কবে নিভবে ঘৌতা নামের হাবিয়া দোজখের আগুন?
‘মৃত্যু উপত্যকা’, ‘দুনিয়ার নরক’ –এরকম বহু বিশেষণে অভিহিত হচ্ছে সিরিয়ার ঘৌতা এলাকা। বোমা-আগুন-বারুদ-গুলিই হয়ে উঠছে এখানকার ৪/৫ লাখ মানুষের নিত্যদিনের ললাটলিখন। বোমায় পোড়া, আগুনে পোড়া মানুষ, রক্তের বন্যা, ধ্বংসস্তূপ, জঙ্গি আর বোমারু বিমানের পিলে চমকানো আওয়াজের মধ্যে এই নরকের সীমানা কেবল বেড়েই চলেছে প্রতি পলে।
‘য পলায়তি স জীবতি’—যে পালায় সে বাঁচে। কিন্তু কী করে পালাবে? কোথায় পালাবে? কড়াই থেকে আগুনে, বাঘের মুখ থেকে হায়েনার গ্রাসে?
পালাবার পথ নেই কোনো। রুশ বাহিনী, সিরীয় বাহিনী, ইরানি মিলিশিয়া আর হিজবুল্লাহ চারদিক থেকে ঘিরে আছে দামেস্কের অতি কাছের এই ছিটমহলটিকে। কেননা তাদের ভাষায়, আলেপ্পোর পতনের পর এটাই আসাদবিরোধী আইসিস আর আল কায়েদা জঙ্গিদের সর্বশেষ ঘাঁটি। তাই কোনো ছাড় নেই। ঘৌতার গলায় তাই পুতিন-আসাদের ফাঁস আরও শক্ত হচ্ছে।
তাদের লক্ষ্যবস্তু হলো ঘাপটি মেরে থাকা আইসিস, আল কায়েদা ও আল নুসরা বাহিনী ‘খুনে দজ্জালরা’। কিন্তু শিশুরা ও নারীরা, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের অপরাধটা কি? তাদেরকেও শত্রুশিবিরের লোক গণ্য করে চলছে নির্বিচার হামলা। নাকি আসাদ-পুতিনের দৃষ্টিতে এদের মৃত্যু ‘কো-লেটারাল ডেথ’?
গত ৫ বছর ধরে চলছে এই হনন-উৎসব। বিদ্রোহীরাও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে। আর তাতে করে সাধারণ মানুষ আরো বেশি বিপন্ন। কে বিদ্রোহী আর কে নিরীহ মানুষ আলাদা করার উপায় আর নেই। অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে গত ৯ দিন আগে সিরীয় ও রুশ বিমানের অবিরাম হামলা শুরুর পর। এই কয়দিনে তা এক ঘণ্টার জন্যও থামেনি। এমনকি জাতিসংঘের সর্বসম্মত অস্ত্রবিরতি নামের প্রহসনের পরও।
ঘৌতায় বিমান ও রকেট হামলায় এ পর্যন্ত ঝরেছে প্রায় ৬০০ মানুষের প্রাণ। প্রকৃত সংখ্যা হয়তো এর দেড়-দুইগুণ। আহত ও পঙ্গু হয়েছে ৮ থেকে ১০ হাজারের মতো। এই হতাহতদের একটা বড় অংশ নারী-শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, পঙ্গু, অন্ধ নিরীহ মানুষ। পুরো ঘৌতা ছিটমহলই এখন বিমান, কামান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এক বাছবিচারহীন লক্ষ্যবস্তু।