চীনে কুকুরের জন্য এতো আয়োজন কেন?
চীনের প্রথা অনুযায়ী প্রতিটি নতুন বছরকে একেকটি প্রাণির নামে নামকরণ করা হয়। শুক্রবার শুরু হওয়া নতুন বছরটি তেমনি নামকরণ করা হয়েছে কুকুরের নামে। জন্তু জানোয়ারের প্রতি সদয় দেশ নয় বলে চীনের বদনাম রয়েছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাণির যত্ন আত্তিতে দেশটির নাগরিকরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করছেন। যেমন দেশটিতে এখন কুকুরের জন্য পাঁচ তারকা হোটেলও রয়েছে, যেখানে কুকুরের জন্য সিনেমা হল, সুইমিং পুল এবং থাকার জন্য বিলাসবহুল কামরাও রয়েছে।
দেখা গেছে, কুকুরের জন্য নির্মিত চীনের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের মিনি থিয়েটারে দেখানো হচ্ছে কুকুর নিয়ে নির্মিত একটি সিনেমা। দর্শক অল্প কয়েকটি কুকুর এবং তাদের মালিকরা।
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া নতুন বছরের নামকরণ করা হয়েছে কুকুরের নামে। বলা হচ্ছে নতুন বছরে দেশটির চারপেয়ে এই প্রাণির যত্ন করাই চীনের লক্ষ্য।
তিয়ান উ নামে একজন এসেছিলেন সেখানে নিজের প্রিয় কুকুর অস্কারকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘এখানে কুকুর এবং তাদের মালিকরা একসঙ্গে সিনেমা দেখতে পারে এবং পরস্পরের সঙ্গ উপভোগ করতে পারছে। পুরো বিষয়টি খুবই সুন্দর। আর এটা আমার কাছে জরুরি বলেই মনে হয়”।
মুভি থিয়েটারে কুকুরের দৃষ্টিশক্তি অনুযায়ী দূরত্বে সিনেমার পর্দা বসানো হয়েছে, আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে এমনভাবে যেন তাদের চোখের ক্ষতি না হয়। এ ছাড়া বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে কুকুরের জন্য আরামদায়কভাবে, অর্থাৎ গদি বানানো হয়েছে একটু চওড়াভাবে যাতে একজন মালিক কুকুরটিকে পাশের আসনে বসিয়ে সিনেমা দেখতে পারেন।
এসব শুনতে যত মনোহর, কিন্তু এই হোটেলে আসা কুকুরের দেখভাল করার ব্যাপারটি তত সহজসাধ্য নয়। মানে এই অভিজাত কুকুরদের দেখাশোনার পেছনে এর মালিকদের বহু অর্থ ব্যয় করতে হয়। এই হোটেলটি চীনে পোষা প্রাণির বিলাসবহুল জীবনযাপনের পেছনে দেশটির নাগরিকদের অর্থব্যয়ের একটি নমুনামাত্র।
চীনাদের এতো কুকুরপ্রীতির কারণ কি?
চীনের নাগরিক জীবনে গত কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশটির এক সন্তান নীতির কারণে পরিবারগুলো ক্রমে ছোট হয়ে গেছে, সন্তান বড় হয়ে যাওয়ার পর অনেকে নিঃসঙ্গ হয়ে গেছেন। অনেকের জন্যই কুকুর এখন একটি অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঝ্যাং লেই নামের একজনের কুকুরের নাম জাম্পিং বিনকে নিয়ে। তিনি ব্যাখ্যা করছেন, কেন কুকুরের জন্য খরচ করতে পিছপা হননা তিনি। ‘এই কুকুরটি আমার ভীষণ প্রিয়। সে আমার আত্মার রোজকার ভালোমন্দের একটি বিরাট অংশ হয়ে উঠেছে। ও একেবারে আমার সন্তানের মতো। ওকে আনন্দে রাখার জন্য, ওর জন্য পয়সা খরচ করতে আমার ভালোই লাগে। এ জন্য শুধু এখানে না, আমি ওকে নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় যাই, ঘুরে বেড়াই”।
কত কুকুর আছে চীনে ? কোন হিসেব আছে কী?
চীনে পাঁচ কোটির বেশি পোষা কুকুর আছে। দেশটির প্রাণি কল্যাণ সংস্থাগুলো বলছে, জন্তু জানোয়ারের কল্যাণে চীনের রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাণির যত্নআত্তিতে চীনাদের খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে পশুপালন বিষয়ক অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পোষা প্রাণির যত্নে চীন বছরে আড়াই শো কোটি মার্কিন ডলারের বেশি খরচ করছে।
বলা হচ্ছে, ২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বে এক্ষেত্রে চীন হবে সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয়কারী দেশ।
ললিপপ নামে কুকুরের মালিক বলছিলেন নিজের আয়ের একটা বড় অংশ তিনি নিজের পোষাপ্রাণির পেছনে ব্যয় করেন তিনি বলেন, ‘আমার কর্মক্ষেত্রে আমাকে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হয়, রোজ প্রচুর সময় দিতে হয়। এর ফলে আমার কুকুরটি বাড়িতে একলা সময় কাটায়, আর আমার জন্য অপেক্ষা করে। এটা প্রাণিটির প্রতি রীতিমত নির্মম আচরণ। বিষয়টি নিয়ে আমার মধ্যে ভীষণ অপরাধবোধ কাজ করে। ফলে অবসর সময় আমি নিয়ম করে ওকে বাইরে কোথাও নিয়ে যাই।’
এত উদ্দীপনা কেন কুকুর নিয়ে?
চীনের নতুন বছর কুকুরের নামে নামকরণ হওয়ায়, পোষা প্রাণির যত্নে গড়ে ওঠা খাতে তা নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। যেকোন শপিং মলে এখন পোষা প্রাণির কর্নারে পাওয়া যাবে কুকুরের ব্যবহার্য অভিনব সব জিনিসপত্র। কুকুরের বসার বা শোয়ার আসন রয়েছে সেখানে।
এমনকি কুকুরের বসার জন্য অভিজাত নকশার সোফাও দেদার বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে শোওয়ার বা বসার বাহারি কুশন, বিশেষ রুম ফ্রেশনার, গায়ে উকুন হওয়া ঠেকানোর শ্যাম্পু, সুগন্ধি মোমবাতি, কুকুরের ঘরের জন্য বানানো বিশেষ আলোর মত পণ্য।জনপ্রিয় হচ্ছে কুকুরের যত্নে গড়ে ওঠা পার্লার।
সুতরাং নতুন বছরটি দেশটির ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো বার্তা নিয়ে এসেছে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।