বাঞ্ছারামপুরে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ ও নদী ভাঙ্গন রোধে মানববন্ধন
ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর : হাতে লাঠি ভর করে ৭৫ বয়সী নি:স্ব মজিদ ব্যাপরী মানববন্ধনে কোন রকম দাড়িয়ে থাকেন।মুখে কোন শব্দ নেই।বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন আরো ১ যুগ আগে,যখন মেঘনার করালগ্রাসে বৈষয়িক সব খুইয়েছেন।৯ ক্লাশ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।এক সময় এই মজিদ ব্যাপারীর সব কিছু ছিলো।চৌচালা টিনের ভিটেঘর,৭ বিঘা ধানীজমি,বড় উঠান,বাংলা ঘর সবই ছিলো।কিন্তু,সর্বগ্রাসী বালুদস্যূদের বালি উত্তোলনের কারনে নদী ভাঙ্গনে তার সবই ভক্ষন করেছে মেঘনা নদী।আজ তিনি অন্যের আশ্রয়ে থাকেন।তিনি অস্ফুট কন্ঠে আকুতি জানিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে বলেন-‘সাংবাদিক-একটু লেখেন।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যেনো দেখে।দেখে যেনো আমাদের জয়কালিপুর,শান্তিপুর, মরিচাকান্দি সীমানায় অসংখ্যা বালু কাটার ড্রেজার বন্ধ করে দেয়।নতুবা,মানচিত্র হতে একের পর এক গ্রাম বিলীন হতে থাকবে।’
মজিদ ব্যাপারীর সাথে মানববন্ধন করতে এসেছেন রফিক মাষ্টার।তিনি বলেন,-‘দিনের পর দিন,মাসের পর মাস,বছরের পর বছর প্রকাশ্যে দিবালোকে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নরসিংদীর মতিন মিয়া গং ডজনে ডজন ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করছে।পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে বাঞ্ছারামপুরের মেঘনানদী সংলগ্ন এক ডজন গ্রাম দিন কি দিন বিলীন হতে চলেছে।প্রশাসনকে জানালে লাভ হয় না।তারা মনে করেন আমরা অযথা হিংসাবশবর্তী হয়ে ১২ কি:মি: দূর থেকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রশাসনের কাছে খামোখা এসেছি।তবে,কি হাতে ভিক্ষার থালা নিয়া আসলে উনারা (প্রশাসন)বিশ^াস করবে,যে আমরা নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হচ্ছি?’’
খোজ নিয়ে জানা গেছে,ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দির মেঘনা নদী থেকে বালু উৎপাদনের কারণে এলাকার উলুকান্দি, মরিচাকান্দি, ডোমরাকান্দি,জয়কালিপুর,চরমরিচাকান্দি,শান্তিপুর,বাহেরচর,নগরীরচর, কড়িকান্দি গ্রামের নদী ভাঙ্গন এর হাত থেকে রক্ষায় গ্রামের নারী,পুরুষ,শিশু,জনপ্রতিনিধি ও সাধারন জনতা জনসাধারন আজ সকাল ১১ টায় বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে কয়েক হাজার লোক সমবেত হয়ে মানব বন্ধন করে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা ভূমি অফিসার এর কাছে স্মারক লিপি প্রদান করে।
মানববন্ধনের বক্তাদের মধ্যে কাশেম মেম্বার,রফিক মাষ্টার,মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন,-‘আমাদেরকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করুন।মেয়াদ শেষে ইজারা মুক্ত করার জন্য আমরা আগেও অভিযোগ করেছি। এবারও মানব বন্ধন করছি সামনে আরো কঠোর কর্মসুচি রাখবো।এখানে ৩টি ড্রেজার চলার কথা থাকলেও তা বেড়ে ২০-২৫ টি ড্রেজার দ্বারা বালু উওলোনের কাজ চলছে। আর এদিকে আমাদের জমি ভাঙ্গন শুরু করেছে। ফলে কয়েকটি গ্রামের লোকজন একত্রে আমরা গ্রামবাসির ফসলি জমি, বসতবাড়ি, ভেঙ্গে যাচ্ছে, জমি এবং ফসল হারাচ্ছে অসহায় এই গরিব দুঃখি মানুষগুলো। তারা থাকার জায়গাও পাবে না।কয়দিন পর সবাইকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
এ নিয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা এসিল্যান্ড (ভুমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.আলমগীর হুসেন এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন,এটা ডিসি অফিসের অনুমতি আছে,তার পরও আমি ইজারাদারকে তার কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছি। আমি কাগজপত্র না দেখে কোন কিছু বলতে পারছিনা। তারা কাগজ নিয়ে আসলে আমি এর ব্যাবস্থা নিব। ইজারাদার মো.মতিন সরকার এর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
উক্ত মানববন্ধনে উপস্থিতি ছিলেন, মজিদ মেম্বার, ছিদ্দিকুর রহমান মেম্বার, আলমগির হুসেন,যুবলীগ নেতা সামছুল হক খোকা, মেনু মিয়া, কবির হুসেন,আঃ আওয়াল,জাহাঙ্গীর আলম ও মিঃ রফিক মাষ্টার প্রমুখ।