন না’।