বিএনপি রাজনীতির বিষ বৃক্ষ : তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিএনপিকে রাজনীতির বিষ বৃক্ষ উল্লেখ করে বলেছেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের স্বার্থে এ বিষ বৃক্ষকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে।
গত ৯ জানুয়ারি চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন তা সমর্থন করেন।
গত ৭ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম ও বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে এ ভাষণ দেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ ২৯তম দিনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সরকারি দলের সাইমুম সরওয়ার কমল, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, এম এ মালেক, মো. আব্দুল মতিন, মো. মকবুল হোসেন, বজলুল হক হারুন, হোসনে আরা বেগম ও জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধা আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি রাজনীতির বিষবৃক্ষ। জামায়াত-জঙ্গি হচ্ছে সেই বিষ বৃক্ষের ডালপালা। বিএনপি এমন একটি দল, যা জঙ্গি উৎপাদন ও পুনঃউৎপাদন করে। একাত্তর থেকে দেশে যত হত্যা-খুন হয়েছে তার প্রত্যেকটি করেছে বিএনপি। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে ওই বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে দিবেন, না ডালপালা কেটে গাছটাকে টিকিয়ে রাখবেন। বিষবৃক্ষ দিয়ে গণতন্ত্রের বাগান সাজানো যায় না। বিএনপি নামক বিষবৃক্ষ দিয়ে গণতন্ত্র চলতে পারে না। কাউকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হচ্ছে না। কাউকে জোর করে সাজাও দেয়া হয়নি। বিএনপি বিগত ৯ বছরে ইচ্ছা মতো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচনের দরজা অপরাধী ছাড়া সবার জন্য উন্মুক্ত।
হাসানুল হক ইনু বলেন, একাত্তরে যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তারাই আমাদের বিরোধিতা করছে। এজন্য মানুষ শঙ্কিত যে, আবার দেশে বোমা সন্ত্রাস হবে কি না, একুশ আগস্টের মতো গ্রেনেড হামলা আবারো হবে কি না, আবোরো দেশে আগুন সন্ত্রাস হবে কি না এ নিয়ে দেশের মানুষ শঙ্কিত। কারণ খালেদা জিয়া মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও জঙ্গিবাদ থেকে সরে আসার শপথ করেনি, অতীতের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেনি।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে দরকষাকষি হতে পারে না, নির্বাচন দরকষাকষির বিষয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দেয়। কিন্তু এই অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের নামে হত্যা-খুনের আসামী, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গি, সন্ত্রাসী নেতানেত্রী বা ব্যক্তিকে হালাল করে না। আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যদি গণতন্ত্র চান, তাহলে রাজনীতির বিষবৃক্ষ বিএনপিকে বর্জন করতে হবে। রাজাকার, জঙ্গি, জামায়াতকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের পথে রাখতে হলে, কোন অস্বাভাবিক সরকার দেখতে না চাইলে কোন দরকষাকষির সুযোগ না দিয়ে, অন্তর্ভুক্তির নামে অপরাধীদের ছাড় না দিয়ে চলমান জঙ্গি দমনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে এবং দুর্নীতির বিচার অব্যাহত রাখতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন করতে হবে। উন্নয়ন, শান্তি ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং রাজনীতির বিষবৃক্ষ বিএনপিকে ক্ষমতা ও রাজনীতির বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে সেই ঐক্যকে ধারণ করতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী বর্তমান সরকার আমলের উন্নয়ন-অগ্রগতির বিবরণ তুলে ধরে বলেন, উন্নয়ন দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনকে ছুঁয়ে গেছে। দেশে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। একটি বাড়ি একটি খামার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। সকল ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা, মেট্রোরেল এখন দৃশ্যমান, সোনাদিয়া ও পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের পরম মমতা ও মানবিকতায় আশ্রয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও একটি চক্র সমালোচনা করছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, সংবিধানের প্রতি আনুগত্য থেকে প্রধানমন্ত্রী সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছেন বলেই এখন দেশের প্রবৃদ্ধি ৭.২৮ এ পৌঁছেছে। সরকার উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। সরকার গঠন করে প্রথম সংসদের প্রথম অধিবেশনেই তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে। বেসরকারি খাতে টেলিভিশন লাইসেন্স প্রদানসহ এফএম রেডিও, কমিউনিটি রেডিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পত্রিকা-টেলিভিশন স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করছে। শেখ হাসিনার সরকারের ভালো গুণ হচ্ছে যে কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হলে পদক্ষেপ নেয়া হয়। অনেককেই দুদকের মামলায় জেল খাটতে হয়েছে।
সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সময়োপযোগী, বাস্তবমুখী ভাষণ দিয়েছেন। তিনি তাঁর ভাষণে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা তুলে ধরেছেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার মাত্র ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। বেগম খালেদা জিয়ার আমলে ২০০৩ সালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন পেতো না। অথচ শেখ হাসিনার আমলে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন শতভাগের ওপর বাড়ানো হয়েছে। দেশের কোথাও বিদ্যুতের লোডশেডিং নেই। খালেদা জিয়ার আমলে আদমজী জুট মিলসহ একের পর এক দেশের পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অথচ শেখ হাসিনার সময়ে একটি পাট কলও বন্ধ হয়নি।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ দিয়েছেন, আর তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এখন মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে হলে তাকেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে।