কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় জিয়াউর রহমানের ছবি!
---
নিউজ ডেস্ক : ভারতের কলকাতা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ফেস্টুন, ব্যানারে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি। উত্তর কলকাতার বইপাড়ার কলেজ স্ট্রিট এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বাংলাদেশের সাবেক এ রাষ্ট্রপতির ছবি এভাবেই সাজানো অবস্থায় দেখা গেছে।
তবে কলকাতার রাস্তায় শুধু জিয়াউর রহমানের ছবিই নয়, একই ধরনের ব্যানারে দেখা গেছে জগদীশ চন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, দীনবন্ধু মিত্রের মতো নামি-দামি ব্যক্তিদের ছবিও।
কলকাতার প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হেয়ার স্কুল। ১৮১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ ডেভিড হেয়ার। এই স্কুল থেকেই ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের যাত্রা শুরু হয় বলে মনে করা হয়।
এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। স্কুলের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরজুড়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবেই দেশ-বিদেশের নামি প্রাক্তন ছাত্রদের ছবি তুলে ধরে প্রচারে আনা হয়েছে। আর সেই কারণেই উত্তর কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার একটি বড় অংশে শোভা পাচ্ছে জিয়াউর রহমানের ছবি।
হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার দাস বলেন, শুধু জিয়াউর রহমানই নন, এই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, দীনবন্ধু মিত্র, বি সি মিত্র, অতুল চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পি সি আচার্য, শচীনদাস মতিলাল, তুষার কান্তি ঘোষ, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু বড়ুয়া ছাড়াও বহু খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গের ছবি টানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যারা এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতির শীর্ষে উঠেছেন। সেই সমস্ত দেশ ও বিদেশের কৃতী সন্তানদের তুলে ধরে স্কুলের ২০০ বছর পূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করতে চাই আমরা। স্কুলের অভ্যন্তরে ২০০ বছর পূর্তির আয়োজন করতে গঠন করা হয়েছে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও। সেখানে দিন-রাত গবেষণা চলছে কী করে সমাপ্তি অনুষ্ঠানটি আরও বর্ণাঢ্য করা সম্ভব হয়।
অসীম কুমার দে নামের হেয়ার স্কুলের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের ২০০ বছরপূর্তির সূচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডেসহ গুণীজনেরা। সমাপনী অনুষ্ঠান নিয়েও বড় পরিকল্পনা রয়েছে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের।
অসীম আরও জানান, এরই মধ্যে একটি ওয়েবসাইট খুলে অনুষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশনও শুরু হয়েছে। এই বিদ্যালয়ের ছাত্রদের অনেকেই জানে না কতজন মহান ব্যক্তি স্কুলটিতে লেখাপড়া করেছেন। তাদের জানানোর জন্যই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের নাম ও ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
২০০ বছর পূর্তির জন্য এক বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের কর্মসূচি নিয়েছে হেয়ার স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, যা শুরু হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে। ওই দিন থেকে স্কুলের কৃতী ও গুণী শিক্ষার্থীদের ছবি কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় টানানো হয়েছে। ২০০ বছর পূর্তির সমাপনী অনুষ্ঠান হবে আগামী বছরের ৩১ আগস্টের মধ্যে। এখনো চূড়ান্ত তারিখ ঠিক হয়নি তবে ৩১ আগস্টই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে।
কলকাতার এই হেয়ার স্কুলেই প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগবাড়ীতে তার জন্ম হলেও শৈশবের বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করেন কলকাতা শহরে। কলকাতা শহরে এক সরকারি দপ্তরে রসায়নবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতির বাবা মনসুর রহমান। ভারত ভাগের পর মনসুর রহমান করাচি শহরে চলে যান। তখন কলকাতার হেয়ার স্কুল ত্যাগ করে জিয়াও চলে যান করাচিতে।
হেয়ার স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সুমিত সাহা, সুজয় কর্মকারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলের ২০০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানের সময় তারা এই স্কুলের ছাত্র হিসেবে রয়েছে সেটা অনেক ভাগ্যের বিষয়।
হেয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমাপনী অনুষ্ঠানে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাক্তন ছাত্র এবং তাদের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানাবে। সে কারণে যোগাযোগ করা হবে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের সঙ্গেও। সূত্র : জাগো বাংলা