বিজয়নগরে শিক্ষক সংকটে ভুগছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়
বিশেষ প্রতিনিধি, বিজযনগর থেকে ফিরে : ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলায় ১০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৩টি প্রধান শিক্ষক নেই। এসব বিদ্যালয়গুলো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের তত্ত্ববধানে চলছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের অভাবে বিদ্যালয়গুলোর অনেক উন্নয়নমূলক কাজ থেমে রয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এক হাজার ৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে বিজয়নগর উপজেলায় ১০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৩টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ ও ৭০টিতে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, জেলার দূরবর্তী উপজেলায় হওয়ায় শিক্ষকরা উপজেলায় আসতে তেমন আগ্রহী হন না। শূন্য পদগুলো পূরণের সাথে সাথে শিক্ষকরা জেলায় বা বাড়ির কাছের পছন্দের বিদ্যালয়ে বদলি হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেন। উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর-আওলিয়া বাজার সড়কের পাশে অবস্থিত ভিটিদাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি ইউনিয়নের ব্যস্ততম সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত ট্রাক, সিএনটি চালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরণের যান চলাচল করে। তার উপর বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নেই। পূর্ব-পশ্চিমে একটি আংশিক সীমানা প্রাচীর রয়েছে। বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুরা খেলা করতে করতে প্রায় সড়কের মধ্যে চলে যায়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩৫; এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ১১০ ও ছাত্র ১২৫। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পদ আছে সাতটি। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকের তিনটি পদ শূণ্য রয়েছে। পাঁচটি শ্রেণিকক্ষে তিনজন শিক্ষক পাঠদানের দায়িত্ব পালন করে।
ভিটিদাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুল ইসলাম হাফিজ বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান কার্যক্রম ঠিকমত পরিচালনা করতে পারছি না। এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ফলাফলের উপরও পড়ছে। অন্যান্য কার্যক্রম করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২০১৭ সালের পুরোটা বছর স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ তিনজন ছিলাম। গত বছরের ২৩ অক্টোবর একজন শিক্ষক যোগদান করেছে। পাশাপাশি অবকাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে। উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে সহদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারিতে জাতীয়করণ করা হয়। সে সময় থেকেই এখনও বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূণ্য রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজনের পদ থাকলেও তিনজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। এরমধ্যে প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক স্বপন কুমার দেব প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সহদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বপন কুমার দেব বলেন, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭৫। গত বছর সমাপনী পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের পাশের হার শতভাগ হলেও জিপিএ এর অবস্থা বেশি ভালো নয়। মাঝে মাঝে সমস্যা হয়। বিদ্যালয়ে মনোযোগ দেব না কি দাপ্তরিক কাজে। পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক থাকলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর থেকে যেমন চাপ কমবে তেমনিভাবে ফলাফল ও পাঠদান আরো ভালো হবে। দাড়িয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৩৬৪; এর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮০ ও ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪৮। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের সাতটি পদ রয়েছে। দুটিতে সহকারী শিক্ষকের পদ শূণ্য। পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে একজন সহাকরী শিক্ষক ডেপুটেশনে উপজেলার মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে।
দাড়িয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবিক কারণে একজন সহকারী শিক্ষক ডেপুটেশনে অন্যত্র চলে গেছে। চারজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদানসহ বিদ্যালয়ের যাবতীয় কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, দাপ্তরিক কাজসহ শ্রেণি পাঠদানেও আমাকে দিনভর ব্যস্ত থাকতে হয়। শিক্ষক স্বল্পতার জন্য চাপের মধ্যেই অন্য শিক্ষকদের বিরামহীন ভাবে কাজ করতে হচ্ছে।
উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের সাটিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৫০। প্রধান শিক্ষকসহ সাতটি পদ থাকলেও তিনজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকের তিনটি ও প্রাক প্রাথমিক একটি পদ শূণ্য রয়েছে। ছাত্রছাত্রী বেশি হওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে।
বিজয়নগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাজহারুল হুদা বলেন, আমরা শূন্য পদের তালিকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নিয়োগে শূন্য পদগুলো পূরণ হবে যাবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বনিক বলেন, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শূন্য পদগুলো পূরণ হতে কিছুটা সময় লাগবে।